হুলিয়ান আলভারেসকে কাঁদিয়েছে নিয়মটা। আতলেতিকো মাদ্রিদের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে, রেয়াল মাদ্রিদকে দিয়েছে সুবিধা। পেনাল্টি নেওয়ার সময়ে বলে (শট নেওয়া পায়ের বাইরে) অন্য পায়ের স্পর্শ লাগলে কী করতে হবে – এ নিয়মের কার্যকারিতা নিয়েই তখন প্রশ্ন উঠেছিল।
গত মার্চে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতে রেয়াল মাদ্রিদ আর আতলেতিকো মাদ্রিদের ম্যাচে বিতর্ক ছড়ানো নিয়মটাই এবার বদলে ফেলেছে ফুটবলের নিয়ম-কানুন নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড (আইএফএবি)। আজ এক বিবৃতি দিয়ে নতুন নিয়ম অনুযায়ী এমন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে, সেটা জানিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি।
বলটা আসলেই কি হুলিয়ান আলভারেসের পায়ে লেগেছে? ভিডিওটা এখনো দেখলে হয়তো এই প্রশ্নটাই জাগবে মনে। সাদা চোখে বারবার দেখেও সেটা নিশ্চিত হওয়ার উপায় তখনো ছিল না, এখনো নেই। কিন্তু রেফারির তো একটা সিদ্ধান্তে আসতে হতো।
রেফারির অবস্থাটাও চিন্তা করুন! মিলিমিটারের এদিক-সেদিকে আকাশ-পাতাল ব্যবধান গড়ে যায় – এমন পরিস্থিতির ভিত্তিতে নেওয়া সিদ্ধান্তটা আবার ছিল দুই দিকে ধার তলোয়ারের মতো। যে দলের পক্ষে যাবে তারা সিদ্ধান্তের যথার্থতা ও সিদ্ধান্তগ্রহীতার সাহসিকতা নিয়ে ঢাকঢোল পেটানোয় কমতি রাখবে না, আর যাদের বিপক্ষে যাবে তারা মুণ্ডুপাতে আর কিছু আস্ত রাখবে না। সদ্যসমাপ্ত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের রাউন্ড অব সিক্সটিনে ম্যাচটা আবার ছিল মাদ্রিদের দুই নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী রেয়াল মাদ্রিদ আর আতলেতিকো মাদ্রিদের মধ্যে!
দুই লেগ মিলিয়ে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময় মিলিয়ে ২-২ সমতার পর ভাগ্যনির্ধারণী হয়ে দাঁড়াল টাইব্রেকার। রেফারির জন্য চাপের যেন কমতি হয়ে গেছে, সে কারণেই কিনা, ওই সময়ে তাঁর ওপর বর্তাল আলভারেসের ওই শট নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চাপ।
কী হয়েছিল, সেটা সম্ভবত মনে করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। প্রথমে আতলেতিকো, এরপর রেয়াল মাদ্রিদ - টাইব্রেকারে দুই দলেরই প্রথম শট জালে জড়ানোর পর আতলেতিকোর দ্বিতীয় শটটি নিতে যান আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার আলভারেস। শট নিতে গিয়ে পিছলে পড়ে যান আলভারেস, তবে শটটা ঠিকঠাকই জালে জড়ায়। এরপরই নাটক!
ভিএআর মাঠের রেফারিকে অনুরোধ করল, শটটা আবার মনিটরে গিয়ে দেখতে। রেফারি দেখলেন। টিভিতে রিপ্লে দেখাল, আলভারেস শট নেওয়ার আগে পিছলে পড়ে গেলেন। কিন্তু জুম ইন করে দেখানো ভিডিওতে বারবার দেখেও সাদা চোখে নিশ্চিত হওয়ার উপায় ছিল না, শট নেওয়ার আগে বলে আলভারেসের অন্য পায়ের স্পর্শ লেগেছিল কি না। একটা ভিডিওতে দেখে মনে হয়েছিল, বল এক ইঞ্চিরও ভগ্নাংশখানেক লাফিয়েছে শট নেওয়ার আগে। কিন্তু সে তো স্ট্রাইকারের অন্য পা বলের খুব কাছে মাটিতে পড়ার প্রভাবেও হতে পারে!
