ম্যাচের ৭৯ মিনিটে বক্সের বাইরে বাঁ প্রান্তের টাচ-লাইনের কাছাকাছি অঞ্চলে বল পেয়েছিলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার সেখান থেকে দারুণ নৈপুণ্যে বক্সে ঢুকে ডান পায়ের শটে কাছের পোস্ট দিয়ে বল জালে জড়ান। বের্নাবাউয়ে রেয়াল মাদ্রিদ উদযাপন শুরু করলেও পরে ভিএআর যাচাইয়ে দেখা যায়, ওই আক্রমণের শুরুতে অফসাইড পজিশনে ছিলেন এনদ্রিক। বাতিল হয়ে যায় ভিনিসিয়ুসের গোল।
নির্ধারিত সময়ে আর গোল না হওয়ায় মনে হয়েছিল, অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে কার্লো আনচেলত্তির দলকে। তবে সে শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন ফেদেরিকো ভালভার্দে। যোগ করার সময়ের তৃতীয় মিনিটে দুর্দান্ত এক ভলিতে দূরের পোস্ট দিয়ে গোল করে বসেন উরুগুয়ে মিডফিল্ডার। তাতে বিলবাওকে ১-০ গোলে হারিয়ে পূর্ণাঙ্গ ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
এ জয়ে লা লিগার পয়েন্ট তালিকার শীর্ষদল বার্সেলোনার সঙ্গে ব্যবধান কমিয়ে আবারও ৪-এ নামিয়েছে মাদ্রিদ। বর্তমানে ৩২ ম্যাচে ৬৯ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আনচেলত্তির দল। আর সমান ম্যাচে বার্সার পয়েন্ট ৭৩।
স্কোরলাইনে অবশ্য গতকালের ম্যাচের পুরো চিত্র উঠে আসছে না। ম্যাচজুড়ে বলের দখল কিংবা আক্রমণে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখেয়েছে মাদ্রিদ। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে বিলবাও রক্ষণে আক্রমণের ঢেউ তোলে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু ভিনিসিয়ুস-বেলিংহামদের একের পর এক আক্রমণ ব্যর্থ হয়েছে বিলবাওয়ের রক্ষণ দৃঢ়তায়। রক্ষণ ভেদ করে সামনে এগিয়ে গেলে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান বিলবাও গোলকিপার উনাই সিমন। স্প্যানিশ এ গোলকিপার যেন পণ করেই নেমেছিলেন, কোনোভাবেই গোল করতে দেবেন না মাদ্রিদকে!
প্রথমার্ধে ৫ শট নেওয়া মাদ্রিদ দ্বিতীয়ার্ধে শট নিয়েছিল আরও ১৭টি, অন্যদিকে বিলবাও পুরো ম্যাচে শট নিয়েছে মোটে তিনটি। এমন দাপট দেখিয়েও প্রথমার্ধে গোলমুখ খুলতে পারেনি মাদ্রিদ।
লাল কার্ডজনিত নিষেধাজ্ঞায় আক্রমণভাগে কিলিয়ান এমবাপ্পে না থাকলেও ভিনিসিয়ুস সে অভাব বুঝতে দেননি। সব ঠিকঠাক হলেও মাদ্রিদ শুধু গোলটাই পাচ্ছিল না। ৭৯ মিনিটে ভিনিসিয়ুস একবার ডেডলক ভাঙলেন বটে, সেটাও বাতিল হলো অফসাইডে। এরপর ম্যাচের ভাগ্য ড্র-বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছিল। তবে ম্যাচ সমতায় শেষ হতে দেননি ভালভার্দে।
সাত মিনিট যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে ব্রাহিম দিয়াসের প্রচেষ্টা আটকে দেয় বিলবাও ডিফেন্স। কিন্তু বল পুরোপুরি ক্লিয়ার করতে পারেননি তারা। সে বল যায় ভালভার্দের সামনে। ডান পায়ের প্রথম স্পর্শে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পায়ের বাইরের অংশ দিয়ে দারুণ এক শট নেন উরুগুয়ে মিডফিল্ডার। দূরের পোস্ট দিয়ে জালে আশ্রয় নেওয়া ভালভার্দের ভলি চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না বিলবাও গোলকিপার সিমনের।
ম্যাচশেষে ভালভার্দের গোল প্রসঙ্গে মাদ্রিদ গোলকিপার থিবো কোর্তোয়া বলেছেন, ‘ফেদের (ভালভার্দের) শটটা অদ্ভুত, কিন্তু খুবই ভালো। গতকাল (শনিবার) অনুশীলনের সময় সে এভাবে শট নিয়েছিলেন। দেখে মনে হয়েছিল, বলটা দূরের পোস্টের বাইরে দিয়ে যাব। হঠাৎ করেই বলটা বাঁক নিয়ে এমনভাবে ঘুরে গেল, আম ভাবলাম, ও কীভাবে এমন শট নিল? ওর শটটা খুব তীক্ষ্ম, দ্রুত আর জোরালো হয়ে থাকে।’
কোর্তোয়া যোগ করেন, ‘অনুশীলনে প্রতি সপ্তাহে অনায়াসে দুই-একবার এমন গোল করে থাকে। আমরা ওকে বছরের পর বছর ধরেই বলে আসছি, “শট নাও, শট নাও।”’
ভালভার্দে সেই শটটাই নিলেন, সেটাও দলের সবচেয়ে প্রয়োজনের সময়। যে শটেই তিন পয়েন্ট নিশ্চিত হলো মাদ্রিদের। যোগ করা সময়ে ভালভার্দের গোলটা যেন এ বার্তাও দিল, মাদ্রিদ শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়ে না!