বছর দশেক আগে এবি ডি ভিলিয়ার্সের চোখ কচলে দেখার মতো ইনিংসে ছোট্ট রেকর্ডটা চাপাই পড়ে গিয়েছিল। ৪৪ বলে কেউ যদি ১৪৯ রান করে ফেলেন, যে পথে সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড গড়ে ফেলেন ৩১ বলে, ৯ চারের বিপরীতে ছক্কা মারেন ১৬টি – ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তাণ্ডব চালানো ওই ইনিংসে ফিফটিটাও যে ১৬ বলে করে ফেলেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স, সে রেকর্ডটা আর আলাদা করে গুরুত্ব পায় না।
সেই রেকর্ডটা আজ সামনে চলে এল ম্যাথিউ ফোর্ডের কারণে। ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যান ছুঁয়ে ফেলেছেন ডি ভিলিয়ার্সের ওয়ানডেতে দ্রুততম ফিফটির বিশ্বরেকর্ড। ১৬ বলে ১ চার আর ৮ ছক্কায় করে ফেলেছেন ফিফটি।
তবে ফিফটির রেকর্ডে ভাগাভাগি হলেও আরেকটি রেকর্ডে নিজেকে অনন্য করে তুলেছেন ম্যাথিউ ফোর্ড। শেষ পর্যন্ত ১৯ বলে ২ চার ৮ ছক্কায় ৫৮ রান করে আউট হয়েছেন তিনি। অর্থাৎ, ৫৬-ই তুলেছেন চার আর ছক্কা মেরে – ইনিংসে মোট রানের ৯৬.৫৫ ভাগ! পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংসে বাউন্ডারি থেকে পাওয়া রানের হিসেবে এটিই সর্বোচ্চ। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই আন্দ্রে ফ্লেচার ২০০৯ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫২ রানের পথে ৫০ (৯৬.১৫ ভাগ) তুলেছিলেন চার-ছক্কায়।
ফোর্ডের প্রলয়ংকরী ফিফটির আগে কেসি কার্টির ১০২ রান, অধিনায়ক শাই হোপের ৪৯ ও জাস্টিন গ্রিভসের অপরাজিত ৪৪ রানের সৌজন্যে আগে ব্যাট করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫০ ওভারে তুলেছে ৮ উইকেটে ৩৫২ রান।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের ৩০৩ রানের জবাবে মাত্র ১৭৯ রানে অলআউট হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ আজ ঝালই ঝেড়েছে বলা যায়! সে হিসেবে ফোর্ডের ইনিংসটি থেকে মিলেছে ‘বোম্বাই মরিচে’র ঝাল! এমনই ইনিংস যে, কার্টির সেঞ্চুরিও আড়ালে পড়ে যাচ্ছে।
আটে নামা ফোর্ড যখন ক্রিজে গেছেন, ততক্ষণেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ তিন শ করার মতো ভিত পেয়ে গেছে। তিনে নামা কার্টির সেঞ্চুরি আর চারে নামা হোপের ফিফটি ছুঁইছুঁই ইনিংসের সৌজন্যে ততক্ষণেই উইন্ডিজের রান ৪৩.১ ওভারে ৬ উইকেটে ২৪৩। কিন্তু এরপর যে ঝড় আসতে যাচ্ছিল, তার বিপদসংকেতের খোঁজও পায়নি আয়ারল্যান্ড।
সিঙ্গেল নিয়ে শুরুর পর ৪৪তম ওভারেই ব্যারি ম্যাকার্থিকে নিজের মুখোমুখি দ্বিতীয় বলে ছক্কা মারেন ফোর্ড। পরের ওভারে জশ লিটলের ওপর বড় ঝড় দিয়ে শুরু তাঁর আগ্রাসন। ওভারের প্রথম বলে গ্রিভস সিঙ্গেল নিয়ে ফোর্ডকে স্ট্রাইকে দিয়েছিলেন, পরের বল ডট। এরপর চারবার বল কুড়িয়ে আনতে হলো গ্যালারি থেকে! তৃতীয় বলে লং অনে বিশাল ছক্কা, চতুর্থ বল ডট, পঞ্চম বলটা হলো নো – তাতেও স্কয়ার লেগে ছক্কা, পরের দুই বলে ছক্কা ডিপ মিডউইকেট আর লং অফে। এক ওভারেই ২৬ রান!
থমাস মায়েসের পরের ওভারে স্ট্রাইক পেলেন তিন বলের জন্য, তাতে একটি চার ও ছক্কার পর সিঙ্গেল – ১৩ বলেই ফোর্ডের রান হয়ে গেল ৪২। ডি ভিলিয়ার্সের রেকর্ডের খোঁজ শুরু হয়ে গেল!
রেকর্ড ছুঁতে দেখার অপেক্ষা মিনিট কয়েকেরই হলো। ম্যাকার্থির প্রথম বলটাতে রান নিতে পারেননি ফোর্ড, পরের বলটা ম্যাকার্থি করলেন নো, তাতে লং অফে ছক্কা! এর পরের বলে আবার বল গ্যালারিতে – এবার এক্সট্রা কাভারে। এবং রেকর্ড!
আয়ারল্যান্ডের ভাগ্য ভালো, বিপদসংকেত না দিয়ে আসা তাণ্ডবটা এরপর আর বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ফিফটি যে ওভারে ছুঁয়েছেন, ম্যাকার্থির করা ৪৭তম সেই ওভারের তৃতীয় বলে একটা চার মারার পর পঞ্চম বলে আউট হয়ে যান ফোর্ড।
ক্রিকইনফোর হিসেবে, ২১ মিনিটের ‘তাণ্ডব’ শেষ হলো তাতে।