ফাইনালের আগে রেফারি ইস্যুতে ম্যাচের উত্তাপ ছিল চরমে। রেফারি রিকোর্দো দে বুর্গোস বেনগোচেয়া ও ভিএআর রেফারি গনসালেস ফুয়ের্তেসকে নিয়ে আপত্তি জানিয়ে ম্যাচের আগে অনুশীলন, সংবাদ সংবাদ সম্মেলনসহ অন্যান্য সব আনুষ্ঠানিকতা বয়কট করে প্রতিবাদ জানিয়েছিল রেয়াল মাদ্রিদ। এমনকি দাবি জানিয়েছিল রেফারি বদলানোরও। লস ব্ল্যাঙ্কোদের সে আবেদনে সাড়া দেয়নি স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন (আরএফইএফ)।
উত্তেজনার পারদ শীর্ষে নিয়ে মাঠে গড়ানো কোপা দেল রে-র শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটাও হয়েছে আগুনে। প্রথমার্ধে পেদ্রির গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বার্সা। দ্বিতীয়ার্ধে ৭ মিনিটের ব্যবধানে কিলিয়ান এমবাপ্পে আর চুয়ামেনির গোলে ম্যাচের নাটাই নিজেদের হাতে নেয় মাদ্রিদ। তবে শেষদিকে ফেরান তোরেসের গোলে নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ শেষ হয় ২-২ সমতায়। অতিরিক্ত সময়ে মাদ্রিদের ভুলের সুযোগ নিয়ে দারুণ এক গোল করে করেন জুলস কুন্দে। তাতে ঘটনাবহুল ম্যাচটা ৩-২ ব্যবধানে জিতে নেয় বার্সেলোনা। কোপা দেল রেতে এটি বার্সার রেকর্ড ৩২তম শিরোপা!
কুন্দের ব্যবধান গড়ে দেওয়া গোলের পর নাটক কম হয়নি। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তে (১২৩ মিনিটে) ফ্রি কিকের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে মাদ্রিদের বেঞ্চ। এমবাপ্পে ফ্রি কিক না পাওয়ায় বেঞ্চ থেকে ক্ষোভে ফুসতে ফুসতে রেফারির প্রতি তেড়ে যাচ্ছিলেন মাদ্রিদ ডিফেন্ডার আন্তোনিও রুডিগার। জার্মান ডিফেন্ডারকে সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছিল মাদ্রিদের খেলোয়াড়-কোচিং স্টাফের সদস্যদের। এ সময় রেফারি বেনগোচেয়ার প্রতি কিছু একটা ছুঁড়ে মারেন রুডিগার।
এ ঘটনায় মাদ্রিদের জার্মান ডিফেন্ডারকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। শুধু রুডিগারকেই নয়, একটু পর লাল দেখান লুকাস ভাসকেসকেও। আর ম্যাচ শেষে রেফারির প্রতিবেদনে জানা গেছে, রেফারির দিকে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এগিয়ে যাওয়ায় শেষ মুহূর্তে লাল কার্ড দেখানো হয়েছে জুড বেলিংহামকেও।
শেষ দিকে উত্তেজনার পারদ চরমে নিয়ে যাওয়ার এ ম্যাচটা অবশ্য শুরু হয়েছিল সাদামাটা ভাবে। ম্যাচের একপেশে প্রথমার্ধ দেখে মনে হয়েছিল, আবারও বার্সার কাছে বড় ব্যবধানে হারতে যাচ্ছে মাদ্রিদ। চলতি মৌসুমে গতকালের আগে আরও দুবার মুখোমুখি হয়েছিল দুদল। এর মধ্যে গত অক্টোবরে লিগে মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করার পর জানুয়ারিতে স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে বার্সা জিতেছিল ৫-২ ব্যবধানে।
তারই ধারাবাহিকতায় ম্যাচের প্রথমার্ধে মাদ্রিদ রক্ষণকে নাচিয়ে ছাড়েন লামিন ইয়ামাল-রাফিনিয়া-পেদ্রিরা। এর মধ্যে ১৯ মিনিটে ইয়ামালের শট অল্পের জন্য পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। দু মিনিট পরেই রাফিনিয়ার ফ্রি-কিক থেকে কুন্দের জোরাল হেড দারুণ দক্ষতায় ঠেকান মাদ্রিদ গোলকিপার থিবো কোর্তোয়া।
