ওভার হয়ে গেছে ৫৭টি, উইকেট পড়েছে ৩টি, রান ১৭৭। অন্য যেকোনো সময় হলে টেস্টে আহামরি না হলেও ভালো ব্যাটিং বলা যেত। কিন্তু গলে আজ চতুর্থ দিনের শেষ দুই সেশনে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে যে ব্যাটিং করল বাংলাদেশ, সেটিকে কী বলা যায়?
চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হয়ে গেছে, আর দিন বাকি আছে একটি। দিন শেষে শান্ত ৫৬ রান ও মুশফিক ২২ রানে অপরাজিত আছেন। গল টেস্টে যে ড্রয়ের সম্ভাবনাই বেশি, সেটি তো গতকাল থেকেই বলা যাচ্ছিল। তবে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে আজ মনে হলো, বাংলাদেশ জয়ের কথা ভাবছেই না। বা এভাবে বলা যায়, ওভারপ্রতি গড়ে ৩.১০ রান তোলা বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে মনে হতে পারে, টেস্টের তিন বিকল্পের মধ্যে একটি বাদ দেওয়া নিশ্চিত করার পথেই হাঁটছে – সেটি হলো শ্রীলঙ্কার জয়।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের লিড ১৮৭ রানের। ক্রিকেটের অনিশ্চয়তার হিসাব তো যেকোনো সময় যেকোনো সমীকরণই বদলে দিতে পারে, তবে সেটিকে একপাশে রাখলে বলা যায়, এখান থেকে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনাও নেই বললেই চলে। তবে বাংলাদেশ কাল শ্রীলঙ্কাকে অন্তত ৩০০ রানের লক্ষ্যও দিতে চাইলে সে ক্ষেত্রে প্রথম সেশনের অনেকটাই ব্যাটিং করতে হবে। সে ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কাকে অলআউট করা কতটা সম্ভব হবে, তা সময় বলবে, তবে শ্রীলঙ্কার জন্য জয়ের রাস্তা খোঁজা নিশ্চিতভাবেই কঠিন হয়ে যাবে। অন্তত হার এড়ানোটা নিশ্চিত করার পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ।
আজ দিনের শুরুতে অনেকেই মনে করেছিলেন বড় লিড নিতে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। তখনও ক্রিজে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিস। স্বাগতিকরা পিছিয়ে কেবল ১২৭ রানে হাতে ৬ উইকেট। তবে লঙ্কানদের ভুল প্রমাণ করেছেন স্পিনার নাঈম হাসান। লঙ্কানরা বাংলাদেশের রান টপকাবে কী নাঈমের স্পিনে উল্টো ৪৮৫ রানে গুটিয়ে যায়, ১০ রানের লিড পায় বাংলাদেশ।
দিনের শুরুতে শ্রীলঙ্কা দ্রুত ২ উইকেট হারালেও কামিন্দু মেন্ডিস ও মিলান রত্ননায়েকে মিলে সপ্তম উইকেটে দলীয় ৪৫০ রান পার করেন। কিন্তু বড় লিড নেওয়ার আগেই নাঈম হাসানের পাঁচ উইকেটে শেষ দিকে লঙ্কান ব্যাটিংয়ে ধস নামে। ২০ রানের ব্যবধানে শেষ ৪ উইকেট হারায় ধনঞ্জয়া ডি সিলভারা।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে সাদমান ইসলাম ও নাজমুল হোসেন শান্তর ফিফটিতে স্কোরবোর্ডে ৩ উইকেটে ১৭৭ রান তোলে চতুর্থ দিন শেষে চালকের আসনে বাংলাদেশ।
গলে দিনের শুরুতে বাংলাদেশকে সফলতা এনে দেন নাঈম হাসান। লঙ্কান অধিনায়ক ডি সিলভা লেগ স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ১৯ রান করেন। নাঈমের পর বাংলাদেশকে ফের সফলতা এনে দেন আগের দিনের শেষ বিকেলের নায়ক পেসার হাসান মাহমুদ। কুশল মেন্ডিসকে মাত্র ৫ রানে ফেরান হাসান। দিনের শুরুতেই ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে শ্রীলঙ্কা।
তবে সপ্তম উইকেট জুটিতে মিলান রত্ননায়েকে ক্রিজে থাকা কামিন্দু মেন্ডিসকে সঙ্গ দিয়েছেন। শুধু সঙ্গ বললে ভুল হবে রানের গতিও বাড়িয়েছেন। এই দুই ব্যাটসম্যান মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই দলীয় ৪৫০ রান পার করেন।
দ্বিতীয় সেশনে লঙ্কানরা তখন বড় লিডের স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু মধ্যাহ্ন বিরতির পর সব হিসেব পাল্টে দেয় বাংলাদেশ। ৩৯ রান করা পেস বোলিং অলরাউন্ডার মিলান রত্ননায়েকে দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই বোল্ড করে প্যাভিলিয়নে ফেরান হাসান মাহমুদ। এরপর সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাওয়া কামিন্দু মেন্ডিসকে ৮৭ রানে ফেরান নাঈম হাসান। দ্রুত দুই উইকেট হারানো লঙ্কানরা বেশিক্ষণ আর টিকে থাকতে পারেনি। নাঈমের স্পিন ভেলকিতে থারিদু রত্ননায়েকে (০) ও আসিথা ফার্নান্দো(৪) ফিরেছেন অল্পতেই।
দ্বিতীয় সেশন ৪৬৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে শুরু করলেও ২০ রানের ব্যবধানে বাকি ৪ উইকেট হারিয়ে ৪৮৫ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। নাঈম নেন ৫ উইকেট, হাসান ৩টি।
দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ রানের লিড নিয়ে খেলতে নেমে ফের হতাশ করেছেন বাংলাদেশের ওপেনার এনামুল হক বিজয়। আগের ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়া বিজয় এবার রানের খাতা খুললেও করেছেন মাত্র ৪ রান। প্রবাথ জয়সুরিয়ার স্পিনে ফিরেছেন দলীয় ২৪ রানে।
এরপর ক্রিজে নেমে সাদমানকে সঙ্গে নিয়ে ভালোই জবাব দিচ্ছিলেন মুমিনুল হক। কিন্তু চা বিরতির আগে থারিন্দু রত্ননায়েকে সুইপ শট খেলতে গিয়ে মিস টাইম হয়ে নিজের মাথায় লেগে শর্ট পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে বসেন মুমিনুল। ১৪ রানে ফিরে যান এই বাঁহাতি।
তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক শান্ত নেমে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে দলীয় ৬৫ রানে সাদমানকে নিয়ে চা বিরতিতে যান। এরপর শেষ সেশনের শুরুতেই আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন দুজনে। ৭০ বলে এই সিরিজে নিজের প্রথম ফিফটির দেখাও পেয়ে যান সাদমান।
দলীয় এক শ রান পার করার পর ভালো ছন্দে ছিলেন এই ওপেনার। তবে খেলা শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে মিলান রত্ননায়েকের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন সাদমান। সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাওয়া এই ওপেনার ফেরেন ৭৬ রানে।
দলীয় ১২৮ রানে বাংলাদেশ তৃতীয় উইকেট হারালেও শেষ বিকেলে ক্রিজে টিকে ছিলেন অধিনায়ক শান্ত ও অভিজ্ঞ মুশফিক। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করার শান্ত দ্বিতীয় ইনিংসে দিনের খেলা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে ফিফটির দেখাও পেয়ে যান।