শেষ মুহূর্তে এসে এভাবে ধাক্কা খেল ব্রাজিল!
কার্লো আনচেলত্তির রেয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে ব্রাজিলের দায়িত্ব নেওয়া একেবারে নিশ্চিতই ছিল। কিন্তু আজ ব্রাজিলের গ্লোবোএস্পোর্তে ও স্পেনের মার্কা জানাচ্ছে, রেয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে চুক্তির বাকি সময়ের টাকা নিয়ে ঝামেলার জেরে ব্রাজিলকেই ‘না’ বলে দিয়েছেন আনচেলত্তি!
চলতি মৌসুম শেষে রেয়াল মাদ্রিদের দায়িত্ব ছাড়ছেন আনচেলত্তি, আগামী জুনেই ব্রাজিল জাতীয় দলের সঙ্গে নতুন পথচলা শুরু করতে যাচ্ছেন এ ইতালিয়ান কোচ- দিন তিনেক আগে এমন খবর দিয়েছিল স্প্যানিশ বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম দ্য অ্যাথলেটিক। ক্রীড়া বিষয়ক আরেক সংবাদমাধ্যম ইএসপিএন জানিয়েছিল, আগামী মে মাসে লা লিগায় মাদ্রিদের শেষ ম্যাচটার পরই বর্তমান ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করবেন আনচেলত্তি।
এমন খবর নিশ্চিতভাবেই স্বস্তি দেওয়ার কথা ব্রাজিল সমর্থকদের। অনেকদিন ধরে একজন হাইপ্রোফাইল কোচের খোঁজে লেগে থাকা সেলেসাওদের ডাগআউটে অবশেষে তেমন কাউকে পাওয়া যাচ্ছে!কিন্তু গতকালের খবরে তাঁদের হতাশই হতে হচ্ছে।
মার্কার প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ব্রাজিলের সঙ্গে একপ্রকার মৌখিক সম্মতি দিয়েছিলেন আনচেলত্তি। বাকি ছিল শুধু চুক্তি স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতা। সেটাও সেরে ফেলতে গত সোমবার লন্ডনে উড়াল দিয়েছিলেন বর্তমানে মাদ্রিদের ডাগআউট সামলানো এ ইতালিয়ান। কিন্তু সেদিন চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি। এজেন্টরা আশা করেছিলেন, মঙ্গলবার চুক্তিটা সম্পন্ন হবে।
কিন্তু মার্কা জানাচ্ছে, আনচেলত্তি তাদের পাকাপাকিভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি শেষ পর্যন্ত ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনের প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারছেন না। এ ব্যাপারে আনচেলত্তি সরাসরি সিবিএফ সভাপতি এদনালদো রদ্রিগেসের সঙ্গে কথাও বলেছেন।
অথচ মার্কা একদিন আগেও জানিয়েছিল, ব্রাজিলের কোচ হতে শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি আনচেলত্তির। তাহলে একদিনের ভেতরে কী এমন ঘটল, যা পরিস্থিতিকে ১৮০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ঘুরিয়ে দিয়েছে?
