ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে তিনি উপেক্ষার পাত্র, কিন্তু রেয়াল বেতিসে তিনি যেন উপহারের মতো। এমনই যে, গত জানুয়ারিতে ম্যান ইউনাইটেড থেকে বেতিসে ধারে যাওয়া ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার আন্তনিকে ক্লাবে ধরে রাখতে বিশেষ এক আবেদন করে বসেছেন বেতিসের স্প্যানিশ প্লেমেকার ইসকো। বলেছেন, প্রয়োজনে আন্তনিকে ধরে রাখতে বেতিসের সমর্থকদের কাছ থেকে চাঁদা বা ক্রাউডফান্ডিং করবেন! বলাবাহুল্য, মজা করেই কথাটা বলেছেন ইসকো।
সে এক দিন ছিল যখন আন্তনি মাতেউস দস সান্তোসকে ‘নেক্সট বিগ থিং’ মনে করা হতো।
আয়াক্সে ড্রিবলিংয়ে, সাপের মতো আঁকাবাঁকা দৌড়ে যখন মুগ্ধতা ছড়াচ্ছিলেন, কেউ তাঁর তুলনা দিতেন আর্জেন্টিনার আনহেল দি মারিয়ার সঙ্গে, কেউবা তাঁরই স্বদেশি নেইমারের সঙ্গে মিলিয়ে আন্তনিকে ডাকতেন ‘বাঁ পায়ের নেইমার।’ এমনি এমনিই তো আর ২০২২ সালের আগস্টে ৯ কোটি ৫০ লাখ ইউরো দিয়ে ব্রাজিলিয়ান তারকাকে দলে টানেনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড!
কিন্তু এরপর কী এক দিন এল!
ম্যান ইউনাইটেডে প্রথম তিন ম্যাচেই গোল করে রেকর্ড গড়েছিলেন বটে, কিন্তু অতটুকুই! এরপর আন্তনি ধীরে ধীরে হারিয়ে গেলেন। একদিকে তাঁর জন্য ইউনাইটেডের খরচের অঙ্কটা সামনে এসেছে, তার বিপরীতে আন্তনির পারফরম্যান্স বাড়িয়েছে হতাশা। আরও সময় গড়াতে গড়াতে তাঁর প্রাইসট্যাগ আর তাঁর অযথা ‘৩৬০ ডিগ্রি টার্ন’ কিংবা ড্রিবলিংয়ে ব্যর্থতা হয়ে গেছে ট্রলের বিষয়, ভাইরাল ইউটিউব শর্টস কিংবা ফেসবুক রিলসের কন্টেন্ট। মাঝে ব্রাজিল দলে জায়গা পেলেও ২০২২ বিশ্বকাপের পর আর শুধু একবারই ব্রাজিল দলে ডাকা হয় তাঁকে, সেটাও ২০২৩-এর মার্চের কথা।
এরপর এল জানুয়ারি, দিন বদলাল আন্তোনির।
ম্যান ইউনাইটেডে এরিক টেন হাগ ছাঁটাই হওয়ার পর নভেম্বরে রুবেন আমোরিম এলেন কোচ হয়ে, তাঁর ট্যাকটিকসে আন্তনির জায়গা হলো না। কিন্তু আন্তনির পারফরম্যান্সের কারণে তাঁকে কিনতে আগ্রহী দলও খুব বেশি পাওয়া গেল না। গত জানুয়ারির শীতকালীন দলবদলে তাই ধারে পাঠানো হলো আন্তনিকে, স্প্যানিশ ক্লাব রেয়াল বেতিসে। এক দলবদলেই সব কীভাবে বদলে গেল! ইউনাইটেডে যে আন্তনি প্রায় আড়াই বছরে ৯৬ ম্যাচে গোল করেছেন ১২টি, আর করিয়েছেন ৫টি, সেখানে বেতিসে আড়াই মাসেই ১২ ম্যাচে ৪ গোল ৪ অ্যাসিস্ট তাঁর! ফেব্রুয়ারিতে লা লিগার সেরা খেলোয়াড়ও আন্তনি!
