কোপা দেল রে-র ফাইনালের আগে রেফারি নিয়ে নাটকীয়টা চরমে রূপ নিয়েছে। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের রেফারিদের তালিকায় রিকার্দো দে বুর্গোচ বেনগোচেয়া এবং ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) পাবলো গনসালেস ফুয়ের্তেসের নাম দেখার পর থেকেই বিরক্ত রেয়াল মাদ্রিদ। লস ব্লাঙ্কোদের পক্ষ থেকে রেফারি বদলানোর আবেদন জানানো হলে সাড়া দেয়নি স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন (আরএফইএফ)।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বার্সেলোনার বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন বয়কট করে মাদ্রিদ। পাশাপাশি ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনেও অংশ নেননি কার্লো আনচেলত্তি ও লুকা মদ্রিদ। লস ব্ল্যাঙ্কোদের এমন কড়া অবস্থানের পর থেকে প্রশ্ন উঠতে থাকে, ফাইনালে বার্সার বিপক্ষে খেলবে তো মাদ্রিদ? স্প্যানিশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, এ ম্যাচ না খেলার ব্যাপারে ভাবছে আনচেলত্তির দল।
তবে সব শঙ্কা আর গুঞ্জন উড়িয়ে এক বিবৃতিতে মাদ্রিদ জানিয়েছে, বার্সেলোনার বিপক্ষে খেলতে নামবে তারা।
বিবৃতিতে মাদ্রিদ উল্লেখ করেছে, ‘আমাদের দল কখনোই আগামীকালের (শনিবারের) ফাইনাল ম্যাচ না খেলার কথা ভাবেনি। আমাদের ক্লাব মনে করে, যে ম্যাচটি বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ দেখবে,সে ম্যাচের ২৪ ঘণ্টা আগে নির্বাচিত রেফারিদের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য এমন একটি ক্রীড়া ইভেন্টকে কলঙ্কিত করতে পারে না। আমরা আমাদের সেসব সমর্থকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, যারা সেভিয়া ভ্রমণের কথা ভাবছেন এবং যারা ইতোমধ্যে আন্দাসুলিয়ার রাজধানীতে অবস্থান করছেন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ফাইনাল ম্যাচে নিযুক্ত রেফারিদের পক্ষ থেকে আমাদের ক্লাবের বিরুদ্ধে আবারও বিদ্বেষ ও শত্রুতার প্রকাশ ঘটেছে। এরপরও রেয়াল মাদ্রিদ বিশ্বাস করে, ফুটবলে মূল্যবোধই প্রাধান্য পাবে।’
বিবৃতির শেষ অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘রেয়াল মাদ্রিদ আশাবাদী, ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে আরএফইএফের দায়িত্বশীল এবং রেফারিং প্রতিষ্ঠান যথাযথ কাজ করবে এবং তারা যে ইনস্টিটিউশনের প্রতিনিধিত্ব করেন, সেটার সম্মান রক্ষার্থে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।’
রেফারি নিয়ে এতো হইচইয়ের শুরুটা ফাইনালে রেফারিদের নাম প্রকাশের পর থেকে। তালিকায় বেনগোচেয়া ও পাবলো গনসালেসের নাম দেখার পর নড়েচড়ে বসে মাদ্রিদ। অতীতে এ দুই রেফারির নেওয়া অনেক সিদ্ধান্ত মাদ্রিদের বিপক্ষে গেছে, এমন অভিযোগের জেরে এই দুই রেফারির নানান ভুলের ঘটনা একসঙ্গে করে রেয়াল মাদ্রিদ টিভিতে রিপোর্ট প্রকাশিত হতে থাকে।
এটি নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন রেফারিরা। রেফারিদের ওপর এমন ব্যক্তিআক্রমণের প্রভাব নিয়ে বলতে গিয়ে বেনগোচেয়া বলেন, ‘যখন আপনার ছেলে স্কুলে যায় আর লোকেরা বলে যে তার বাবা একজন চোর, এটা সত্যিই খুব কষ্টদায়ক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার ছেলেকে শিক্ষিত করার চেষ্টা করছি। ওকে বলি, ওর বাসা একজন সাধারণ ক্রীড়াবিদ আর সম্মানিত মানুষ। আমি চাই, আমার ছেলে আমাকে নিয়ে গর্ব করুক… আমাদের সবাইকে ভাবতে হবে, সমাজ হিসেবে আমরা কোথায় যেতে চাই। এটা খুব কঠিন।’
রেফারিদের নিয়ে করা রেয়াল মাদ্রিদ টিভির ওই অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে গনসালেস ফুয়ের্তে বলেছেন, ‘ভিডিওতে যা বলা হচ্ছে, তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সেটার পরিণাম কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে।’
সামাজিক যোগাযেগা মাধ্যমে অনেক হুমকি পাচ্ছেন উল্লেখ করে ফুয়ের্তে বলেছেন, ‘আমরা দেখছি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অচেনা লোকজন গালাগালি করছে, কোনো কারণ ছাড়াই হুমকি দিচ্ছে। ক্লাবের সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারও শুধুমাত্র ‘লাইক’ পাওয়ার জন্য আমাদের পেশাকে আক্রমণ করে একের পর এক পোস্ট দিয়ে যাচ্ছেন। এতে এমন একটা বিশ্বাস গড়ে উঠছে যে, আমরা আমাদের সিদ্ধান্তের প্রতি সৎ নই।’
তিনি আরও বলেন, ‘চুরির কথা বলে আপনি সমর্থকদের মধ্যে হতাশা ছড়াচ্ছেন, আর সেটার মূল্য দিতে হয় ছেলেমেয়েদের। কাউকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয়।’
তবে এমনটা যাতে না হয়, সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন ফুয়ের্তেস, ‘আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। এমনটা আর হতে দেওয়া যায় না। শিগগির আপনারা খবর পেতে পারেন, আমরা ইতিহাস গড়তে যাচ্ছি। কোনো সন্দেহ নেই, আমরা এতদিন সহ্য করেছি, আর সহ্য করব না।’
ফাইনালের আগে রেফারিদের এমন মন্তব্যকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করে রেয়াল মাদ্রিদ। এরপর ম্যাচ পূর্ব অনুশীলন ও সংবাদ সম্মেলন বয়কটের ডাক দেয়। যা শেষ পর্যন্ত ফাইনালে মাদ্রিদের অংশ না নেওয়ার গুঞ্জনের আগুনে ঘি ঢালে। সব গুঞ্জন উড়িয়ে মাদ্রিদ নিশ্চিত করছে, আজ রাতের ফাইনালে বার্সার বিপক্ষে খেলতে নামবে তারা।