ম্যাচের নায়ক হতে পারতেন থিবো কোর্তোয়া। চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে আর্সেনালের ঘরের মাঠ এমিরেটসে ইংলিশ ক্লাবটির দাপটের মধ্যেও একের পর এক দুর্দান্ত সেভ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দিনটা যে ছিল ডেকলান রাইসের। চ্যাম্পিয়নস লিগ ইতিহাসে এর আগে যা কেউ করতে পারেননি, সেটাই করেছেন ইংলিশ মিডফিল্ডার।
প্রথম ফুটবলার হিসেবে ইউরোপ সেরার মঞ্চে নকআউটে একই ম্যাচে সরাসরি ফ্রি-কিক থেকে জোড়া গোল করেছেন রাইস। গোলদুটো এতটাই নিখুঁত ছিল যে, কোর্তোয়ার আসলে কিছু করার ছিল না। রেয়াল মাদ্রিদ গোলকিপার ঝাঁপিয়েছিলেন বটে, কিন্তু রাইসের বুলেট গতির বাঁকানো মাপা শট ঠেকাতে তা যথেষ্ট ছিল না।
রাইসের জোড়া গোলের সঙ্গে মিকেল মেরিনোর গোলে মাদ্রিদকে বিধ্বস্ত করে আর্সেনাল ম্যাচটা জিতে নিয়েছে ৩-০ ব্যবধানে। তাতে সেমিফাইনালে ওঠার পথে অনেকটা এগিয়ে গেল মিকেল আর্তেতার দল।
গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর মাদ্রিদ গোল তিনটি হজম করেছে দ্বিতীয়ার্ধে ১৭ মিনিটের ব্যবধানে। কোর্তোয়া বাধা হয়ে না দাঁড়ালে গোলের সংখ্যাটাও আরও বড় হতে পারত! এমন বেহাল পারফরম্যান্স উপহার দেওয়ার দিনে মাদ্রিদের মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গার শেষ মুহূর্তের লাল কার্ড।
ম্যাচজুড়ে মাদ্রিদ কতটা খাবি খেয়েছে, সেটা পরিসংখ্যানেও স্পষ্ট। বল দখলের লড়াইয়ে দুদল কাছাকাছি পর্যায়ে (আর্সেনাল ৫৩%, মাদ্রিদ ৪৭%) থাকলেও পরিণত আক্রমণ কিংবা শটে অনেকটা এগিয়ে ছিল আর্সেনাল। ইংলিশ ক্লাবটির ১২ শটের ১১টিই ছিল গোলমুখে, আর এমবাপ্পে-ভিনিসিয়ুসরা আর্সেনালের গোলমুখে শট রাখতে পেরেছেন মোটে ৩টি!
অথচ ম্যাচের প্রথম মিনিটেই আর্সেনালের গোলমুখে একটা শট নিয়েছিলেন এমবাপ্পে। একটু পরেই ভিনিসিয়ুস বিপজ্জনকভাবে ঢুকে পড়েছিলেন বক্সে। তবে ম্যাচের সময় যত গড়িয়েছে, নিয়ন্ত্রণ ধীরে ধীরে নিজেদের হাতে নিয়েছে ইংলিশ ক্লাবটি।
এর মধ্যে ২১ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের বাঁকানো শট অল্পের জন্য পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। ১০ মিনিট পর জুড বেলিংহামের পাস ফাঁকায় পেয়েও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি এমবাপ্পে।
মাদ্রিদের মতো ৩৭ মিনিটে সহজ সুযোগ মিস করে আর্সেনালও। সাকার ক্রস সুবিধাজনক জায়গায় পেয়েও বলে পা লাগাতে পারেননি রাইস। প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে অবশ্য গোলের খুব কাছে গিয়েছিলেন ইংলিশ মিডফিল্ডার। তবে রাইসের হেড ঝাঁপিয়ে ঠেকান কোর্তোয়া। ফিরতি বলে গাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি শট নিয়েছিলেন, সেটাও রুখে দেন মাদ্রিদের বেলজিয়ান গোলকিপার। এতে প্রথমার্ধ থেকে যায় গোলহীন।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের সব রং কেড়ে নেন রাইস। ৫৮ মিনিটে বক্সের বাইরে বুকায়ো সাকাকে ফাউল করলে ফ্রি-কিক পায় আর্সেনাল। সেখান থেকে কাছের পোস্টে জোরের ওপর শট নেন রাইস। কোর্তোয়া ঝাঁপিয়েও বলের নাগাল পাননি। তাতে রাইস পেয়ে যান পেশাদার ফুটবলে প্রথম ফ্রি-কিক গোলের দেখা।
৬৭ মিনিটে আবারও গোলের খুব কাছে চলে গিয়েছিল আর্সেনাল। তবে এ যাত্রায় কোর্তোয়ার ডাবল সেইভের পর গোললাইন থেকে বল ক্লিয়ার করে করে মাদ্রিদকে বিপদমুক্ত করেন আলাবা। পরের মিনিটে আবারও গোললাইন সেভে ব্যবধান বাড়াতে দেননি বেলিংহাম।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি মাদ্রিদের। ৭০ মিনিটে আবারও সরাসরি ফ্রি-কিক থেকে গোল করেন রাইস। তাতে চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম ফুটবলার হিসেবে নকআউটে ফ্রি-কিক থেকে জোড়া গোল করার কীর্তিতে নাম উঠল ইংলিশ মিডফিল্ডারের। রাইসের ফ্রি-কিক দুটো এতটাই দৃষ্টিনন্দন ছিল যে, কোনটার চেয়ে কোনটা বেশি সুন্দর- একটা বেছে নেওয়াই বরং কঠিন!
রাইসের দ্বিতীয় গোলের ৫ মিনিট পর লুইস স্কেলির পাসে বক্সের মাথা থেকে দারুণ এক স্পর্শে স্কোরলাইন ৩-০ করেন মেরিনো। শেষ দিকে আর তেমন বড় সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কোনো দলই। এর মধ্যে যোগ করা সময়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন কামাভিঙ্গা। অবশ্য প্রথম হলুদ কার্ড দেখাতেই নিশ্চিত হয়েছিল, আগামী ১৬ এপ্রিল ফিরতি লেগে মাঠে নামা হবে না ফরাসি তরুণ মিডফিল্ডারের।