জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে হার, ডিপিএলে আম্পায়ারের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে তাওহিদ হৃদয়ের দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা, সেটা কমানো-বাড়ানো এবং আবার এক বছরের জন্য পিছিয়ে দেওয়া, বিসিবির এফডিআরের একটি অংশ অন্য ব্যাংকে হস্তান্তরে অভিযোগ- কয়েকদিন ধরেই টালমাটাল দেশের ক্রিকেটাঙ্গন। এমন উত্তপ্ত অবস্থাতেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ তুলেছেন আলজাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদক জুলকারনাইন সায়ের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন তিনি। আর বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বলেছেন, অভিযগ না জেনে তিনি মন্তব্য করবেন না।
অভিযোগ অনুসারে, জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবর্ষণ ও হামলার মামলায় অভিযুক্ত এস এম রানাকে বোর্ডের অফিসিয়াল পরিচিয়ে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে রাখে বিসিবি। হোটেলের সমস্ত খরচ বহন করার পাশাপাশি চট্টগ্রাম-ঢাকা যাতায়াতের বিমান টিকিটও দিয়েছে বলে অভিযোগ দেশীয় ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিরুদ্ধে।
ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়েছে এস এম রানা নারায়ণগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তাঁর শ্যালক তানভীর রহমান টিটুর ঘনিষ্ঠ সহচর। গত আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর থানা ও ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা হয়েছিল রানার বিরুদ্ধে (নারায়ণগঞ্জ থানায় মামলা নং- ১২/২৭-০৮-২৪ ও ফতুল্লায় মামলা নং ১৮ -২২-আগস্ট -২০২৪)।
এমন অবস্থায় গত জানুয়ারিতে নতুন করে আলোচনায় আসেন রানা। সংবাদমাধ্যম দৈনিক জনকণ্ঠে গত ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বশেষ বিপিএল চলাকালে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে দেখা গেছে রানাকে। এমনকি মিরপুরের প্রেসিডেন্ট বক্সে বসে রানা খেলা দেখেছেন বলেও জানানো হয় সে প্রতিবেদনে। সে সময় বিতর্ক হলেও তা বেশিদূর গড়ায়নি।
পরবর্তীতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দুবাই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রানাকে আটক করে পুলিশ। তাকে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই রানাকেই বিসিবি আতিথেয়তা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পোস্টে জুলকারনাইন সায়ের কয়েকটি ছবি যুক্ত করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু-এর বিলের কপিতে বিসিবি অফিসিয়াল হিসেবে দেখানো হয়েছে রানাকে।
বিলের কপি অনুসারে, বিসিবিকে করা সে বিলে বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ, বোর্ড পরিচালক আকরাম খান, নাজমুল আবেদীন ফাহিম, হান্নান সরকারদের পাশাপাশি এস এম রানার হোটেল বিলও আছে। একইসঙ্গে বিসিবিকে করা বিমানের টিকিটের বিলেও বোর্ডের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে এস এম রানার নাম আছে।
এ অভিযোগের ব্যাপারে বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন, এখনো ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া সংবাদটি দেখেননি। দেখে পরে বিস্তারিত জানাবেন তিনি।
ইন্ডিপেনডেন্ট ডিজিটালকে ফারুক আহমেদ বলেছেন, ‘আমি দেখিনি নিউজটা। দেখে আপনার সঙ্গে কথা বলব। আপনি রাতে (ফোন) করেন, নয়তো আগামীকাল ফোন করেন।’
কোন প্রসঙ্গে অভিযোগ, তা জানাতে চাইলে বিসিবি সভাপতি বলেছেন, ‘না না, আপনি বললে তো হবে না। আমার তো দেখতে হবে জিনিসটা। আপনার মুখের কথায় তো আমি বলতে পারব না। (মুখের কথা শুনে) কমেন্ট করতে পারব?’
নতুন এ অভিযোগের প্রসঙ্গে বিসিবির অর্থ স্থানান্তরের অভিযোগের বিষয়টি টেনে এনে ফারুক আহমেদ বলেছেন, ‘অভিযোগ তো অনেক তোলে। গতকালও তো অভিযোগ তুলেছে একটা- “১২০ কোটি টাকা আমি কাউকে না জানিয়ে অন্য ব্যাংকে ট্রান্সফার করেছি”। আবার কেউ কেউ বেশি লিখেছে, “আমি সরিয়েছি”। এখন আপনি রাইট-আপটা দেখেন, আমি রাইট-আপটা পাঠিয়ে দিচ্ছি। সাইনিং অথরিটি বোর্ডের ফাহিম সিনহা এবং মাহবুব আনামের- বোর্ডের কি কেউ জানে না? এখন অভিযোগ যদি আপনি বানিয়ে করেন, এটার তো উত্তর আমি দিতে পারব না।’
প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে আবারও রেডিসন ব্লু-য়ের বিলের কপি সম্পর্কে জানতে চাইলে ফারুক আহমেদ বলেছেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে, আপনি যেটাই বলেন, আমি না দেখে কোনো মন্তব্য করতে পারব না। দ্বিতীয়ত বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে তো অনেক অভিযোগ হয়, যেগুলো ভিত্তি ছাড়া।’