গতকাল লা লিগা এই মৌসুমে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছে রেয়াল মাদ্রিদ। কিলিয়ান এমবাপ্পের জোড়া গোলে ঘরের মাঠে রেয়াল সোসিয়েদাদকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়েছে মাদ্রিদ। যদিও ম্যাচ নিয়ে বার্নাব্যুর কোনো আগ্রহই ছিল না। গতকাল যে তাঁরা সবাই ব্যস্ত ছিলেন দুই কিংবদন্তিকে বিদায় জানাতে।
এই মৌসুমেই শেষই লুকা মদরিচ ও কার্লো আনচেলত্তির মাদ্রিদ অধ্যায়। মদরিচ এখনো পরবর্তী গন্তব্যের কথা না জানালেও আনচেলত্তি আগামীকাল থেকেই ব্রাজিল জাতীয় দলের দায়িত্ব বুঝে নেবেন।
২০১৪ সালে প্রথমবার দায়িত্ব নিয়েই মাদ্রিদের বহুদিনের আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন আনচেলত্তি। ইতালিয়ান কোচের হাত ধরেই এসেছিল বহুপ্রার্থিত লা দেসিমা। দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালে দায়িত্ব নিয়ে দুবার লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ডাবল জিতিয়েছেন। অথচ এর আগের ৬৬ বছরে এই কীর্তি মাত্র তিনবার করতে পেরেছিল মাদ্রিদ।
এমন কোচকে বিদায় দিতে এসে তাই শুধু ক্লাব সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেস নন, সমর্থকেরাও কেঁদেছেন। চোখ ভেজা ছিল আনচেলত্তিরও।
ম্যাচ শেষে মাঠের মাঝে গিয়ে পুরো বার্নাব্যুর উদ্দেশ্যে ভালোবাসার কথা জানিয়েছেন, ‘শুভ বিকেল। আজ কথা বলাটা সহজ না। এই ক্লাবকে কোচিং করানোটা আনন্দের ব্যাপার, গর্বের ব্যাপার। সবার আগে প্রিয় সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেসকে ধন্য দেব। এটা দুর্দান্ত ছিল, এই মুহূর্তগুলোর জন্য ধন্যবাদ। আপনার সঙ্গে এই অনুভূতি ভাগ করতে পারাটা অসাধারণ।’
এরপর গত চার বছরে দুই চ্যাম্পিয়ন লিগ জয়ের বিশেষ মুহূর্তগুলোর কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন আনচেলত্তি, ‘এই গল্পগুলো অবিস্মরণীয়। কারণ পিএসজির বিপক্ষে করিমের (বেনজেমা) তিন গোল কে ভুলবে, সিটির বিপক্ষে রদ্রিগোর দুই গোলও কেউ ভুলবে না, লুকার (মদরিচ, চেলসির বিপক্ষে) অ্যাসিস্টও না। হোসেলুর (বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে) দুই গোলই-বা কে ভুলবে। আমিও এখানে কাটানো প্রতিটি দিন মনে রাখব। আর এটা বলে শেষ করতে চাই, “আলা মাদ্রিদ, এ নাদা মাস” (মাদ্রিদের জয় হোক, আর কিছু চাই না)। আপনাদের সবাইকে ভালোবাসি। বিদায়।’
আর রেয়াল মাদ্রিদ টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘খুবই খুশি, গর্বিত। অবিশ্বাস্য সময় কাটিয়েছি। যা হয়েছে তার কিছুই ভুলব না এবং আমি এই স্মৃতি, সমর্থকদের ভালোবাসা, এই দুর্দান্ত ক্লাবকে এত বছর সামলানোর গর্ব নিয়ে যাচ্ছি। রেয়াল মাদ্রিদ আমার ঘর, গত ছয় বছর তাই ছিল। আমরা দারুণ সময় কাটিয়েছি, শিরোপা জিতেছি, এই আবহ। রেয়াল মাদ্রিদ অন্য ক্লাবের চেয়ে আলাদা, এটা পরিবার। ভালদেবেবাসে (মাদ্রিদের অনুশীলন মাঠ) ঢুকলে বুঝবেন এটা পরিবার। আমি দারুণ সময় কাটিয়েছি। ক্লাব, খেলোয়াড় ও আমার মধ্যে দারুণ সম্পর্ক ছিল।’
বিদায়বেলায় কোনো আক্ষেপ নিয়ে যাচ্ছেন না আনচেলত্তি, ‘আমার হাতে অবিশ্বাস্য কিছু খেলোয়াড় ছিল এবং মাদ্রিদে সবসময় অসাধারণ খেলোয়াড় থাকবে। আজকের দিনটি চূড়ান্ত আবেগের। চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার সময়ও এমন আবেগ কাজ করে না। কানাটা সমস্যা না, কান্না করাটাই আজ স্বাভাবিক। আমি সন্তুষ্টি নিয়ে যাচ্ছি। এই পরিবারের অংশ হওয়া, এই ক্লাবের হয়ে ইতিহাস লেখা, ইতিহাসের অংশ হওয়াটা আনন্দের, গর্বের। প্রথম দিন থেকেই আমার এই উদ্দেশ্য ছিল, এবং আমি তা অর্জন করেছি।’