জয়ের জন্য শেষ ৬ ওভারে ৬০ রান দরকার ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের। ঠিক যেন সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টির প্রতিচ্ছবি। দুদিন আগে শারজার ওই ম্যাচে শেষ দিকে মোস্তাফিজুর রহমান-তানজিম হাসান সাকিবদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সমীকরণটা মেলাতে পারেনি আমিরাত। বাংলাদেশের ১৯১ রান তাড়ায় আমিরাত আটকে গিয়েছিল ১৬৪ রানে।
ওই ম্যাচে না পারলেও গতকাল সোমবার সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ঠিকই সমীকরণ মিলিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। এবার লক্ষ্যটা আরও বড় ছিল। কিন্তু আমিরাত জিতেছে ইতিহাস গড়ে। বাংলাদেশের ২০৫ রান পেরিয়ে গেছে ইনিংসের ১ বল আর ২ উইকেট হাতে রেখে। শুধু বাংলাদেশের বিপক্ষেই নয়, টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম জিতল দলটি।
টি-টোয়েন্টিতে এর আগে কখনোই ১৭৯ রানের বেশি তাড়া করে জিততে পারেনি আমিরাত। সে দলটাই এবার জিতল দুই শ-র বেশি তাড়া করে। আমিরাতের নিজেদের রেকর্ড তো বটেই, টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে সহযোগী দেশের রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও এখন এটাই।
তাতে দুই ম্যাচ থেকে মাঝপথে তিন ম্যাচে রূপ নেওয়া সিরিজ এখন ১-১ সমতায়। আগামীকাল বুধবার শারজায় হবে দুদলের সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি।
গতকাল ম্যাচটা আমিরাত জিতলেও শেষদিকে রোমাঞ্চের কমতি ছিল না। বাংলাদেশের দেওয়া ২০৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিল আমিরাতের। ওপেনার মোহাম্মদ জোহাইব আর মোহাম্মদ ওয়াসিম উদ্বোধনী জুটিতে ১০৭ রান এনে দেন দলকে।
ইনিংসের ১১তম ওভারের প্রথম বলে জোহাইবকে (৩৮) ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন তানভীর ইসলাম। অবশ্য দ্বিতীয় উইকেটের জন্য খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে। পরের ওভারেই তিনে নামা রাহুল চোপড়ার উইকেট শিকার করেন শরীফুল।
পরপর দুই উইকেট হারালেও আমিরাতকে পথ হারাতে দেননি ওয়াসিম ও আসিফ খান। তৃতীয় উইকেট জুটিতে মাত্র ২২ বলে ৩৮ রান তোলেন দুজন। ১৪ ওভার শেষে আমিরাতের স্কোরবোর্ডে ২ উইকেটে ১৪৬ রান। হাতে থাকা ৮ উইকেট নিয়ে জয়ের জন্য শেষ ৬ ওভারে দরকার মোটে ৬০!
ম্যাচটা আমিরাত সহজেই জিততে যাচ্ছে, এমনটাই মনে হচ্ছিল। তবে পরের ওভার থেকেই ম্যাচের গতিপথ পাল্টেছে কয়েকদফা।
ইনিংসের ১৫তম ওভারে এসে সেট ব্যাটসম্যান ওয়াসিমকে (৪২ বলে ৯ চার ও ৫ ছক্কায় ৮২ রান) ফেরান শরীফুল। ওই ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়েছেন বাঁহাতি এ পেসার। পরের ওভারে ১২ রান দিলেও আসিফ খানকে ড্রেসিংরুমের পথ ধরান দেশের জার্সিতে প্রথমবার টি-টোয়েন্টিতে খেলতে নামা নাহিদ রানা।
পরের ২ ওভারে আমিরাত তুলেছে ১৬ রান, আর বাংলাদেশ আদায় করেছে ২ উইকেট। তাতে ইনিংসের শেষ ২ ওভারে আমিরাতের জয়ের জন্য সমীকরণ ২৯ রানের। ম্যাচের পাল্লা তখন বাংলাদেশের দিকে হেলে।
১৯ তম ওভারের প্রথম বলেই আরেকটা উইকেট শিকার করে বাংলাদেশের দিকে ভরটা আরেকটু বাড়িয়ে দেন শরীফুল। কিন্তু কে বা জানত, ওই ওভারেই বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচটা কেড়ে নেবে আমিরাত!
ওভারে তৃতীয় ও পঞ্চম বলে যথাক্রমে ৪ ও ৬ হজম করেন শরীফুল। বাংলাদেশি পেসার তালগোল পাকান ওভারের শেষ বলে। ওভার থ্রোতে ৫ রান দিয়ে বসেন। তাতে শেষ ওভারে জয় থেকে মাত্র ১২ রান দূরে ছিল আমিরাত।
তানজিম সাকিব ওভারটা শুরু করেন ওয়াইড দিয়ে। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ধ্রুব পারাশারকে স্ট্রাইক দেন হায়দার আলী। ওভারের দ্বিতীয় বলে ফুলটস পেয়ে বল গ্যালারিতে পাঠান ধ্রুব।
৪ বলে ৪ রান দরকার আমিরাতের। ওভারের তৃতীয় ডেলিভারিতে দারুণ এক স্লোয়ার দেন সাকিব। সেটা ঠিকঠাক বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে যান ধ্রুব (৭ বলে ১১ রান)। সাকিবের পরের ডেলিভারিতে ১ রান নেয় আমিরাত।
সমীকরণ তখন ২ বলে ৩ রানের। এমন পরিস্থিতিতে নো বল করে বসেন সাকিব। ইতিহাস লেখার পথ থেকে তখন ২ রান দূরে আমিরাত। ওভারের পঞ্চম বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট সীমানার দিকে ঠেলে দিয়ে সমীকরণ মিলিয়ে আমিরাতকে রূপকথার মতো এক জয় এনে দেন হায়দার আলী (৬ বলে ১৫* রান)।