ঘরের মাঠে গত বছর ইংলিশ বোলারদের বেধড়ক পিটিয়েছিলেন যশস্বী জয়সোয়াল। পাঁচ ম্যাচের সেই সিরিজের করেছিলেন ৭১২ রান, যেখানে ছিল দুটি ডাবল সেঞ্চুরি। সেই ঘটনা অতীত। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, তখন ঘরের মাঠ বলেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওভাবে জ্বলে উঠতে পেরেছিলেন জয়সোয়াল। এবার ইংলিশদের মাঠে এই বাঁহাতি ওপেনারকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে বলেও মনে হয়েছিল অনেকের।
আজ হেডিংলিতে সিরিজের প্রথম ম্যাচের প্রথম দিনের দ্বিতীয় সেশনে জয়সোয়াল যা করলেন, তাতে রেকর্ডবুকই নাড়িয়ে দেখতে বাধ্য করেছেন সবাইকে। আগে ব্যাট করতে নামা ভারতের হয়ে ইংলিশদের বিপক্ষে ১৪৪ বলেই সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে গেছেন জয়সোয়াল। ইংলিশদের মাটিতে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট, আর তাতেই সেঞ্চুরি করে বসলেন।
এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে জয়সোয়ালের পর ভারতের হয়ে সেঞ্চুরি পেয়েছেন অধিনায়ক শুবমান গিলও। জয়সোয়াল ১০১ রান করে আউট হয়ে গেলেও গিল এই মুহূর্তে অপরাজিত ১১১ রানে। এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে ভারতের রান ৩ উইকেটে ৩২২। ক্রিজে গিলের সঙ্গী রিশাভ পান্ত (৪৫*)।
দুটি সেঞ্চুরিকে দুই ভাবে বর্ণনা করা যায়। জয়সোয়ালের দাঁতে দাঁত চাপা সেঞ্চুরিতে হয়েছে রেকর্ড, আর গিলের সেঞ্চুরি জাগিয়েছে মুগ্ধতা।
সেঞ্চুরির মাধ্যমে একাধিক রেকর্ডে নিজের নাম লিখিয়েছেন জয়সোয়াল। ভারতের পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসাবে ইংল্যান্ডে নিজের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। এর আগে ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে সেঞ্চুরি করেছিলেন মুরালি ভিজয়। বাকি তিন ব্যাটসম্যান হলেন- ভিজয় মাঞ্জরেকার (১৯৫২ সালে ১৩৩ রান), সান্দীপ পাতিল (১৯৮২ সালে ১২৯ রান), সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (১৯৯৬ সালে ১৩১ রান)।
শুধু ভারতীয় হিসেবে রেকর্ড গড়েই থামেননি জয়সোয়াল। এশিয়ার একমাত্র ওপেনার হিসেবে হেডিংলিতে সেঞ্চুরির রেকর্ডের মালিক এখন তিনি। এর আগে সফরকারী দল হিসেবে এই মাঠে কেবল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া ও সাউথ আফ্রিকার ওপেনাররাই সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন।
জয়সোয়ালের অবশ্য বিদেশের মাটিতে জ্বলে ওঠাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। টেস্ট অভিষেকেই সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া জয়সোয়াল এর আগে অস্ট্রেলিয়াতে নিজের প্রথম টেস্টেও সেঞ্চুরি করেছেন, সেঞ্চুরির কীর্তি আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে তাঁর প্রথম টেস্টেও। আজ ইংল্যান্ডের মাটিতে তাঁর প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরিটি জয়সোয়ালের ২০তম টেস্ট দেখা ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি! ভারতের ৯৩ বছরের ইতিহাসে জয়সোয়ালই প্রথম ব্যাটসম্যান, যে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মাটিতে নিজের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমেই সেঞ্চুরি করেছেন।
সেঞ্চুরির পথে কী অসাধারণ আত্মনিয়ন্ত্রণই না দেখিয়েছেন জয়সোয়াল! সেটা ফুটে উঠছে তাঁর স্কোরিং চার্টের বিশ্লেষণে। সেঞ্চুরির পথে কেবল মাত্র ৯ রান জয়সোয়াল করেছেন অন সাইডে, বাকি ৯১ রানই অফ সাইডে! অথচ এর আগের চার সেঞ্চুরি সবকটির মধ্যে অন সাইডে ৪০ শতাংশ বা তার বেশি রান করেছিলেন জয়সোয়াল। আজ ইংলিশ ওপেনাররা যখন ফুল লেংথে বল করেছেন, তখন কাভার ড্রাইভ করেছেন জয়সোয়াল। যখন বলের লেংথ একটু কম ছিল, তখন করেছেন স্কয়ার ড্রাইভ। আর বাউন্সারের জন্য আপার কাটও ছিল!
১৬টি চার ও ১ ছক্কায় সেঞ্চুরি করা জয়সোয়াল অবশ্য নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। চা বিরতির পর ১০১ রানে বোল্ড ফিরেছেন বেন স্টোকসের বলে।
জয়সোয়ালের ব্যাটিং মুগ্ধ করেছে, ভারতের হয়ে মুগ্ধতা তো ছড়িয়েছেন শুবমান গিলও! এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে গেছেন অধিনায়কত্বে অভিষিক্ত গিল। ভারতের হয়ে অধিনায়কত্বে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করা চতুর্থ ব্যাটসম্যান তিনি। এই ছোট্ট তালিকায় তাঁর সঙ্গীদের নামগুলো দেখুন – ভিজয় হাজারে (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, ১৯৫১ সালে ১৬৪*), সুনীল গাভাস্কার (নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ১৯৭৬ সালে, ১১৬ রান) ও ভিরাট কোহলি (অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, ২০১৪ সালে ১১৫ রান)।
শুধু সেঞ্চুরিই নয়, সে পথে এখন পর্যন্ত ১৪ চার ১ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটাতে যে দৃষ্টিসুখকর ব্যাটিং করেছেন গিল, সেটাও ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীদের ভালো না লেগে পারে না!
দিনের আরও ১৩ ওভারের খেলা বাকি। ভারতের সংগ্রহ ৩ উইকেটে ৩২২ রান।