হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচে আগে ফিল্ডিংয়ে নেমে বেশি সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে তিন স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজালেও আজ টেস্টের প্রথম দিনে প্রথম দুই সেশনে সফরকারীদের খুব বেশি পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজ-তাইজুল ইসলামরা।
চা বিরতি পর্যন্ত দুই সেশন ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই যেন কাটিয়েছে বাংলাদেশ। সে সময়ে ক্রিকেটটাও হয়েছে ঘুমপাড়ানি। দুই সেশনে জিম্বাবুয়ে তুলেছে ১৬১ রান, রানরেট ছিল ৩-এর নিচে। আর বাংলাদেশের প্রাপ্তি ছিল শুধু জিম্বাবুয়ের টপ অর্ডারের দুজনের উইকেট। তবে চা খেয়ে ফেরার পর যেন ঘুম তাড়িয়ে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের বোলাররা।
প্রথম সেশনেই দুই উইকেটের পর দ্বিতীয় সেশনে উইকেটশূন্য বাংলাদেশকে চা বিরতির পর তৃতীয় সেশনে ম্যাচে ফেরান তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসান। তাইজুল তো দিন শেষের আগেই টেস্টে ১৬তম বারের মতো ইনিংসে পাঁচ উইকেটের দেখা পেয়েছেন। এই টেস্টে দলে ফেরা নাঈম নিয়েছেন দুই উইকেট। এ দুই স্পিনারের স্পিন সামলাতে ব্যর্থ জিম্বাবুয়ে দিনের খেলা শেষ করেছে ৯ উইকেটে ২২৭ রান নিয়ে। জিম্বাবুয়ের হয়ে ফিফটি পেয়েছেন নিক ওয়েলচ ও শন উইলিয়ামস।
চা বিরতির পর বাংলাদেশ যে ঘুম ঘুম ভাব কাটিয়ে দাপট নিয়ে ফিরতে পেরেছে, তার পেছনে অবশ্য দুটি ঘটনারও অবদান আছে। এক, ওয়েলচের অসুস্থতা, চা বিরতির তিন বল পরই হঠাৎ রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে উঠে যান সে সময়ে ৫৪ রানে ব্যাট করতে থাকা ওয়েলচ। দুই, হঠাৎ অন্ধকার নেমে আসা। প্রথম দুই সেশনে রোদের তেজ ছিল, জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়েও তেজ ছিল সে পর্যন্ত। চা বিরতির পর আকাশে মেঘ জমে, বৃষ্টির শঙ্কাই জাগে। কিছুটা আলো কমে আসার ওই সময়ে টপাটপ উইকেট তুলে নিয়েছেন তাইজুল-নাঈমরা।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় জিম্বাবুয়ে। দুদলই সিলেট টেস্ট থেকে তাদের একাদশে পরিবর্তন এনেছে। বাংলাদেশের টেস্ট দলে লম্বা সময় পর ফিরেছেন এনামুল হক বিজয় ও স্পিনার নাঈম হাসান, প্রথম টেস্টের দল থেকে বাদ পড়েন জয় ও খালেদ। আর পিএসএল খেলতে যাওয়া নাহিদ রানার বদলে টেস্টে অভিষেক হয়েছে পেসার তানজিম হাসান সাকিবের।
তিন স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজানো বাংলাদেশ প্রথম সেশন থেকে উইকেট থেকে বাড়তি টার্ন পাচ্ছিল। যা দেখে ইনিংসের অষ্টম ওভারেই মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। নিজের দ্বিতীয় বলেই উইকেটের দেখা পেয়ে যেতে পারতেন মিরাজ! কিন্তু ওপেনার বেন কারেনের সহজ ক্যাচ স্লিপে ফেলে দেন সাদমান ইসলাম।
মিরাজ উইকেটের দেখা না পেলেও অভিষিক্ত তানজিম সাকিব ইনিংসের ১১তম ওভারে ওপেনার ব্রায়ান বেনেটকে ড্রেসিংরুমের পথ দেখান। ব্যক্তিগত ২১ রানে উইকেটের পেছনে জাকের আলীর কাছে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বেনেট। সতীর্থ বেনেট চলে যাওয়ার পর ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ১১ রানে জীবন পাওয়া বেন কারেন। ইনিংসের ১৯তম ওভারে দলীয় ৭২ রানে তাইজুল ইসলামের বলে বোল্ড হন কারেন (২১ রান)।
