বাজেটে, শক্তিতে পিছিয়ে থাকলেও মোহামেডান লড়েছে দারুণভাবে। দুই দলই দারুণ কিছু আক্রমণ করেছে, দ্বিতীয়ার্ধে গোল-পাল্টা গোল হয়েছে, দুটি গোলই দুর্দান্ত। এর মধ্যে বসুন্ধরাকে সমতায় ফেরানো গোলটি তো লিওনেল মেসির মতো কয়েক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে। এর বাইরেও আরও দারুণ কিছু আক্রমণ শুধু গোলের দেখাটাই পায়নি। অতিরিক্ত সময়ে আবার রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কে মোহামেডান মিনিট দশেক মাঠের বাইরেও থেকেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ইতিহাসটা গড়েছে বসুন্ধরা কিংসই!
ময়মনসিংহে আজ ফেডারেশন কাপের ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে মোহামেডানকে ২-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে বসুন্ধরা কিংস। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে আবির্ভাবের পর অনেক কীর্তিও তো গড়েছে বসুন্ধরা, এবারই যেমন লিগ জিতল টানা পঞ্চমবারের মতো। তবে আজ ফেডারেশন কাপ জিতেছে গড়েছে অনন্য আরেক কীর্তি। লিগ ও স্বাধীনতা কাপের পর ফেডারেশন কাপ – মৌসুমে তিন শিরোপার সবকটিই জিতে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ট্রেবল জিতল বসুন্ধরা।
ট্রেবল জয়ের রেকর্ড অবশ্য বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে এর আগেও একবার দেখা গেছে। ২০১৩ সালে কীর্তিটা গড়েছে মারুফুল হকের শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। আজ বসুন্ধরা কিংসও সে ছোট্ট ক্লাবে যোগ দিল।
গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধে বসুন্ধরাকে বেশ চেপে ধরে আলফাজ আহমেদের অধীন মোহামেডান। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধের মিনিট দশেক পেরোনোর পর তো মোহামেডান মিনিটে মিনিটে কাঁপিয়ে দিয়েছে বসুন্ধরার রক্ষণ। বসুন্ধরা গোলকিপার শ্রাবণ বেশ কয়েকবার মোহামেডানকে ফেরান সে সময়ে। তবে ৬৪ মিনিটে আর পারেননি।
মোহামেডানের গোলটা হলো দুর্দান্ত! আক্রমণে ওঠা মোহামেডানের হয়ে ডানদিকের টাচলাইনে বল পান দিয়াবাতে, তাঁর পাস গেল মোহামেডান বক্সের একটু ওপরে এমানুয়েল সানডের কাছে। বল পেয়েই গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডারকে ছিটকে বেরিয়ে গেলেন সানডে, তারপর বক্সের একটু বাইরে থেকেই তাঁর বাঁ পায়ের গোলা! বক্সের বাঁ দিক থেকে শটটা করেছিলেন, বল একেবারে ডানদিকের পোস্ট ঘেঁষে জালে! বসুন্ধরা গোলকিপার ঝাঁপিয়েও বলের নাগাল পেলেন না।
এরপরই মোরসালিনসহ তিন খেলোয়াড়কে নামান বসুন্ধরা কোচ অস্কার ব্রুজোন। গতি পায় বসুন্ধরার আক্রমণ। মোহামেডানও একেবারে ছেড়ে কথা বলেনি। একবার বসুন্ধরা অধিনায়ক রবসনের শট মোহামেডান গোলকিপার সুজনের হাতে লেগেও পরে পোস্টে লাগে। পাল্টা আক্রমণেই দ্বিতীয় গোলটা প্রায় করেই ফেলেছিলেন মোহামেডানের দিয়াবাতে, তবে ফিনিশিংটা ভালো হয়নি তাঁর। এরপরই বসুন্ধরার সমতায় ফেরা! এবং ময়মনসিংহের স্টেডিয়ামে এক ব্রাজিলিয়ানের ‘মেসি’ মুহূর্তের দেখা!
ম্যাচের তখন আর মিনিট পাঁচেক বাকি। মাঝবৃত্তে বল পেলেন বসুন্ধরার ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার মিগেল ফিগেইরা। বল পেয়ে ছুটতে শুরু করেন। প্রথমে এক খেলোয়াড়কে কাটালেন, তারপর দুদিক থেকে ছুটে আসা দুই খেলোয়াড়ের ফাঁক গলিয়েই বেরিয়ে গেলেন। ততক্ষণে মোহামেডান বক্সের সামনে একটু ডানদিকে তিনি, সামনে সারি করে দাঁড়ানো চার ডিফেন্ডার। মিগেল কী করলেন?
একজনকে কাটিয়ে বক্সের ভেতরের দিকে গেলেন। আরেক ডিফেন্ডার চার্জ করতে ছুটে আসছেন, তার আগেই মিগেলের বাঁ পায়ের দারুণ শট। চার্জ করে ফেলা ডিফেন্ডার মাটিতেই পড়ে রইলেন, মোহামেডান গোলকিপারও ঝাঁপালেন। কিন্তু দুজনই হতাশ নয়নে দেখলেন, বল বাঁদিকের পোস্ট ঘেঁষে জড়িয়ে গেল জালে! জার্সি খুলে সে কী উদ্যাপন মিগেলের!
নির্ধারিত সময়ে ১-১ সমতা, তাই ম্যাচ গড়াল অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধও তখন প্রায় শেষ, এমন সময়ে বক্সের বাইরে থেকে রবসনের দারুণ বাঁকানো শট ঝাঁপিয়ে সেভ করেন মোহামেডান গোলকিপার। কিন্তু সেখান থেকে পাওয়া কর্নারেই কপাল পুড়ল মোহামেডানের। মিগেলের কর্নার থেকে ভেসে আসা বল ধরতে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে বলটা ধরতে পারেননি মোহামেডান গোলকিপার সুজন, ফাঁকায় দাঁড়ানো জাহিদের ভলিতে বল জড়িয়ে যায় জালে।
এরপরই হলো নাটক। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের বিরতির পর দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামতে আপত্তি জানাল মোহামেডান। ম্যাচের আগে রেফারিং নিয়ে আপত্তি জানানো, ম্যাচের প্রথমার্ধে বসুন্ধরার বিশ্বনাথকে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড না দেখানোয় ক্ষোভ ঝেড়ে দেওয়া মোহামেডান এবার আপত্তি জানাল বসুন্ধরার দ্বিতীয় গোলটি নিয়ে। তাদের দাবি, কর্নারের পর বক্সে বসুন্ধরার এক খেলোয়াড়ের ধাক্কার কারণেই মোহামেডান গোলকিপার বলটা ধরতে পারেননি। এ দাবিতে কোচ আলফাজ খেলোয়াড়দের মাঠ থেকে ডাগআউটে ডেকেও নেন।
রিপ্লেতে অবশ্য মোহামেডানের দাবিকে জোর সমর্থন জানানোর মতো কিছু পাওয়া যায়নি। তবু ফাইনালের উত্তেজনা বলে কথা, শেষ মুহূর্তে এমন গোল খাওয়া মোহামেডানের ক্ষোভ সহজে যায় নাকি! মিনিট দশেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তাদের আবার মাঠে নামানো গেল। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য মোহামেডানের ইমনের একটা শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যাওয়ায় মোহামেডান আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হলো।
বসুন্ধরা গেল শিরোপামঞ্চে।