চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতে গতকাল আতলেতিকো মাদ্রিদকে টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে হারিয়েছে রেয়াল মাদ্রিদ। দুই লেগ মিলিয়ে ২-২ ব্যবধানে শেষ হওয়া ম্যাচের সবচেয়ে নাটকীয় মুহূর্তের দেখা মিলেছে পেনাল্টি শ্যুটআউটে।
শট নেওয়ার আগে হুলিয়ান আলভারেসের পা পিছলে যায়। তবু আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড বল জালে পাঠাতে পেরেছিলেন। কিন্তু ভিএআর সিদ্ধান্ত জানায়, বলে শট নেওয়ার আগে বাঁ পায়ের স্পর্শ পেয়েছে বল, তাই সে গোল বাতিল হয়।
আতলেতিকো কোচ দিয়েগো সিমেওনে বলেছেন, এভাবে ভিএআরকে কখনো পেনাল্টি বাতিল করতে দেখেননি তিনি। আসলেই কি আলভারেসের ঘটনাটি অভূতপূর্ব নাকি এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে? আর ফিফার কোন আইনে বাতিল হলো এই গোল?
আলভারেসের শতের পরই এমবাপ্পে ও কোর্তোয়াসহ মাদ্রিদের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় রেফারি শেমন মারচিনিয়াকের কাছে গোলটি নিয়ে আপত্তি তোলেন। রেফারিও ভিএআরের কাছে পরামর্শ চান। রিপ্লেতে দেখা যায়, ডান পা দিয়ে শট নেওয়ার আগে বাম পায়ে বল লেগেছিল এক মুহূর্তের জন্য।
ফুটবলের আইন-প্রণেতা আন্তর্জাতিক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড (আইএফএবি) এর নিয়মানুযায়ী, পেনাল্টি কিকের সময় শুধু একবারই বল স্পর্শ করা যায়। আইএফএবি এর ১৪.১ ধারা অনুযায়ী, ‘কিকার (শট নেওয়া ফুটবলার) অন্য কোনো খেলোয়াড়ের স্পর্শ পাওয়ার আগে আবার বল স্পর্শ করতে পারবে না।’ এই নিয়মের কারণেই টাইব্রেকারে বল পোস্টে লাগার পর খেলোয়াড় আবার শট নিতে পারেন না।
যদি স্বাভাবিক সময়ে এমন কিছু ঘটত, তাহলে প্রতিপক্ষ অর্থাৎ মাদ্রিদ একটি ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিক পেত।
মজার ব্যাপার সিমেওনে কখনো এমন কিছু না দেখলেও ইউরোপিয়ান ফুটবলে এমন ঘটনা নতুন কিছু না। ২০১৭ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে পেনাল্টি নেওয়ার সময় এভাবে পা লেগেছিল লেস্টার সিটির রিয়াদ মাহরেজের। তাই গোল করার পরও রেফারি সেটা বাতিল করে দেন।
২০২৩ সালে নিউক্যাসলের বিপক্ষে ফুলহামের আলেক্সান্দার মিত্রোভিচের পেনাল্টিও এভাবে বাতিল হয়ে যায়। মজার ব্যাপার, একই বছর স্কটিশ লিগে সেইন্ট মিরেনের বিপক্ষে যোগ করা সময়ে পেনাল্টি নিতে গিয়ে এভাবেই বল লাগে বোয়ান মিওভস্কির। ভিএআর কিন্তু সেটা গোল বলেই রায় দিয়েছিল।
গতকাল রেফারির নেওয়া সিদ্ধান্তের পর তাই অনেক দর্শকই দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। তবে বিশেষজ্ঞরা সবাই রেফারির পক্ষেই কথা বলেছেন। সাবেক বার্সেলোনা তারকা ও আর্সেনাল কিংবদন্তি থিয়েরি অরি সিবিএস এর অনুষ্ঠান স্পোর্টস গোলাজোতে দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় বলেছেন, ‘যদি স্পর্শ হয়ে থাকে এটাই নিয়ম।’
সিবিএস স্পোর্টসের ফিফার আইন বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিনা আনকেল বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন ঘটনাটি, ‘এটাই নিয়ম, সহজ ব্যাপার, পায়ে লেগেছে। তবে একটা জিনিস মনে রাখা উচিত, ভিএআর-এও কিন্তু সেমি-অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি আছে, যেখানে তারা কিকের জায়গাটা দেখতে পারে। এবং বলে কখন কোনো স্পর্শ হয়েছে সেটাও বলে দেয়।’
গত বিশ্বকাপে বলের মধ্যেই চিপ ছিল, ফলে বলে কখন কী হচ্ছে সেটা বোঝা গেছে। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগের বলে এমন কিছু নেই, ‘এখন বলে কোনো আঘাত পেলেই আমরা সেটা দেখতে পাই। গত বিশ্বকাপে যেমন চিপ ছিল, সেটা নেই। তবে প্রযুক্তির একটা বাড়তি লেয়ার আছে যা অনুক্রমের বাড়তি তথ্য দেয়।’
ক্রিস্টিনা আরও বলেন, ‘ফলে ভিএআর শুধু একটা ভিডিও দেখছে এমন না, বরং সেমি-অটোমেটেডে পদ্ধতিতে ২৬টি ভিন্ন ক্যামেরা দিয়ে লিম্ব ট্র্যাকিং টেকনোলজি দিয়ে স্পর্শের জায়গাটি দেখছে, এর বাইরে বলের ওপর থাকা ক্যামেরা তো আছেই। সেটাই ভিএআরকে আরো নিখুঁত ও পরিষ্কার তথ্য দেয়, জানায় খালি চোখের বাইরেও স্পর্শ হয়েছে কিনা।’