প্রথম সেশনে দুই উইকেট হারালেও নিক ওয়েলচ ও শন উইলিয়ামসের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় জিম্বাবুয়ে। শুধু ঘুরেই দাঁড়ায়নি এ জুটি, বাংলাদেশের বোলারদের রীতিমত খাটিয়ে মেরেছেন ওয়েলচ-উইলিয়ামস। চট্টগ্রামের তীব্র রোদে মিরাজ-তাইজুলদের খাটিয়ে নিজেদের ফিফটির দেখাও পেয়ে যান এ দুজন। দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেট না হারিয়ে দলীয় দেড় শ রান পার করে জিম্বাবুয়ে।
তবে লম্বা সময় ধরে উইকেট নিতে ব্যর্থ বাংলাদেশের ভাগ্য খুলে যায় তৃতীয় সেশনের শুরুতে। উইকেট নিতে না পারলেও জিম্বাবুয়ের নিক ওয়েলচ থেকে মুক্তি পায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। নেপথ্যে এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি। তীব্র গরমে ১৩১ বল খেলে ৫৪ রান করা ওয়েলচ ইনজুরি নিয়ে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন।
৩৮.১ ওভার খেলে ওয়েলচ-উইলিয়ামস জুটি ৯০ রান যোগ করে। কে জানত, এ জুটিতে ভাঙতেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে! উইকেট নিতে ব্যর্থ বাংলাদেশ ক্রিজে নতুন ব্যাটসম্যান পেয়ে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসে।
ক্রিজে নেমে মিরাজ-নাঈমদের স্পিন ঠিকভাবে সামলাতে পারেননি জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন। ৩১ বল খেলে মাত্র ৫ রান করে নাঈম হাসানের স্পিনে কাট শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
তৃতীয় উইকেটের দেখা পাওয়া বাংলাদেশ এক ওভার বাদে ফের সফলতার মুখ দেখে। ক্রিজে লম্বা সময় ধরে টিকে থাকা শন উইলিয়ামসকে ড্রেসিংরুমের পথ দেখান স্পিনার নাঈম। ১৬৬ বলে ৬৭ রান করা উইলিয়ামস সুইপ শট খেলতে গিয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে বসেন তানজিম সাকিবের হাতে। দলীয় ১৭৭ রানে ২ উইকেট থেকে ১৭৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
পঞ্চম উইকেটে ওয়েসলি মাধেভেরে ও তাফাদজোয়া সিগার ব্যাটে দলীয় দুই শ রান পার করে সফরকারীরা। কিন্তু তাইজুলের স্পিনে এ জুটি আর বেশি সময় টিকতে পারেনি। ব্যক্তিগত ১৫ রানে মাধেভেরে তাইজুলের স্পিনে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন।
শেষ বিকেলে নতুন বল হাতে নিয়েও তাইজুল উইকেটের দেখা পেয়ে যান। ৮১তম ওভারের তৃতীয় বলে তাইজুলকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে বিশাল এক ছয় মারেন ওয়েলিংটন মাসাকাজা, কিন্তু পরের বলেই মাসাকাজাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে প্রতিশোধটা নিয়ে নেন তাইজুল। শুধু তা-ই নয়, এর পরের বলে বোল্ড করেন রিচার্ড এনগারাভাকেও। একই ওভারে জোড়া আঘাতে মূহুর্তেই ২০৬/৫ থেকে ২০৬/৭ হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
৮৫তম ওভারে ভিনসেন্ট মাসাকেসা হয়ে গেলেন রানআউট, জিম্বাবুয়ের রান তখন ২১৬। চট্টগ্রামে তখন উত্তেজনা, ৯০ ওভারের মধ্যে কি জিম্বাবুয়েকে অলআউট করে দিতে পারবে বাংলাদেশ?
উত্তেজনা আরও বাড়ল, যখন রিটায়ার্ড হার্ট ওয়েলচ দলের এই অবস্থায় আবার নামতে বাধ্য হলেন। কিন্তু নামাই সার! নামার পর প্রথম বল ডট দিলেন ওয়েলচ, পরের বলটাকে হাঁটু গেড়ে বসে বঙ্গোপসাগরে আছড়ে ফেলতে চাইলেন। কিন্তু উপড়ে পড়ল তাঁর অফ স্টাম্প! ১৩৩ বলে ৫৪ রানে শেষ ওয়েলচের ইনিংস, জিম্বাবুয়ের ৯ উইকেট গেল ২১৭ রানে। বাংলাদেশ তখন দিনে বাকি ৫ ওভারে জিম্বাবুয়েকে অলআউট করে ফেলার আশা দেখছে।
কিন্তু তা আর শেষ পর্যন্ত হয়নি। তাফাদজায়া সিগার সঙ্গে মিলে ব্লেসিং মুজারাবানি দিনটা পার করিয়ে দিলেন জিম্বাবুয়েকে। সিগা ৫৯ বলে ১৮ রানে দিন শেষে অপরাজিত, মুজারাবানি ২ রান করলেও খেলে ফেলেছেন ১৫টি বল।