ম্যাচের বয়স সবে ২৭ সেকেন্ড, তাতেই কিনা গোল হজম করে বসেছে রেয়াল মাদ্রিদ! এর একটু পরেই ম্যাচে ফেরার সহজ সুযোগ পেয়েও অবিশ্বাস্যভাবে মিস করেন ব্রাহিম দিয়াস। ঘরের মাঠ বের্নাবেউতে গতকাল রোববার রাতে লাস পালমাসের বিপক্ষে লা লিগার মাচে মাদ্রিদের শুরুটা হয়েছিল এভাবেই।
তবে ঘুরে দাঁড়াতে সময় নেয়নি কার্লো আনচেলত্তির দল। দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত ৪-১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে মাদ্রিদ। লস ব্ল্যাঙ্কোদের হয়ে জোড়া গোল করেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। বাকি দুটি গোল এসেছে ব্রাহিম দিয়াস ও রদ্রিগোর পা থেকে।
অবশ্য মাদ্রিদের গোল সংখ্যা সাতও হতে পারত। তবে আনচেলত্তির দলের তিনটি গোল বাতিল হয়েছে অফসাইডে। লা লিগার ইতিহাসে একমাত্র দল হিসেবে ভিএআরে ৩টি গোল বাতিল হলো মাদ্রিদের। অবশ্য আনচেলত্তির দল যে এ কীর্তি এবারই প্রথম দেখল, এমন নয়। এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে লিগে এলচের বিপক্ষে ম্যাচেও ৩টি গোল ভিএআর যাচাইয়ে বাতিল হয়েছিল মাদ্রিদের। সে ম্যাচে ৩-০ গোলে জিতেছিল লস ব্ল্যাঙ্কোরা।
দুই বছর আগের সেই স্মৃতি ফেরানোর ম্যাচে জয়ের পর লিগের শীর্ষস্থানে উঠেছে আনচেলত্তির দল। অবশ্য মাদ্রিদের শীর্ষে ওঠার পথটা তৈরি হয়েছিল একদিন আগেই। আতলেতিকো মাদ্রিদের হার ও বার্সার ড্র-তেই নিশ্চিত হয়েছিল, লাস পালমাসকে হারাতে পারলেই লিগ টেবিলে সবার ওপরে জায়গা হবে লস ব্ল্যাঙ্কোদের। সুযোগটা হাতছাড়া করেননি এমবাপ্পে-রদ্রিগোরা।
গতকালের জয়ে ২০ ম্যাচে ৪৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠেছে মাদ্রিদ। সমান ম্যাচে ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আতলেতিকো মাদ্রিদ। আর তৃতীয় স্থানে থাকা বার্সার পয়েন্ট ৩৯।
গতকাল ম্যাচের ১ম মিনিটে ফ্যাবিও সিলভার গোলে পালমাস এগিয়ে গেলেও প্রতিক্রিয়া দেখাতে বেশি দেরি করেনি মাদ্রিদ। তৃতীয় মিনিটেই আক্রমণে উঠেছিল আনচেলত্তির দল। কিন্তু বক্সের বাঁ প্রান্ত থেকে বাড়ানো ক্রস অনেকটা ফাঁকায় পেয়েও অবিশ্বাস্যভাবে মিস করে বসেন দিয়াস।
১৭তম মিনিটে রদ্রিগোকে বক্সের ভেতর ফাউল করলে পেনাল্টি পায় মাদ্রিদ। স্পটকিক থেকে ঠান্ডা মাথায় জালে বল জড়িয়ে স্কোরলাইন ১-১ করেন এমবাপ্পে।
গোল পেয়ে উজ্জীবিত মাদ্রিদ এরপর টানা আক্রমণ চালাতে থাকে। ২৬ থেকে ৩০- এই কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রায় তিনবার গোলের কাছাকাছি গিয়েছিল মাদ্রিদ। তবে সে তিনটি প্রচেষ্টাই ব্যর্থ করেছেন পালমাস গোলকিপার সিলেসেন।
তবে বেশিক্ষণ মাদ্রিদকে আটকে রাখতে পারেননি তিনি। ৩৩তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া এমবাপ্পের শট বাঁ দিকে ঝাপিয়ে ঠেকালেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি সিলেসেন। ফিরতি বল পেয়ে ফাঁকায় দাঁড়ানো ব্রাহিম দিয়াসের দিকে বাড়ান লুকাস ভাসকেস। সেখান থেকে পা লাগিয়ে সহজেই মাদ্রিদকে এগিয়ে (২-১) দেন দিয়াস।
এর ৩ মিনিট পরেই আবারও গোলের দেখা পায় বর্তমান লিগ চ্যাম্পিয়নরা। এবার রদ্রিগোর পাসে বক্সের ভেতর থেকে দারুণ শটে গোল করেন ফরাসি স্ট্রাইকার। ৪২তম মিনিটে আরেকবার পালসামের জালে বল জড়িয়ে হ্যাটট্রিকের আনন্দে মেতেছিলেন এমবাপ্পে। কিন্তু ভিএআর যাচাইয়ে এমবাপ্পের গোলটি বাতিল হয় অফসাইডে।
শুধু এমবাপ্পের গোলটিই নয়, দ্বিতীয়ার্ধে বেলিংহাম ও ফেদে ভালভার্দের আরও দুটি গোল বাতিল হয় ভিএআরে। তার আগেই (৫৭ মিনিটে) অবশ্য স্কোরলাইন ৪-১ করেন রদ্রিগো।
ম্যাচের ৬৪ মিনিটে ভাসকেসকে বাজেভাবে ফাউল করে সরাসরি লালকার্ড দেখেন বেনিতো রামিরেস। ১০ জন হয়ে পড়লেও শেষ দিকে আর কোনো গোল হজম করেনি পালমাস।
এমবাপ্পে মাদ্রিদে যাওয়ার পর শুরুতে গোল পাচ্ছিলেন না বলে সমালোচনা কম হয়নি। পরে অবশ্য ধীরে ধীরে মানিয়ে নিয়েছেন। গতকাল জোড়া গোলের পর এমবাপ্পের মুখেও শোনা গেল সে কথা, ‘আমি দলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। আমি যেভাবে চাই, এখন সেভাবেই খেলতে পারি।’