২০২২ সালের ১৪ মে ক্রিকেট দুনিয়া স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেদিন মাত্র ৪৬ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নেন অস্ট্রেলিয়ান সাবেক অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। কুইন্সল্যান্ডে গভীর রাতে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান দুটি বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার।
তিন বছর পর সাইমন্ডসের মা বারবারা সন্তানের মৃত্যু নিয়ে মুখ খুলেছেন। সেদিন রাত ২টায় ফোন বেজেছিল। কে কী কারণে ফোন করেছেন তা না জানলেও বুঝতে পেরেছিলেন ভয়ংকর কোনো খবরই হবে।
তাঁর ধারণাই সঠিক হয়েছিল। ফোন ধরতেই তাঁকে জানানো হয়, উত্তর কুইন্সল্যান্ডের টাউনসভিলের ৫০ কিলোমিটার দূরে হার্ভে রেঞ্জে রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ে সাইমন্ডসের গাড়ি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। নিউজ কর্পের সঙ্গে কথোপকথনে বারবারা বলেছেন, ‘জীবনের দুর্ভাগ্যজনক দিক হলো এমন ভয়ংকর সব ঘটনা ঘটে। এটা জঘন্য। এমন কিছু কারও সঙ্গে না হোক। আমাদের আগেও অন্য অনেক পরিবার এর শিকার হয়েছে, কিন্তু এই সত্যিও আমাদের দুঃখ কমাতে পারে না। আমরা তবু ভাগ্যবান যে সে ছাপ রেখে গেছে।’
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুটি বিশ্বকাপ জেতার পথে ১৯৮টি ওয়ানডে খেলেছেন সমর্থকদের প্রিয় রয়। ২৬টি টেস্ট ও ১৪টি টি-টোয়েন্টিও খেলেছেন। ২০০৭ অ্যাশেজে অভিষেকেই সেঞ্চুরিটা এখনো মনে আছে অনেকের। মাঠে ও মাঠের বাইরে একজন প্রকৃত অস্ট্রেলিয়ানের মতো আচরণ তাঁকে ভক্তদের প্রিয় করেছিল।
যদিও সাইমন্ডসের জন্ম ইংল্যান্ডে। ১৯৭৫ সালে বার্মিংহামে। তাঁর জন্মগত বাবা-মায়ের পরিচয় কখনোই জানা যায়নি। ধারণা করা হয় একজন ছিলেন আফ্রিকান-ক্যারিবিয়ান, অন্যজন স্ক্যান্ডেনেভিয়ার দেশ সুইডেন বা ডেনমার্কের নাগরিক ছিলেন।
ছয় সপ্তাহ বয়সে তাঁকে দত্তক নেন কেন ও বারবারা সাইমন্ডস। সতীর্থ ব্রেট লির পডকাস্টে এ ব্যাপারে সাইমন্ডস বলেছিলেন, ‘আমার জন্মগত বাবা-মায়ের পরিচয় জানি না, কখনো দেখা হয়নি। ছয় সপ্তাহ বয়সে আমার মা-বাবা (বারবারা ও কেন) ক্লিনিকে গিয়ে আমাকে দত্তক নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। তখন নিয়ম ছিল এক সপ্তাহের জন্য ট্রায়াল দিত সবাই। আমার মনে আছে মা বলতেন, ওই সপ্তাহে আমি শুধু কেঁদেছি আর জ্বালিয়েছি। তাঁরা যখন ক্লিনিকে ফিরলেন, তাঁদের জিজ্ঞেস করা হলো, “কেমন ছিল?” মা বলেছিলেন, “একদম দেবশিশুর মতো। একদম নিখুঁত। আমরা ওকে রাখতে চাই।”’
এরপর কেনেথ ওয়াল্টার সাইমন্ডস ও বারবারার সাইমন্ডসের ছেলে হিসেবে বেড়ে ওঠেন অ্যান্ড্রু। কদিন পরই অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমায় সাইমন্ডস পরিবার। ২৩ বছরে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলে জায়গা পান সাইমন্ডস।