২৫ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ানের এখন এমনই সুদিন যে, তাঁকে রেয়াল বেতিসে ধরে রাখতে ইসকো এখন ‘জনতার কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার’ কথাও বলছেন! ইউনাইটেড থেকে বেতিসে আন্তনির ধারের চুক্তিতে ‘বাই অপশন’ নেই, অর্থাৎ, মৌসুম শেষে একটা নির্দিষ্ট দামে আন্তনিকে পাকাপাকিভাবে কেনার সুযোগ বেতিসের জন্য রাখা হয়নি। কিন্তু ধারে গিয়ে তো বেতিসের সমর্থকদের হৃদয়ে আসন গেঁড়ে বসেছেন আন্তনি!
সে কারণেই গতকাল ‘সেভিল ডার্বিতে’ সেভিয়ার বিপক্ষে বেতিসের ২-১ গোলের জয়ের পর আন্তনিকে নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ইসকো হেসে বললেন, ‘আমাদের ক্রাউডফান্ড করতে হবে, যাতে ও অন্তত আরেক মৌসুম এখানে থাকতে পারে।’
আন্তোনিকে দলে পেয়ে তাঁর খুশিও গোপন রাখেননি ইসকো, ‘আন্তোনির খেলা উপভোগ করতে পারছি বলে আমি খুশি। বিনয়ী মনোভাব আর দলকে সাহায্য করার মানসিকতা, বাড়তি কিছু যোগ করার ইচ্ছা দিয়ে ও সবাইকে চমকে দিয়েছে। ও আসার পর থেকেই (দলে) একটা বদল লক্ষ্য করছি আমরা। ওকে নিয়ে আর দলটাকে নিয়ে আমরা সবাই খুশি।’
গতকাল সেভিয়ার বিপক্ষে আন্তনি গোল-অ্যাসিস্ট পাননি বটে, তবে তা সত্ত্বেও তাঁর পারফরম্যান্স নজর কেড়েছে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে বেতিস কোচ মানুয়েল পেল্লেগ্রিনি বলেছেন, ‘আন্তোনিকে এমন অবস্থায় দেখে আমি খুশি। ও দারুণ খেলোয়াড়, যে কিনা একটা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে। ওর বয়স এখনো অনেক কম, ফুটবলকে এখনো অনেক কিছু দেওয়ার আছে ওর। ইসকো, (জিওভানি) লো সেলসো, উইলিয়াম কারভালিওর মতো খেলোয়াড়দের মাঠে পাশে পাওয়ায় ওর নিজের খেলায়ও উন্নতি এসেছে।’
আর আন্তনি কী বলছেন? গতকাল ম্যাচের পর বেতিসে সময়টা নিয়ে আন্তনির কণ্ঠে সন্তুষ্টিই ঝরল, ‘আমি সবচেয়ে বেশি খুশি নিজেকে খুঁজে পাওয়ায়, এখানে এসে নিজেকে খুঁজে পেয়েছি আমি। আসার পর থেকে যে স্নেহ-ভালোবাসা পাচ্ছি, সেটার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। এখানে আমি খুশি। আমার সব চিন্তাভাবনা এই মুহূর্তে বেতিসকে ঘিরে। এই শহরে, এই ক্লাবে প্রতিটা দিন খুব ভালো কাটছে। এভাবেই চলুক!’
বেতিসের সিইও রামন আলারকন অবশ্য গত মাসেই জানিয়ে দিয়েছেন, বেতিস আন্তনিকে আগামী মৌসুমেও পেতে চায়। ২০২৫-২৬ মৌসুমেও আন্তনিকে ধারে আনার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্নে আলারকন কাদেনা সের রাদিওতে বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, আমার মনে হয় করা যাবে। সম্ভাবনা আছে, তাহলে চেষ্টা করব না কেন!’
ইউনাইটেডে আন্তোনির চুক্তি ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত। তার আগে ধারের বাইরে পাকাপাকিভাবে আন্তনিকে পেতে চাইলে বেতিসকে – বা অন্য যেকোনো আগ্রহী দলকেই – ইউনাইটেডের সঙ্গে দরকষাকষিতে যেতে হবে। বলাবাহুল্য, বেতিসে আন্তনির পারফরম্যান্স তাঁর বাজারমূল্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।