মোহামেদ সালাহ? চেক!
ভার্জিল ফন ডাইক? চেক!
ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আরনল্ড? এখানে এখনো আটকে আছে লিভারপুল।
তিন তারকারই বর্তমান চুক্তি এই মৌসুমের শেষে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ছয় দিন আগে মো সালাহর সঙ্গে দুই বছরের জন্য চুক্তি নবায়নের ঘোষণা দিয়েছে লিভারপুল। আজ এল ফন ডাইকের চুক্তি নবায়নের ঘোষণা। সালাহর মতো দুই বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করেছেন আগামী জুলাইয়ে ৩৪-এ পা দিতে যাওয়া ডাচ ডিফেন্ডার।
লিভারপুল সমর্থকেরা এখন একটু ভারমুক্ত হয়ে নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন। এই সপ্তাহখানেক আগেও ভয় ছিল, তিনজনকেই মৌসুম শেষে মুফতে হারিয়ে না ফেলতে হয়! সালাহ তো জানুয়ারির পর থেকেই ক্ষণে ক্ষণে তাঁর লিভারপুল ছাড়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে আসছিলেন, ফন ডাইকও গত মার্চেই বলেছিলেন, তিনি মৌসুম শেষে লিভারপুলে থাকবেন কি না – এ ব্যাপারে তাঁর ‘কোনো ধারণাই নেই!’ তিনজনের মধ্যে দুজনকে নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যেই দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে যাওয়া এই মৌসুমে লিভারপুলের দায়িত্ব নেওয়া কোচ আরনে স্লটের জন্য বড় স্বস্তির। রক্ষণ আর আক্রমণে যথাক্রমে ফন ডাইক আর সালাহর মতো খেলোয়াড়ের বিকল্প খুঁজে পাওয়া তো আর মুখের কথা নয়!
চুক্তির মেয়াদের মতো সালাহ আর ফন ডাইকের বেতনও কাছাকাছি থাকছে। বেতনের অঙ্ক তো আর আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ক্লাব জানানোর কথা নয়, তবে গত সপ্তাহে সালাহর চুক্তি নবায়নের পর মিশরের সাংবাদিক ইসমায়েল মাহমুদ জানিয়েছিলেন, নতুন চুক্তিতে লিভারপুলে সপ্তাহে ৪ লাখ পাউন্ডের মতো বেতন পাবেন সালাহ। আজ ফন ডাইকের চুক্তি নবায়নের ঘোষণা আসার পর বিশ্বস্ত ইংলিশ সাংবাদিক ডেভিড অর্নস্টেইন জানিয়েছেন, ফন ডাইক নতুন চুক্তিতে সপ্তাহে ৪ লাখ পাউন্ড করেই পাবেন।
দ্য গার্ডিয়ান অবশ্য এই অঙ্কটার একটা বিশ্লেষণ দিয়েছে। লিভারপুলে আগের চুক্তিতে ফন ডাইকের বেতন সপ্তাহে ২ লাখ ২০ হাজার পাউন্ড বলে শোনা গিয়েছিল। এবার চুক্তি নবায়নের পর বলা হচ্ছিল, ফন ডাইক একই বেতনে চুক্তি নবায়ন করেছেন। তাহলে ২ লাখ ২০ হাজারের জায়গায় ৪ লাখ পাউন্ড হলো কীভাবে? দ্য গার্ডিয়ান জানাচ্ছে, এখনো ‘বেসিক’ বেতন সাপ্তাহিক ২ লাখ ২০ হাজার পাউন্ডের আশপাশেই থাকছে, তবে পারফরম্যান্সভিত্তিক বিভিন্ন বোনাসের অঙ্ক মিলিয়ে বেতন হয়ে যাবে ৪ লাখ পাউন্ডের কাছাকাছি।
ফন ডাইকের চুক্তি নবায়ন যে হচ্ছে, সে ইঙ্গিত অবশ্য এই মাসের শুরুর দিকেই পাওয়া গেছে। ফুলহ্যামের মাঠে লিভারপুলের ৩-২ গোলে হারের পর তাঁর চুক্তি নবায়ন নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে ফন ডাইক বলেছিলেন, ‘সবাই জানে আমি এই ক্লাবটাকে কতটা ভালোবাসি! দেখা যাক আগামী সপ্তাহে সামনে কী আসে!’
তা ফন ডাইকের ওই কথার প্রায় সপ্তাহ দুয়েক পর যখন চুক্তি নবায়নের ঘোষণাই এল, ফন ডাইক ক্লাবের ওয়েবসাইটে জানিয়েছেন তাঁর সন্তুষ্টির কথা, ‘গর্বের, আনন্দের অনুভূতি হচ্ছে। বিশ্বাস হচ্ছে না! ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত যে পথটা পাড়ি দিয়ে এলাম, সেই পথে আরও দুটি বছর এই ক্লাবটাতে কাটাতে পারা অসাধারণ। আমি খুব খুশি।’
তাঁর লিভারপুল ছেড়ে পিএসজি, বায়ার্ন মিউনিখ, এমনকি রেয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবে যাওয়ার গুঞ্জন বাতাসে ভেসেছে গত কয়েক মাসে। কিছু গুঞ্জনে হয়তো ভিত্তি ছিল, কিছু ছিল ভিত্তিহীন। তবু শেষ হওয়ার পথে আসা চুক্তি নবায়নে যখন দেরি হচ্ছে, সে মুহূর্তে এসব গুঞ্জন তো লিভারপুল ভক্তদের দুশ্চিন্তায় ফেলারই কথা। তবে চুক্তি নবায়নের পর ফন ডাইক বলেছেন, ‘আমার মনে এ নিয়ে কোনো সন্দেহই ছিল না যে এটাই আমার এবং আমার পরিবারের জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা। আমি লিভারপুলেরই একজন।’
লিভারপুলের মানুষকে ‘স্কাউজার’ বলা হয়, তাঁকেও সেভাবেই ডাকা হচ্ছে শুনে আনন্দের কথাও জানালেন ফন ডাইক, ‘ওইদিন কেউ একজন আমাকে বলছিল অ্যাডপ্টেড স্কাউজার। এমন কিছু শুনতে খুব ভালো লাগে, অসাধারণ একটা অনুভূতি দেয় সেটা।’
গত মৌসুম থেকেই লিভারপুলের অধিনায়ক ফন ডাইক এই মৌসুমে লিভারপুলের রক্ষণে দারুণ দাপট দেখিয়েছেন। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার শিরোপার চারটির পথেই ছুটতে থাকা লিভারপুল শেষ পর্যন্ত গত দুই মাসে তিনটির দৌড় থেকেই বাদ পড়েছে, তবে ক্লাব ইতিহাসের ২০তম লিগ শিরোপাটি এবার লিভারপুল পাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। সেটি পেয়ে গেলে ২০১৮ সালে লিভারপুলে যোগ দেওয়ার পর থেকে একটি করে লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগসহ ৭টি বড় শিরোপা জেতা ফন ডাইকের ট্রফি ক্যাবিনেটটার শোভা আরেকটু বাড়ে আর কী!