দুই বছর আগেও ব্রাজিল তাঁকে কোচ করে পেতে চেয়েছিল, তখন বলে-পায়ে হয়নি। শেষ পর্যন্ত আজ ব্রাজিলের অপেক্ষার অবসান হয়েছে। রেয়াল মাদ্রিদ এখনো তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাতিলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি, তবে তার আগেই ব্রাজিলের ফুটবল ফেডারেশন (সিবিএফ) আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে – ব্রাজিলের কোচ হতে যাচ্ছেন কার্লো আনচেলত্তি!
তা এত অপেক্ষা আর নাটকের পর যাঁকে পাচ্ছে, তাঁর বেতন কত দেবে ব্রাজিল? সেটি ফাঁস করে দিয়েছে ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম গ্লোবোএস্পোর্তে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত চুক্তিতে ব্রাজিলের কোচ হিসেবে বছরে আনচেলত্তি পাবেন ১ কোটি ইউরো! বাংলাদেশি মুদ্রায় বছরে ১৩৫ কোটি টাকার কাছাকাছি।
ফুটবলে খেলোয়াড়দের তুলনায় কোচদের বেতন নস্যিই, সেখানেও আবার ক্লাব ফুটবলের তুলনায় জাতীয় দলের কোচদের বেতন তো ‘৫০০ টাকা কিছুই না’ মনে হওয়ার মতো। সেদিক থেকে দেখলে আনচেলত্তির বেতনের অঙ্কটা চোখ কপালে তোলার মতোই!
তুলনাটা যদি টানা হয় ব্রাজিলের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এবং বর্তমানে বিশ্বকাপ ও টানা দুবারের কোপা আমেরিকাজয়ী আর্জেন্টিনার কোচের বেতনের সঙ্গে, আনচেলত্তির বেতনটাকে আকাশছোঁয়া মনে হবে। আর্জেন্টিনায় স্কালোনির বেতন যে এখন ২৫ লাখ ইউরো! আনচেলত্তি ব্রাজিলে পাবেন এর চার গুণ! আর ব্রাজিলে এর আগের কোচ দরিফাউ জুনিয়রের বেতন ছিল বছরে ৪০ লাখ ইউরো।
শুধু জাতীয় দলের হিসেব করলে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বেতনও আনচেলত্তিরই। গত বছরের অক্টোবরে সৌদি আরবের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া রবের্তো মানচিনি পেতেন বছরে ২ কোটি ইউরোর মতো। তিনি দায়িত্বটা ছাড়ার পর এতদিন জাতীয় দলের কোচদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেতনভোগী ছিলেন ইংল্যান্ড কোচ টমাস টুখেল – বছরে তাঁর বেতন প্রায় ৬০ লাখ ইউরো।
ব্রাজিলে শুধু বেতনই নয়, বড় অঙ্কের প্রণোদনাও থাকছে আনচেলত্তির জন্য। গ্লোবোএস্পোর্তে লিখেছে, ২০২৬ বিশ্বকাপ জিততে পারলে বোনাস হিসেবে আরও ৫০ লাখ ইউরো পাবেন ইতালিয়ান কোচ।
সাধারণত ক্লাব ফুটবল ছেড়ে জাতীয় দলে গেলে কোচদের বেতনের দিক থেকে কিছুটা ছাড় দিতে হয়। টুখেল যেমন, বায়ার্ন মিউনিখে পেতেন বছরে ৭০ লাখ ইউরো, ইংল্যান্ড দলে পাচ্ছেন তার চেয়ে ২০ লাখ ইউরো কম। আনচেলত্তিরও ব্রাজিলের কোচ হতে সম্মতি দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা বড় বাধা ছিল আর্থিক ক্ষতি। রেয়াল মাদ্রিদ ছাড়লে তাঁকে সৌদি আরবের আল হিলালও কোচ হিসেবে পেতে আগ্রহী ছিল, গুঞ্জন সত্যি হলে সেখানে তাঁর বেতন হতো বছরে বছরে ১৫ কোটি ইউরো!
সেদিক থেকে ‘অপরচুনিটি কস্ট’ অনেক বেশিই হচ্ছে আনচেলত্তির। তবে ক্লাব ফুটবল থেকে জাতীয় দলে গিয়ে বেতনের অঙ্কে ছাড় তাঁকে দিতে হচ্ছে না। গ্লোবোএস্পোর্তের খবর, রেয়াল মাদ্রিদেও আনচেলত্তির বেতনের অঙ্কটা বছরে প্রায় ১ কোটি ইউরোই ছিল।
এত বেশি বেতনে আনচেলত্তিকে টানার পেছনে ব্রাজিলের উদ্দেশ্য বিশ্বব্যাপী একটা বার্তা ছড়িয়ে দেওয়াও বটে। সিবিএফ সভাপতি এদনালদো রদ্রিগেজ জাতীয় দলের কোচ নিয়োগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া বিবৃতিতে বলেছেন, ‘কার্লো আনচেলত্তিকে ব্রাজিলের কোচ হিসেবে নিয়ে আসা একটা কৌশলগত চালের চেয়েও বেশি কিছু। এটা বিশ্বের প্রতি একটা বিবৃতি যে আমরা আবার পোডিয়ামে শীর্ষস্থানটা দখলে নিতে বদ্ধপরিকর। তিনি ইতিহাসের সেরা কোচ আর এখন তিনি দুনিয়ার সেরা দলটির দায়িত্বে। একসঙ্গে মিলে আমরা ব্রাজিলের ফুটবলে নতুন একটা গৌরবের অধ্যায় লিখব।’
সে অধ্যায়ে আনচেলত্তিকে নেমে পড়তে হচ্ছে শিগগিরই। জুনে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে যে ব্রাজিলের দুটি ম্যাচ আছে – ৫ জুন ইকুয়েডরের বিপক্ষে, এর পাঁচ দিন পর প্রতিপক্ষ প্যারাগুয়ে।
গ্লোবোএস্পোর্তের খবর, এই দুই ম্যাচের দল ঘোষণার ব্যাপারে শিগগিরই সিবিএফের ছেলেদের জাতীয় দলের জেনারেল কো-অর্ডিনেটর রদ্রিগো কায়েতানোর সঙ্গে বসবেন আনচেলত্তি। আগামী ২৬ মে-ই আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রাজিলের কোচ হিসেবে আনচেলত্তি কাজ শুরু করে দেবেন বলে জানাচ্ছে গ্লোবোএস্পোর্তে।