বাংলাদেশ কিছু ভুল করেছে, তার প্রথমটিতে ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই পিছিয়ে পড়ে। তবে বাংলাদেশ সে ভুল কাটিয়ে ওঠার পথে দারুণ খেলেছেও বটে। রেফারির বিতর্কিত এক সিদ্ধান্তের শিকারও হয়েছে বাংলাদেশ। তা সত্ত্বেও দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ায়, ম্যাচে ফেরায় সমতায়। কিন্তু অরুণাচলে অনূর্ধ্ব-১৯ সাফের ফাইনালে আজ শেষ পর্যন্ত স্বপ্নভঙ্গ হলো বাংলাদেশেরই।
নির্ধারিত সময়ে ১-১ সমতার পর টাইব্রেকারেও বাংলাদেশ এগিয়ে গিয়েছিল ৩-২ ব্যবধানে। কিন্তু সেখান থেকে শেষ দুই শটে আর বল জালে জড়াতে পারেননি বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা। ভারত তাদের শেষ দুই শট জালে জড়ানোয় টাইব্রেকারে ৪-৩ ব্যবধানে জিতে যায় তারা। বাংলাদেশের টানা দ্বিতীয়বারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ জয়ের স্বপ্ন ভেঙে ভারত জিতল তাদের চতুর্থ শিরোপা।
ম্যাচের শুরুটাই বাংলাদেশের জন্য হলো দুঃস্বপ্নের মতো। দ্বিতীয় মিনিটেই গোল ভারতের, যা ২০০২ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিলের রোনালদিনিওর ফ্রি-কিকে গোলটি মনে করিয়ে দেওয়ার মতো। তবে বাংলাদেশের এই গোল খাওয়ার পেছনে দায়টা বাংলাদেশ গোলকিপার মাহিনের। বাংলাদেশ অর্ধের কিছুটা ভেতর থেকে ভারতের ফ্রি-কিক, ২০০২ বিশ্বকাপে রোনালদিনিও যেমন জায়গা থেকে সরাসরি ফ্রি-কিকে বল জালে জড়িয়েছিলেন। বাংলাদেশের গোলকিপার মাহিন নিজের রক্ষণের রেখা ঠিক করতে এতই ব্যস্ত ছিলেন যে, তিনি যে পোস্টে ঠিক জায়গামতো নেই – সেটাই যেন তাঁর খেয়ালে থাকল না। ভারতের খেলোয়াড় সরাসরি শট নেন, ২০০২ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের গোলকিপার ডেভিড সিম্যানের মতোই গোললাইন থেকে কিছুটা সামনে ছিলেন বাংলাদেশের গোলকিপার মাহিন। বল যখন তাঁর হাতের নাগালের ওপর দিয়ে জালে জড়িয়ে যাচ্ছে, তখনই কেবল মাহিন বুঝতে পারলেন তিনি কী ভুল করেছেন!
এরপরও বেশ কয়েকবার ভারত আক্রমণ করেছে, তবে বাংলাদেশ রক্ষণ তা ঠেকাতে পেরেছে ভালোভাবেই। বরং প্রথমার্ধের শেষ মিনিট পনেরো-বিশেক বাংলাদেশ অনেকটা গুছিয়েই খেলেছে, আক্রমণ করেছে। প্রথমার্ধেই বাংলাদেশ ভারতের জালে বলও ঢুকিয়েছে। কিন্তু ৪১ মিনিটে সে গোলটা রেফারি যেভাবে বাতিল করলেন, সেটা নিয়ে বিতর্ক হওয়াটাই স্বাভাবিক।
শর্ট কর্নারের পর বাঁ দিক থেকে মুরশেদ আলীর ক্রস গেল ভারতের বক্সে, বাংলাদেশ ডিফেন্ডার মিঠু লাফিয়ে হেড করলেন। তাঁর হেড বারে লেগে ফিরল। ফিরতি বল আবার হেড করে জালে জড়িয়ে দেন বাংলাদেশের রিফাত কাজী, কিন্তু রিফাতের হেডের সময়েই রেফারির বাঁশি বাজল। কারণ? ফাউল হয়েছে! মিঠু হেড করার সময়ে ভারতের দুই ডিফেন্ডার তাঁর গায়ের সঙ্গে লেগে ছিলেন, রেফারির মনে হয়েছে, মিঠু তাঁদের ধাক্কা দিয়ে হেডটা করেছেন। কিন্তু রিপ্লে দেখে মনে হলো, যেভাবে ফাউল ধরেছেন রেফারি, তাতে ফুটবল যে ‘কনট্যাক্ট স্পোর্ট’ কথাটাই প্রশ্নের মুখে পড়ে যায়। বক্সে অমন আলতো ধাক্কায় যদি ফাউল ধরা হয়, তাহলে বিশ্ব ফুটবলে অনেক কর্নার থেকে করা হেডের গোলই বাতিল করতে হয়!
প্রথমার্ধের শেষ মিনিট বিশেক বেশ ভালো খেলা উপহার দেওয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয়ার্ধে ফেরে সমতায়। কর্নার থেকে জটলার মধ্যে শটে গোল করেন জয়। নির্ধারিত সময়ে ১-১ সমতায় শেষ হলো খেলা।
এরপর টাইব্রেকারেও বাংলাদেশ স্বপ্ন সত্যি হওয়ার খুব কাছে গিয়ে ফিরল ভাঙা হৃদয় নিয়ে। আগে শট নেওয়া বাংলাদেশ প্রথম তিন শটেই বল জালে জড়ায়, ওদিকে ভারতের দ্বিতীয় শটটাই ঠেকিয়ে দেন বাংলাদেশ গোলকিপার মাহিন। দুই দলের তিনটি করে শট শেষেও টাইব্রেকারে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল ৩-২ ব্যবধানে। কিন্তু বাংলাদেশের হয়ে চতুর্থ শটটি নিতে এসে বেগড়বাই করে ফেললেন অধিনায়ক নাজমুল। তাঁর শট বারের অনেক ওপর দিয়ে যায়। ভারত তাদের চতুর্থ শটে আবার ফেরে সমতায়। পরিস্থিতি গেল বদলে।
পঞ্চম শটে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। শাহেদের শট ঠেকিয়ে দেন ভারতের গোলকিপার। ভারত তাদের পঞ্চম শটটিতে বল জালে জড়াতে পারলেই শিরোপা তাদের – এমন সমীকরণে এসে নিশ্চিত হলো বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ। ভারতের শট জড়াল জালে, শিরোপা উল্লাসে মেতে উঠল তারা, বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা মাঠের মাঝে হয়ে থাকলে স্বপ্নভঙ্গের প্রতিমূর্তি।