এটার ব্যাখ্যাও দিয়েছে মার্কা। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আনচেলত্তিকে জুন থেকেই চাচ্ছিল ব্রাজিল। জুনে প্যারাগুয়ে ও চিলির বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দুটি ম্যাচ আছে সেলেসাওদের। সিবিএফ চাচ্ছিল, সে দুটি ম্যাচে ব্রাজিলের ডাগআউটে থাকবেন আনচেলত্তি। ব্রাজিল ফেডারেশন অনেকটা নিশ্চিত ছিল, জুনের আগেই মাদ্রিদের দায়িত্ব ছাড়বেন ইতালিয়ান কোচ।
কিন্তু এর মধ্যে রেয়াল মাদ্রিদ প্রথম দফায় বাধ সাধে জুন-জুলাইয়ে হতে যাওয়া ক্লাব বিশ্বকাপের দিকে চোখ রেখে। মে মাসে আনচেলত্তিকে ছাঁটাই করে ক্লাব বিশ্বকাপে রাউল গনসালেস বা আলভারো আরবেলোয়াদের মতো কাউকে দিয়ে কাজ চালানোর কথা মাদ্রিদ ভাবছে বলে শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু ব্রাজিলের সঙ্গে যখন আলাপ গুছিয়ে আনছিলেন আনচেলত্তি, মাদ্রিদের পরিকল্পনা বদলে যায়। তারা ক্লাব বিশ্বকাপেও ডাগআউটে আনচেলত্তিকে রাখতে চায় বলে শোনা যায়।
আনচেলত্তি তখন লন্ডনে গিয়ে সিবিএফের এজেন্টদের জানিয়ে দেন, তিনি আগস্টে ব্রাজিলের দায়িত্ব নিতে চান। কিন্তু জুনেই আনচেলত্তিকে পাওয়া যাবে ধরে নিয়ে বসে থাকা সিবিএফ প্রতিনিধিদের কাছে শর্তটা বিস্ময়কর ঠেকে।
এর পাশাপাশি আর্থিক ব্যাপার-স্যাপার পরিস্থিতি জটিল করে তুলছে। মাদ্রিদে আনচেলত্তির চুক্তি ২০২৬ পর্যন্ত, তাঁকে এখন ছাঁটাই করলেও ক্লাব ইতিহাসের এমন একজন কিংবদন্তি কোচকে চুক্তির বাকি সময়ের টাকা দিয়ে সম্মান জানাবে রেয়াল মাদ্রিদ - এমনটাই মাঝে শোনা গিয়েছিল। কিন্তু ব্রাজিলের সঙ্গে আনচেলত্তির চুক্তি পাকাপাকি হয়ে যাচ্ছে শুনে 'ইউ-টার্ন' নেন মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেস।
ব্রাজিল ও সিবিএফ সূত্রের বরাতে মার্কা জানিয়েছে, মাদ্রিদের কাছে ৪০ লাখ ইউরো ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিলেন আনচেলত্তি, কিন্তু সে দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে মাদ্রিদ। স্প্যানিশ ক্লাবটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আনচেলত্তি ক্লাব ছাড়তে চাইলে চুক্তির এক বছরের অর্থ ছাড় দিতে হবে। ইএসপিএন-ও তেমনটাই জানাচ্ছে।
এতে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে যায়। তবে আনচেলত্তিকে আপাতত সেদিকে মন না দিয়ে লিগের বাকি ম্যাচগুলো ও ক্লাব বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবতে বলেছে মাদ্রিদ- এমনটাই উঠে এসেছে ইএসপিএনের প্রতিবেদনে।
মার্কা জানিয়েছিল, সিবিএফের সঙ্গে চুক্তি করতে লন্ডনে গিয়েছিলেন আনচেলত্তি। আর ইএসপিএন জানাচ্ছে, সিবিএফ প্রতিনিধিরা এখন মাদ্রিদেই আছেন। সেখানে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে একটা সমাধানের জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে মার্কার দাবি, খুব অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে আপাতত ব্রাজিলের কোচ হওয়ার সম্ভবনা নেই আনচেলত্তির।
তাহলে মাদ্রিদ ছেড়ে কোথায় যাবেন আনচেলত্তি? সেটা সম্পর্কেও একটা ধারণা দিয়েছে মার্কা তাদের প্রতিবেদনে বলা জানানো হয়েছে, সৌদি আরবের একটি ক্লাব থেকে বড় অঙ্কের প্রস্তাব পেয়েছেন আনচেলত্তি। সে প্রস্তাবের অঙ্কটাও চোখ কপালে তোলার মতো। বার্ষিক প্রায় ৫ কোটি ইউরো। বাংলাদেশি অর্থে যা ৬৯০ কোটিরও বেশি। এমন লোভনীয় প্রস্তাবে না বলাটা সহজ হওয়ার কথা নয় আনচেলত্তির জন্য!
তবে আসলেই ব্রাজিল-আনচেলত্তির চুক্তির সম্ভাবনা আসলেই শেষ, নাকি এসব খবরও চুক্তির সঙ্গে জড়িত একেক পক্ষের চাল - সেটা সময় বলবে।