তবে বেশিক্ষণ গোলমুখ অক্ষত রাখতে পারেননি বেলজিয়াম গোলকিপার। ম্যাচের ২৮তম মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে সতীর্থের বাড়ানো বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে বক্সে ঢোকেন ইয়ামাল। মাদ্রিদের চার ফুটবলারকে বোকা বানিয়ে কাটব্যাক করেন স্প্যানিশ তরুণ। অনেকটা ফাঁকায় থাকা পেদ্রি দৌড়ে এসে বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক শটে গোল করেন। কোর্তোয়া ঝাঁপিয়েছিলেন বটে, কিন্তু তাঁর কিছু করার ছিল না।
প্রথমার্ধের বাকিটা সময় বার্সা আক্রমণ চালিয়ে গেলেও আর কোনো গোল পায়নি হানসি ফ্লিকের দল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে এমবাপ্পে মাঠে নামার পর বদলে যায় দৃশ্যপট। ফরাসি তারকার সৌজন্যেই ম্যাচেও ফেরে মাদ্রিদ। ম্যাচের ৭০ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ফ্রি-কিকে স্কোরলাইন ১-১ করেন এমবাপ্পে। এর ৭ মিনিট পর চুয়ামেনির হেডে এগিয়েও যায় মাদ্রিদ।
তবে লিড ধরে রাখতে পারেনি লস ব্ল্যাঙ্কোরা। ম্যাচের ৮৪ মিনিটে ইয়ামালের দারুণ এক পাসে এগিয়ে আসা কোর্তোয়াকে ফাঁকি দিয়ে গোল করে বসেন ফেরান তোরেস। ম্যাচের স্কোরলাইন তখন ২-২। যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে পেনাল্টি পেয়েছিল বার্সা। তবে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন মাদ্রিদের খেলোয়াররা। ভিএআর যাচাইয়ে অবশ্য গোলটা বাতিল হয়ে যায়। উল্টো হলুদ কার্ড দেখেন রাফিনিয়া।
তাতে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে ১১৬ মিনিটে কুন্দের সেই ব্যবধান গড়া গোল। সেটাও এসেছে মাদ্রিদের ভুলে। নিজেদের অর্ধে ব্রাহিম দিয়াসের উদ্দেশ্যে পাস দিয়েছিলেন লুকা মদ্রিচ। কিন্তু সেটা দিয়াসের কাছে যাওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণে নেন কুন্দে। সেখান থেকেই দারুণ এক শটে বার্সার শিরোপা নিশ্চিত করেন ফরাসি ডিফেন্ডার।
কুন্দের ওই গোলের পর ম্যাচে ফিরতে জোর প্রচেষ্টা চালায় মাদ্রিদ। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। উল্টো শেষ দিকে হতাশা ঝাড়তে গিয়ে লাল কার্ড দেখেন মাদ্রিদের তিন ফুটবলার। অন্যদিকে শিরোপা উৎসবে মাতে বার্সা।
ম্যাচ শেষে লাল কার্ড প্রসঙ্গে আনচেলত্তি বলেছেন, ‘আমি জানি না ঠিক কী হয়েছিল। আমাকে সেটা দেখতে হবে। আমি শুধু বলতে পারি, রুডিগার অসাধারণ খেলেছে। যতক্ষণ সুযোগ পেয়েছে (তুলে নেওয়ার আগে), ততক্ষণ সে সর্বোচ্চটা দিয়ে খেলেছে।’
দ্বিতীয়ার্ধে এমবাপ্পে মাঠে নামার পর গতি পেয়েছিল মাদ্রিদ। ফরাসি তারকাকে কেন শুরু থেকে খেলাননি, সেটার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন আনচেলত্তি, ‘এমবাপ্পে ৯০ মিনিট খেলার মতো অবস্থায় ছিল না। আমি ওকে দ্বিতীয়ার্ধে খেলানোই ভালো মনে করেছি। সে সময় ম্যাচের গতি কমে গিয়েছিল।’