৫৭ মিনিট চলছে তখন। বাংলাদেশ ততক্ষণেই ৫ গোল খেয়ে গেছে। ম্যাচের ফল নিয়ে প্রশ্ন তো ম্যাচের আগে থেকেই ছিল না, ততক্ষণে প্রশ্ন তখন এটি যে, বাংলাদেশ আজ কত গোল খাবে!
তা এমন মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়া পেল কর্নার, সেটি কোনোরকমে ঠেকিয়েই একেবারে তেড়েফুঁড়ে পাল্টা আক্রমণে বাংলাদেশ। সামনে অস্ট্রেলিয়ার দুজন, বাংলাদেশের চারজন উঠলেন। এ চিত্র যখন দেখা যাচ্ছে, তখনো বল বাংলাদেশ বক্সের একটু সামনে। চোখের পলক পড়ল, বল নিয়ে বাংলাদেশ উঠল মাঝরেখা পর্যন্ত। কিন্তু ওই যে চোখের পলক পড়ল, ততক্ষণে বাংলাদেশের চার খেলোয়াড়ের মধ্যে একজন একটু পিছিয়ে পড়েছেন। আর সামনে অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড় হয়ে গেছে ৬ জন!
বাংলাদেশ আর কতটুকুই-বা লড়বে, সে চিত্র ওই এক মুহূর্তেই পরিষ্কার! অস্ট্রেলিয়া র্যাঙ্কিংয়ে, ধারে, ভারে, মানে বাংলাদেশের চেয়ে কয়েক আলোকবর্ষ এগিয়ে, তার পাশাপাশি উচ্চতায়-গতিতেও অস্ট্রেলিয়ার সামনে বাংলাদেশ দলকে নস্যিই মনে হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া নিয়মিত বিশ্বকাপে খেলা দল, গত বছর রাশিয়া বিশ্বকাপে তো শেষ ষোলোতে উঠে আর্জেন্টিনাকেও ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল! শেষ পর্যন্ত হেরেছিল মাত্র ২-১ গোলে। সেই অস্ট্রেলিয়ার বিপরীতে র্যাঙ্কিংয়ে ১৮৩তম বাংলাদেশ যে মূলত গোল বাঁচানোর লড়াইয়েই নামবে, এ তো জানা কথাই! বাংলাদেশ গোল বাঁচানোর লড়াই করেছে, গোলকিপার মিতুল মারমা বেশ কয়েকটি দারুণ সেইভ করেছেন। কিন্তু এর মধ্যেও ৯০ মিনিট হতে হতে দেখা গেল, বাংলাদেশ ৭ গোল খেয়ে গেছে। ৮৯ মিনিটে মিতুল অস্ট্রেলিয়ার মাসিমো লুয়োঙ্গোর একটা পেনাল্টি না ঠেকালে গোল হতো ৮টি।
প্রথমার্ধেই বাংলাদেশ খেয়েছে ৪ গোল, দ্বিতীয়ার্ধে একটি কম হয়েছে আর কী! অস্ট্রেলিয়া পুরো ম্যাচে ২৯টা শট নিয়েছে, এর ১৪টি ছিল পোস্টে। বাংলাদেশ পোস্টে শট নিতে পারেনি, তবে পোস্টের বাইরে মিলিয়ে একটা শট নিতে পেরেছে বটে! খেলাটা কতটা একপেশে ছিল, তার ব্যাখ্যায় এতটুকুই বলা যায় যে, অস্ট্রেলিয়ার গোলকিপারকে টিভি ক্যামেরায় দেখা গেছে হাতে গোনা কয়েকবার। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামা স্ট্রাইকার জেমি ম্যাকলারেন করেছেন হ্যাটট্রিক।
শেষ পর্যন্ত ওই সাত গোলেই ক্ষান্ত হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের রেকট্যাঙ্গুলার স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ হেরেছে ৭-০ গোলে। এর আগে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরেও এই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ, সেবার ৫-০ গোলের হার নিয়ে ফেরা বাংলাদেশের জন্য আরও বড় লজ্জা ছিল - বাংলাদেশের দু-একজন খেলোয়াড়ের ভুঁড়ি নিয়ে বেশ হাসাহাসি হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম তো বটেই, ইংল্যান্ডের গার্ডিয়ানও এ নিয়ে প্রতিবেদন করেছিল।
এবার গোল দুটি বেশি খেলেও হাসির পাত্র আর হতে হয়নি, এতটুকুকেই যদি উন্নতি ধরা যায় আর কী!