ম্যাচটা সান্তিয়াগো বার্নাব্যু বলেই যা একটু আশা ছিল, না হলে প্রথম লেগে ৩-১০ গোলে হেরে যাওয়ার পরই রেয়াল মাদ্রিদের সম্ভাবনা শেষ বলে ধরে নেওয়া উচিত ছিল। গতকাল চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে স্টেডিয়ামের ছাদ বন্ধ করে গ্যালারিতে গর্জন তুলে শেষ চেষ্টা করেছিল বার্নাব্যু। কিন্তু কার্লো আনচেলত্তি ও তাঁর শিষ্যদের তো সে চেষ্টা দেখাতে হবে!
একদিকে খেলোয়াড়দের মধ্যে ক্ষিপ্রতার অভাব, সে সঙ্গে কোচের ভুল কৌশল মিলিয়ে আর্সেনালের সঙ্গে গতকাল কখনোই মনে হয়নি পেরে ওঠবে মাদ্রিদ। ৩ গোলের ব্যবধান কমাবে কি, উলটো ঘরের মাঠেও ২-১ ব্যবধানে হেরে বসেছে ১৫ বারের চ্যাম্পিয়নরা। আর তাতে ৫-১ ব্যবধানের জয়ে ১৬ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে গানাররা।
মাদ্রিদকে গতকাল জিততে হলে আর্সেনালের চেয়ে অন্তত চারটি গোল করতে হতো কিন্তু কোচ আনচেলত্তির কৌশলে একটি গোল পেতেও কষ্ট হয়েছে। সেটাও এসেছে আর্সেনাল ডিফেন্ডার সালিবার ভুলে। বল নিয়ে কাকে দেবেন এই চিন্তা করতে করতেই ভিনিসিয়ুস এসে বলে কেড়ে নিয়ে জালে পাঠিয়ে দেন।
৬৭ মিনিটের এই গোলের আগেই ম্যাচে এগিয়ে গিয়েছিল আর্সেনাল। মাদ্রিদের রক্ষণের স্ট্রাকচারের খুঁত বের করে দেওয়া এক পাস থেকে সাকা আলতো চিপে গোল করেন ৬৫ মিনিটে। প্রথমার্ধে পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন এই সাকাই। প্রথমার্ধে মাদ্রিদও পেনাল্টি পেয়েছিল, কিন্তু ভিএআর দেখে অফসাইডের কারণে তা বাতিল করেন রেফারি।
ওই পেনাল্টি বা তার আগে পরের ৯০ মিনিট ধরে মাদ্রিদের গোলের কৌশল ছিল একের পর এক ক্রস করে যাওয়া। যে কৌশল দেখে বিস্মিত হয়েছেন সবাই। কারণ, একসময় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, গ্যারেথ বেল ও করিম বেনজেমার মতো হেডে দুর্দান্ত সব ফরোয়ার্ড থাকলেও এই মাদ্রিদে এমন কেউ নেই।
গত মৌসুমে ধারে খেলতে যাওয়া হোসেলুও হেডে ভালো ছিলেন বলে বেশ কিছু ম্যাচে ক্রস নির্ভর ফুটবল খেলে সাফল্য পেয়েছিল মাদ্রিদ। কিন্তু এই মৌসুমের দলের ভিনিসিয়ুস, এমবাপ্পে, রদ্রিগো বা বদলি নামা এন্দরিক ও ব্রাহিম কেউই হেডের জন্য উপযুক্ত নন। ম্যাচ নিয়ে এ নিয়ে খোদ থিবো কোর্তোয়া বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।
মাদ্রিদের মূল সমস্যা ছিল মাঝমাঠে। মাঝমাঠ দিয়ে খেলা গড়ার মতো কোনো মিডফিল্ডার ছিল না স্বাগতিকদের। অন্যদিকে পরিকল্পিত কৌশলে বারবার মাদ্রিদের রক্ষণকে নাকানিচুবানি খাইয়েছে আর্সেনাল। যোগ করা সময়ে মার্তেনেল্লির গোলে সব সন্দেহ দূর হয়েছে।
২০০৯ সালের পর নিজেদের প্রথম সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে পিএসজিকে পাচ্ছে আর্সেনাল। দুই দল এর আগে চ্যাম্পিয়নস লিগ না জেতায় এবারের ফাইনালে নতুন কোনো চ্যাম্পিয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেঁচে থাকবে।
প্রথম লেগে ফ্রি কিক থেকে দুর্দান্ত দুটি গোল করা ডেকলান রাইস গতকালও ম্যাচসেরা হয়েছেন মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ রেখে, ‘ক্লাবের জন্য বিশেষ এক রাত, ক্লাবের জন্য ঐতিহাসিক এক রাত। ওদের ব্যাপারে বলা হচ্ছিল ওরা সবসময় মৃত অবস্থা থেকে ফিরে আএ, আগে এতবার করেছে। কিন্তু প্রথম লেগের পর আমাদের নিজেদের ওপর অনেক বিশ্বাস ও আস্থা ছিল যে এখানেও জিতব।’
মাদ্রিদ অধিনায়ক লুকাস ভাসকেস ম্যাচ শেষ নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘ফুটবলীয় দিক থেকে আমরা কি যা করতে চেয়েছি তা পারিনি? হ্যাঁ। ওরা রক্ষণের দিক থেকে দারুণ গোছানো ছিল।’