সমীকরণটা কঠিন ছিল না। সেরি আ-তে শেষ ম্যাচে জিতলেই চতুর্থবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলবে নাপোলি। ১ পয়েন্টে পিছিয়ে থাকা ইন্তার মিলানোর ভাগ্য নির্ভর করছিল নাপোলি-কালিয়ারি ম্যাচের ওপর। কোমোর বিপক্ষে ইন্তেরকে হারানোর পর নাপোলির পয়েন্ট হারানোর অপেক্ষা করতে হতো গতবারের চ্যাম্পিয়নদের।
ইন্তার নাৎসিওনাল কোমোকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়েছে ঠিকই, কিন্তু শিরোপা ধরে রাখতে পারেনি দলটি। কালিয়ারিকে একই ব্যবধানে (২-০) হারিয়ে চতুর্থবারের মতো সেরি ‘আ’র শিরোপা জিতেছে নাপোলি।
৩৮ ম্যাচ শেষে ৮২ পয়েন্ট নেপলসের ক্লাবটি। সমান ম্যাচে ৮১ পয়েন্ট ইন্তারের। মাত্র ১ পয়েন্টের জন্য লিগ শিরোপা স্বপ্নভঙ্গ হলো চলতি মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালিস্টদের।
আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনার আমলে দুবার সেরি ‘আ’- জিতেছিল নাপোলি। তৃতীয়বার শিরোপা জিততে নেপলসের ক্লাবটিকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৩৩ বছর। ২০২২-২৩ মৌসুমে লুসিয়ানো স্পালেত্তির অধীনে তিন যুগের হতাশা ঘোচানো দলটি এ বার শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে মাত্র এক বছর সময় নিল। এবার আন্তোনিও কন্তের হাত ধরে এল চতুর্থবার ঘরোয়া শিরোপা।
কন্তের নামও অবশ্য উঠে গেছে রেকর্ড বইয়ে। প্রথম কোচ হিসেবে তিনটি ভিন্ন ক্লাবকে সেরি ‘আ’ চ্যাম্পিয়ন করলেন ৫৫ বছর বয়সী এ ইতালিয়ান। এর আগে কন্তের হাত ধরে ইউভেন্তুস তিনবার (২০১২-২০১৪) ও ইন্তার (২০২১) সেরি ‘আ’ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এছাড়া ইংল্যান্ডেও প্রথম মৌসুমে চেলসিকে (২০১৭) প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা এনে দেওয়ার কীর্তি আছে কন্তের।
গতকাল স্তাদিও দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনাতে ম্যাচের ১৫ মিনিটের মধ্যেই তিনবার গোলের পরিষ্কার সুযোগ তৈরি করেছিল নাপোলি। কিন্তু আলিয়ারি গোলকিপার অ্যালেন শেরি আর জমাট রক্ষণের দৃঢ়তায় প্রতিবারই হতাশ হতে হয় স্কট ম্যাকটমিনি-রোমেরো লুকাকুদের।
গোল না হলেও টানা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছিল নাপোলি। ম্যাচের ৪২তম মিনিটে গিয়ে সফল হয় দলটি। মাঠের ডানপ্রান্ত থেকে বক্সের ভেতর ক্রস করেছিলেন মাত্তেও পলিতানো। বক্সের ভেতর ম্যাকটমিনিকে কড়া পাহাড়ায় রেখেছিলেন কলম্বিয়ান সেন্টারব্যাক ইয়েরি মিনা। কিন্তু স্কটিশ মিডফিল্ডারকে ঠেকাতে সেটা যথেষ্ট ছিল না। দারুণ দক্ষতায় শরীরটাকে পুরোপুরি শূন্যে ভাসিয়ে দৃষ্টিনন্দন এক সাইডভলিতে জালে বল জড়ান ম্যাকটমিনি। আর দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধানটা দ্বিগুণ করেন লুকাকু।
এই দুই গোলের ব্যবধানে লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধার হলেও নাপোলি অধিনায়ক কৃতিত্ব দিয়েছেন দলের সবাইকেই। তবে সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ দিয়েছেন কোচ কন্তেকে। নাপোলি অধিনায়ক জিওভান্নি দে লরেনসোর ভাষায়, ‘এখানে (শিরোপা জেতার পেছনে) প্রত্যেকের অবদান আছে। কিন্তু কোচের অবদান সবচেয়ে বেশি। নাপোলির আবার শীর্ষে তোলার জন্য তাঁকে দরকার ছিল। তিনি অসাধারণ।’
এর আগে তিনটি ভিন্ন ক্লাবকে নিয়ে লিগ শিরোপা জয়ের অভিজ্ঞতা থাকলেও এবারের মৌসুমটা ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের, এমনটাই জানিয়েছেন কন্তে। ম্যাচ শেষে নাপোলি কোচ বলেছেন, ‘এটা ছিল অপ্রত্যাশিত আর সবচেয়ে বেশি কঠিন। চ্যালেঞ্জ বেশি ছিল বলেই আনন্দটাও বেশি।’
ম্যাচের আগে থেকেই নাপোলি সমর্থকেরা স্টেডিয়াম কিংবা বাইরের রাস্তায় ভিড় করতে থাকেন। আগেই উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন তারা। দর্শকদের হতাশ করতে চাননি কন্তে, ‘আমরা যখন স্টেডিয়ামে পৌঁছালাম, জানি না কত মানুষ ছিল সেখানে। স্টেডিয়ামে ঢোকাটাই কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। সাময়িক একটা ভাবনা এসেছিল, যদি আমরা তাদের হতাশ করি, সেটা (হতাশাটা) অনেকদিন পর্যন্ত বয়ে নিয়ে চলতে হবে।’
শেষ পর্যন্ত তেমনটা হয়নি। লিগ শিরোপা ঠিকই নিজেদের করে নিয়েছে নাপোলি। এ প্রসঙ্গে কন্তে বলেছেন, ‘এটা (শিরোপা জয়) আবারও হলো। সত্যিই এটা অসাধারণ।’