ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অবস্থা কি বার্সেলোনার মতোই হতে যাচ্ছে? আগের বছরগুলোতে আয়ের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় করেছে, ঋণের চড়া সুদও দিতে হচ্ছে। ওদিকে মাঠেও তাদের পারফরম্যান্স পড়তির দিকে, চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে না পারায় আয়ও কমেছে। ফলে প্রিমিয়ার লিগের ‘প্রফিট অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি রুলস’-এর মধ্যে থেকে ক্লাব চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ক্লাবের সহ-মালিক ইনেওস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জিম র্যাটক্লিফ খরচ কমাতে ও আয় বাড়াতে একের পর এক অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আজীবন ম্যান ইউনাইটেডেরই সমর্থক র্যাটক্লিফের ওপরই তাতে বিরক্ত হয়ে উঠেছেন ক্লাবটির সমর্থকগোষ্ঠী। ব্যানার নিয়ে প্রতিবাদও করেছেন।
এত কিছুর মধ্যে আজ বিবিসিতে লম্বা সাক্ষাৎকারে ক্লাবের সব দিক নিয়েই কথা বলেছেন গত বছর ক্লাবের প্রায় ২৯ শতাংশের শেয়ার কেনার মাধ্যমে ক্লাবের ফুটবলভিত্তিক কর্মকান্ডের দায়িত্ব বুঝে নেওয়া র্যাটক্লিফ। সেখানেই তুলে ধরেছেন, তাঁর নিজের পকেট থেকে প্রায় ৩০ কোটি পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৭০০ কোটি টাকা) দেওয়ার পরও নাকি র্যাটক্লিফ দেখছেন, দলের আর নগদ টাকা তেমন নেই!
‘ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে যদি একটা ব্যবসা হিসেবে চিন্তা করেন, তাহলে বলতে হবে, এটা খাদে পড়েছে। এবং এই অবস্থা আরও অনেক আগ থেকেই চলছে। টাকা-পয়সার হিসাবের দিকে তাকালে দেখবেন, সংখ্যাগুলো ভয়ংকর! কারণ, দলটা যেদিকে যাচ্ছে, সেদিকে কারও নিয়ন্ত্রণই যেন আর নেই। খরচ সীমা ছাড়িয়ে গেছে’ – বলেছেন র্যাটক্লিফ।
সাত বছর ধরে প্রশাসনিক একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ক্লাবের এই অবস্থা জানিয়ে র্যাটক্লিফ বলেন, ‘একেবারে সহজ-সাধারণ করে বললে, সাত বছর ধরে ক্লাবটা যা আয় করেছে, তার চেয়ে বেশি টাকা খরচ করে আসছে। যে কারণে খুব বাজে একটা অবস্থায় এসে পড়েছি আমরা।’
এভাবে চলতে থাকলে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ক্লাবের নগদ অর্থ বলে কিছু থাকত না বলেই জানিয়েছেন র্যাটক্লিফ। এমনকি তিনি ক্লাবের মালিকানা নেওয়ার পর থেকে প্রায় ৩০ কোটি পাউন্ড দলটার ফান্ডে ঢোকানোর পরও এখনকার অবস্থা নিয়ে র্যাটক্লিফ বলেছেন, ‘কোনো টাকাই আর নেই!’
এমন কঠিন পরিস্থিতিতে র্যাটক্লিফ কিছুদিন আগে সিদ্ধান্ত নেন, ক্লাবের কিংবদন্তি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনকে ‘পরামর্শক’ হিসেবে বছরে যে ২০ লাখ পাউন্ড দেওয়া হতো, সেটি দেওয়া হবে না। বিবিসিতে সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে র্যাটক্লিফ জানিয়েছেন, ফার্গুসনকে তিনি সব বুঝিয়ে বলার পর ফার্গুসন নিজ থেকেই সে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
সেখানে ২০ লাখ পাউন্ড বাঁচানোর পাশাপাশি র্যাটক্লিফ খরচ কমাতে ক্লাবের অনেক কর্মীকে ছাঁটাই করেছেন। টিকিটের দাম বাড়িয়েছেন। সব মিলিয়েই তাঁর সমালোচনাও হচ্ছে।
ক্লাবের এই অবস্থার পেছনে সাক্ষাৎকারে র্যাটক্লিফ আগের কয়েক বছরে ক্লাবের দলবদলের কথা তুলে এনেছেন। তাঁর চোখে, অনেক খেলোয়াড়ই ‘ইউনাইটেডে খেলার মতো ভালো নয়’, আবার অনেকের পেছনে ইউনাইটেড ‘মাত্রাতিরিক্ত খরচ করে দলে টেনেছে।’
ইউনাইটেডের অপ্রত্যাশিত কিছু খরচের দায় অবশ্য র্যাটক্লিফেরও আছে। গত মৌসুমের শেষে সাবেক কোচ এরিক টেন হাগকে বরখাস্ত না করে বরং চুক্তি বাড়ানো হয়। অথচ সেই টেন হাগকে গত অক্টোবরে, মৌসুমে তিন মাসের মাথায় ছাঁটাই করা হয়। এতে টেন হাগ ও তাঁর সহকারীদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ পাউন্ড দিতে হয়েছে। এরপর স্পোর্তিং সিপিকে ১ কোটি পাউন্ড ‘রিলিজ ক্লজ’ দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয় নতুন কোচ রুবেন আমোরিমকে। অন্যদিকে র্যাটক্লিফের অধীনেই নিয়োগ পাওয়ার পাঁচ মাসের মধ্যেই আবার ছাঁটাই করা হয় ক্লাবের স্পোর্টিং ডিরেক্টর ড্যান অ্যাশওয়ার্থকে। তাঁর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৪০ লাখ পাউন্ডেরও বেশি খরচ হয়েছে।
এ দুটিকে অবশ্য ‘ভুল’ বলে স্বীকার করেছেন র্যাটক্লিফ। নতুন কোচ আমোরিম যে দল পেয়েছেন, তা নিয়েই দারুণ কাজ করছেন বলেও সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন ম্যান ইউনাইটেডের সহ-মালিক। পাশাপাশি রাশফোর্ড-আন্তনিদের ধারে যেতে দেওয়াও আমোরিমের ভুল ছিল না বলে ব্যাখ্যা করেছেন র্যাটক্লিফ।