ম্যাচ শেষে হতাশায় মাঠেই শুয়ে পড়েন উনাই এমেরি। অ্যাস্টন ভিলার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেস কী করবেন, সেটাই যেন বুঝতে পারছিলেন না। কিছুক্ষণ মাঠেই বসে থাকলেন। মার্তিনেসের চোখ-মুখের অভিব্যক্তিতে হতাশার সঙ্গে মিশে ছিল আক্ষেপ।
সে সময় কি ম্যাচের ১১তম মিনিটে করা ভুলটার কথা ভাবছিলেন মার্তিনেস? যে ভুলের কারণে ফরাসি ক্লাব পারি সাঁ জার্মেইয়ের (পিএসজির) বিপক্ষে গতকাল চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে ৩-২ গোলে জিতেও হতাশায় পুড়তে হলো অ্যাস্টন ভিলাকে। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ গোলে জিতে যে ভিলাকে বিদায় করে দিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে চলে গেছে পিএসজি।
দুই লেগ মিলিয়ে এক গোলের ব্যবধানে হার, দল একটা গোল খেয়েছে তাঁরই ভুলে - এ সব কিছু এমন ম্যাচে হলো, যেখানে মার্তিনেস আগে থেকেই ছিলেন লাইমলাইটে। ছিলেন না বলে বলা উচিত নিজেকে নিয়ে এসেছেন। পিএসজি ফ্রান্সের দল, ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে মার্তিনেসের আর্জেন্টিনা - দুইয়ে মিলিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগের আগেই যে পিএসজিকে খুঁচিয়ে বাজার গরম করে ফেলেছিলেন মার্তিনেস! কিন্তু চটাং চটাং কথার পর তাঁর ভুলেই দল হলো চিৎপটাং!
আগের লেগে মার্তিনেস দারুণ খেলেছেন, তবু পিএসজির মাঠ থেকে ৩-১ ব্যবধানে হেরে যায় অ্যাস্টন ভিলা। এরপর গতকাল ঘরের মাঠে শুরুতে পিছিয়ে পড়ে আর্জেন্টাইন গোলকিপারের এক ভুলের কারণে।
ম্যাচের শুরুর দিকে ভিলার টানা আক্রমণের মধ্যে ১১ মিনিটে প্রতিআক্রমণে উঠে বাঁ প্রান্ত থেকে ক্রস করেছিলেন পিএসজি লেফট ব্যাক নুনো মেন্দেস। বক্সের ভেতর আসা সে ক্রস ধরতে মার্তিনেস এগিয়ে যাবেন নাকি যাবেন না- এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন আর্জেন্টাইন গোলকিপার। দ্বিধা সরিয়ে স্লাইড করেছিলেন বটে, কিন্তু বলটা হাতে রাখতে পারেননি মার্তিনেস। ভিলা গোলকিপারের হাত থেকে বল বেরিয়ে যায়। সুযোগ পেয়ে ছুটে এসে জোরাল শটে ভিলার জালে বল জড়ান আশরাফ হাকিমি।
মার্তিনেসের ভুলে পিছিয়ে পড়া, আর এক গোলের আক্ষেপেই চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায়- এর দায়টা কি মাঠে বসে নিজেকেই দিচ্ছিলেন মার্তিনেস?
সেটা জানার অবশ্য সুযোগ নেই। তবে গোলকিপারের ভুলে গোল হজমের পর ম্যাচের ২৭ মিনিটে আবারও গোল খেয়ে বসে ভিলা। এবার উসমান দেম্বেলের পাসে স্কোরলাইন ২-০ করেন মেন্দেস। দুই লেগ মিলিয়ে ততক্ষণে ৫-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা পিএসজি সেমির সুবাস পাওয়া শুরু করেছে। অন্যদিকে বিপরীত অবস্থা ভিলার।
এ পরিস্থিতিতে ম্যাচের ৩৪ মিনিটে ইউরি তিয়েলেমানের গোলে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দেয় ইংলিশ ক্লাবটি। বাঁ প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢুকে জোরাল শট নিয়েছিলেন বেলজিয়ামের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। সেটা পিএসজি ডিফেন্ডার উইলিয়ান পাচোর গায়ে লেগে দিক বদলে আশ্রয় নেয় জালে। প্রথমার্ধে আর কোনো গোল না হওয়ায় ২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ভিলা।
দ্বিতীয়ার্ধের ১০ মিনিট যেতেই আবারও গোলের দেখা পায় ইংলিশ ক্লাবটি। এবার ডি বক্সের বাইরে থেকে জোরাল শটে স্কোরলাইন ২-২ করেন স্কটিশ মিডফিল্ডার ম্যাকগিন। দু মিনিট পরেই রাশফোর্ডের কাটব্যাকে ভিলাকে এগিয়ে (৩-২) দেন কনসা।
দুই লেগ মিলিয়ে ব্যবধান তখন ৫-৪, ম্যাচের আধা ঘণ্টা বাকি...ভিলার সমর্থকদের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন তখন ডানা মেলেছে। কিন্তু সে পথে সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ান জিয়ানলুইজি দোনারুম্মা। বাকি সময়ে বেশ কয়েকবার গোলের খুব কাছে চলে গিয়েছিল ভিলা। কিন্তু পিএসজির ইতালিয়ান গোলকিপারের দারুণ সব সেভে আর জালে বল জড়ানো হয়নি তাদের। এতে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতেও হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় উনাই এমেরির দলকে।
এ বছর বিদায় নিলেও পরের বছর আবারও চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার প্রত্যাশা এখনই জানিয়ে রেখেছেন ভিলা কোচ। বর্তমানে প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট তালিকায় সপ্তম স্থানে আছে ভিলা। আগামী মৌসুমে ইংল্যান্ড থেকে পাঁচটি দল যাবে চ্যাম্পিয়নস লিগে, ফাঁকেফোকরে সংখ্যাটা সাতও হতে পারে - সেটা গত সপ্তাহেই নিশ্চিত হয়েছে। পরের মৌসুমে সরাসরি চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা পেতে চাইলে তাই সেরা পাঁচে থেকে মৌসুম শেষ করতে হবে ভিলাকে।
আপাতত সেদিকেই নজর দিচ্ছেন এমেরি, ‘চ্যাম্পিয়নস লিগে আমরা যা করেছি, তাতে আমি গর্বিত। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আবারও ইউরোপের মঞ্চে খেলা। আর এখানে সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় চ্যাম্পিয়ন লিগেই। (প্রিমিয়ার লিগে) আমাদের সামনে যে ছয়টি ম্যাচ আছে, আমাদের চেষ্টা থাকবে আবারও চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নেওয়ার।’