লর্ডসে রেকর্ড-পরিসংখ্যান সবকিছু বিপক্ষে ছিল সাউথ আফ্রিকার। ঐতিহ্যবাহী এ ভেন্যুতে এর আগে কখনোই টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে ১১৯ এর বেশি রান করতে পারেনি প্রোটিয়ারা। সেখানে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে গতকাল দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ২০৭ রান তোলায় সাউথ আফ্রিকার লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮২ রান।
শুধু আফ্রিকা কেন, লর্ডসে যেকোনো দলের জন্যই এ লক্ষ্য কতটা কঠিন, সেটা পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে সহজেই বোঝা যায়। লন্ডনের এ ভেন্যুতে চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ বা এর চেয়ে বেশি রানে তাড়া করে জেতার রেকর্ড আছেই মাত্র দুটি। এছাড়াও সাউথ আফ্রিকাকে চোখ রাঙানি দিচ্ছিল আরেকটা ভয়! ঐতিহ্যগত ভাবেই ‘চোকার’ শব্দটা তো নিজেদের নামের সমার্থকই করে ফেলেছে প্রোটিয়ারা!
এমন বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে গতকাল লর্ডসে দেখা মিলল ভিন্ন এক সাউথ আফ্রিকার। ওপেনার এইডেন মার্করামের সেঞ্চুরি (১০২*) আর অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার ফিফটিতে (৬৫*) ভর করে ২ উইকেটে ২১৩ রানে দিন শেষ করেছে প্রোটিয়ারা। প্রথমবারের মতো বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপার স্বাদ পেতে আর মাত্র ৬৯ রান দরকার সাউথ আফ্রিকার। হাতে এখনো ৮ উইকেট। লর্ডসে খুব অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে সাউথ আফ্রিকার পরম আরাধ্য শিরোপা ঘরে তোলা সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
অথচ চতুর্থ ইনিংসের শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছিল সাউথ আফ্রিকা। ইনিংসের মাত্র তৃতীয় ওভারের প্রথম ওভারে মিচেল স্টার্কের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন ওপেনার রায়ান রিকেলটন। তবে সাউথ আফ্রিকাকে বিপদে পড়তে দেননি মার্করাম। লর্ডসের রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে তিনে নামা উইয়ান মুল্ডারের সঙ্গে ৬১ রানের জুটি গড়ে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেন ডানহাতি এ ব্যাটসম্যান।
চা বিরতির কিছু সময় আগে মুল্ডারের উইকেটটা হারায় সাউথ আফ্রিকা। পরের গল্পটা মার্করাম আর বাভুমার। সেখান থেকে দুজনে মিলে তৃতীয় উইকেটে ১৪৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে আফ্রিকাকে ইতিহাস গড়ার খুব কাছে নিয়ে গিয়ে দিন শেষ করে মাঠ ছাড়েন। সে পথে মার্করাম তুলে নিয়েছেন ১৩তম টেস্ট সেঞ্চুরি, আর বাভুমা পেয়েছেন ২৪তম ফিফটির দেখা।
টেস্ট ২০০৮ সালের পর থেকে কখনোই ২৫০ এর অধিক রান তাড়া করে জিততে পারেনি সাউথ আফ্রিকা। শেষবার যখন এ কীর্তি গড়েছিল, সেবারও প্রোটিয়াদের প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া। ওয়াকাতে ২০০৮ সালের ওই টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার ৪১৪ রান তাড়া করে জিতেছিল সাউথ আফ্রিকা। ১৭ বছর পর অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েই এবার টেস্টে নিজেদের সেরা সাফল্যের পথে প্রোটিয়ারা!