আগের ছয়বারের মধ্যে চারবার ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ, প্রথম তিনবারই ভাঙা হৃদয় নিয়ে ফিরতে হয়েছিল। ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো আয়োজিত টুর্নামেন্টে ফাইনালে বাংলাদেশ হেরেছিল নেপালের কাছে, এর পরের দুবার – ২০১৯ ও ২০২৩ সালে ফাইনালে হারটা ভারতের কাছে। নিজেদের চতুর্থ ফাইনালে এসে, গত বছর স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ জেতে বাংলাদেশ।
এবার আবার যখন সাফের ফাইনালের সমীকরণ এল বাংলাদেশের সামনে, সেমিফাইনালে আজ প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল নেপাল। ভারতের অরুণাচল প্রদেশে আজ দারুণ জমে ওঠা সেই ম্যাচে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপার এক ধাপ দূরত্বে চলে গেছে বাংলাদেশ। সে পথে ফাইনালে বাংলাদেশের বাধা সেই ভারতই। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেছে ভারতও।
এ নিয়ে সাতবার আয়োজিত অনূর্ধ্ব-১৯ সাফে আগের ছয়বারে শিরোপা ঘুরেফিরে বাংলাদেশ, ভারত আর নেপালের ঘরেই গেছে। প্রথম দুবার নেপাল, এর পরের তিনবার ভারত, আর সর্বশেষবারে বাংলাদেশ। এবার শিরোপা কার ঘরে উঠবে – বাংলাদেশ না ভারত, সে উত্তর মিলবে আগামী পরশু, বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় হতে যাওয়া ফাইনালে।
এর আগে আজ সেমিফাইনালও অবশ্য বড় পরীক্ষা নিয়েছে বাংলাদেশের। প্রথমার্ধে শুধু গোলটাই আসেনি, না হলে দুই দলের দারুণ আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমজমাট ৪৫ মিনিটের দেখাই মিলেছে। একবার নেপাল আক্রমণ করে, তো কিছুক্ষণ পর বাংলাদেশ!
১৭ মিনিটে বাংলাদেশকে বাঁচান গোলকিপার ইসমাইল। লাফাতে থাকা বলে নেপালের স্ট্রাইকার পায়ের ওপরের ভাগের ব্যবহারে দারুণ লব করেছিলেন, তবে ইসমাইল ঝাঁপিয়ে সেইভ করেন। এরপর বাংলাদেশের পালা। ২৩ মিনিটে অধিনায়ক নাজমুল হুদা ফয়সালের রিভার্স থ্রু পাস ধরে বক্সে ঢুকে গিয়েছিলেন রিফাত কাজী, তবে তাঁর বাঁ পায়ের শটটা ছিল সোজা নেপালি গোলকিপারের গায়ে।
এরপর আবার ‘পাল্টাপাল্টি হামলা’! ৩০ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেপালের এক খেলোয়াড়ের মাটি কামড়ানো শট পোস্টে লেগে ফেরে, চার মিনিট পর বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড মোরশেদ আলীর ফ্রি কিক যায় নেপালের পোস্ট ঘেঁষে। ৩৭ মিনিটে ডানদিকে দুরূহ কোণ থেকে নাজমুলের শট ঠেকিয়ে দেন নেপালের গোলকিপার।
দ্বিতীয়ার্ধেও একই গল্প! ৫৬ মিনিটে মোরশেদের ভাসানো কর্নারে মিঠুর হেড একেবারে গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করেন নেপালের ডিফেন্ডার। আবার চার মিনিট পর বক্সের অনেক দূর থেকে নেপালের খেলোয়াড়ের শট ঠেকাতে গিয়ে বাংলাদেশকে প্রায় বিপদে ফেলেই দিয়েছিলেন গোলকিপার ইসমাইল। প্রথমবারে শটটা ঠেকাতে গিয়ে ভুল করে ফেলেন ইসমাইল, তবে রিবাউন্ডে নেপালের আরেক খেলোয়াড় শট নেওয়ার আগেই আবার ইসমাইলই বলটা দূরে পাঠিয়ে দেন।
দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচটাতে ৭৩ মিনিটে গোল আসে বাংলাদেশের উদ্যাপনের উপলক্ষ হয়ে। নাজমুলের কর্নার ভেসে এল দূরের পোস্টে, নেপালের ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত হেডে বল জালে জড়িয়ে দেন ডিফেন্ডার আশিক।
সাত মিনিট পর আবার বাংলাদেশের বাঁধভাঙা উদ্যাপন। গোলটাও হলো দারুণ। নিজেদের অর্ধ থেকে ডানপ্রান্ত ধরে ভেসে আসা লম্বা পাস ধরার পথে বাংলাদেশ স্ট্রাইকার মানিকের বাধা ছিল গায়ের সঙ্গে লেগে থাকা নেপালি ডিফেন্ডার। শোল্ডার টু শোল্ডার লড়াইয়ে তাঁকে হারিয়ে বক্সে বলের নিয়ন্ত্রণ নেন মানিক, ততক্ষণে আরেক ডিফেন্ডার সামনে চলে এসেছেন। তাঁকেও ড্রিবল করে কাটিয়ে যান মানিক। চাইলে এরপর নিজেও শট নিতে পারতেন, কিন্তু গোলকিপারকে কোনো সুযোগ না দিতেই কি না, বলটা বাড়িয়ে দিলেন ফাঁকায় উঠতে থাকা নাজমুলকে। প্রথম স্পর্শেই নাজমুলের শট ঠেকানোর সাধ্য আর এগিয়ে যাওয়া নেপালি গোলকিপারের হলো না।
ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের তখন আর মিনিট দশেক বাকি, বাংলাদেশের গোল উদ্যাপনে তাই ফাইনালে উঠে যাওয়ার একটা নিশ্চয়তার আভাস থাকা হয়তো দোষের নয়। দুই গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর শেষ মিনিট দশেক আর যোগ করা সময় (যা শেষ পর্যন্ত গড়াল ৭ মিনিটে) বাংলাদেশের রক্ষণে মনোযোগী হওয়াতেও হয়তো দোষ দেওয়া যায় না।
তবে রক্ষণে ব্যস্ত হয়েও লাভ হলো না। ৮৭ মিনিটে গোল করে আবার ম্যাচে উত্তেজনা জমিয়ে দেয় নেপাল। গোলটা হয়েছে দারুণ। মাঝমাঠ ধরে দারুণ দলগত আক্রমণের পর ডানদিক দিয়ে বক্সে ঢোকে নেপাল, সেখান থেকে পাওয়া মাইনাসে গোলার মতো শটে বল জালে জড়ান সুজন দাঙ্গোল।
বাংলাদেশ তখন আবার উৎকণ্ঠায়। এই বুঝি ফাইনালের পথে বাধ সাধল নেপাল। তবে শেষ পর্যন্ত উৎকণ্ঠা আর বাস্তবে রূপ পায়নি, এই স্বস্তি।
মালদ্বীপের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্রয়ে শুরু টুর্নামেন্টে গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভুটানকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে গ্রুপসেরা হয়ে সেমিফাইনালে ওঠা, সেখানে আজ নেপালকে হারিয়ে ফাইনাল…এখন বাংলাদেশের সব হিসেব-নিকেশে জড়িয়ে ভারত।