এই যখন বিতর্ক, বেচারা রেফারিকে নিতে হতো কঠিন সিদ্ধান্ত। তিনি আর কী করবেন, বলে পা লেগেছে ধরে নিয়েই ‘বেনিফিট অব ডাউট’ দিলেন রেয়াল মাদ্রিদকে। আর এক্ষেত্রে আগের নিয়ম ছিল, বলে অন্য পায়ের স্পর্শ লেগেছে মানে গোল বাতিল! আলভারেসের শট জালে জড়ালেও তাই শটটাতে স্কোর হিসাব করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যায় রেয়াল মাদ্রিদ। আজ সেই নিয়মের বদল জানানো বিবৃতিতে আইএফএবি লিখেছে, এখন থেকে এভাবে শট বাতিল ধরা যাবে না।
বিবৃতিতে আগের নিয়মের সীমাবদ্ধতাও ব্যাখ্যা করেছে আইএফএবি। আগের নিয়মে কোনো খেলোয়াড় শট নেওয়ার সময়ে ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর অন্য পা বলে লাগালে সে ক্ষেত্রে শট বাতিলের কথা বলা আছে। তবে আলভারেসের অন্য পা বলে লেগেছে যদি ধরেও নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রেও সেটি তো অনিচ্ছাকৃতই ছিল। শট নেওয়ার সময়ে তিনি পড়ে গেছেন বলেই না অমন হলো! এমন অনিচ্ছাকৃতভাবে বলে অন্য পায়ের স্পর্শের ক্ষেত্রে নিয়মটা কী হবে, সেটা বলা ছিল না আগের আইনের ১০ (ম্যাচের ফল নির্ধারণ) ও ১৪ (পেনাল্টি কিক) ধারায়। মাদ্রিদ-আতলেতিকো ম্যাচে রেফারি তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে বলে অন্য পায়ের স্পর্শের নিয়মেরই অনুসরণ করেছেন।
এবার ‘ধারা ১৪’-এর সে নিয়মে বদল এনে আইএফএবি লিখেছে, ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাক্ররত - ‘ডাবল টাচে’র ক্ষেত্রে কোনো শাস্তিই না রাখা হলে সেটা গোলকিপারের প্রতি ন্যায্য বিচার হবে না, কারণ ডাবল টাচ গোলকিপারের জন্য শট ঠেকানো দুরূহ করে তোলে। তা ন্যায্য বিচারটা কী হবে নতুন নিয়মে?
আইএফএবি লিখেছে, শট নেওয়ার পর বলটা অন্য কোথাও (পোস্ট/গোলকিপার) বাধা পেয়ে ফেরার আগেই যদি শট নেওয়া খেলোয়াড়ের অন্য পায়ের স্পর্শ অনিচ্ছাকৃতভাবে বলে লাগে, তবে –
- বল জালে জড়ালে শটটা আবার নিতে বলা হবে।
- বল জালে না জড়ালে সেক্ষেত্রে হয় ইনডিরেক্ট ফ্রি-কিক নিতে বলা হবে (যদি না রেফারি পরিস্থিতি ডিফেন্ডিং দলের অনুকূলে দেখে অ্যাডভান্টেজ না দেন, অর্থাৎ খেলা যেভাবে চলছে সেভাবেই চলতে দেওয়ার অনুমতি না দেন)। আর যদি পরিস্থিতিটা পেনাল্টি শুটআউটের ক্ষেত্রে হয়, সে ক্ষেত্রে শটটা ‘মিস’ (গোল হয়নি) ধরে নিতে হবে।
আর যদি শট নেওয়া খেলোয়াড় ইচ্ছাকৃতভাবেই বলে অন্য পায়ের স্পর্শ লাগিয়েছেন বলে মনে হলে সে ক্ষেত্রেও শট আবার নিতে বলা হবে (যদি না পরিস্থিতি ডিফেন্ডিং দলের অনুকূলে দেখে রেফারি অ্যাডভান্টেজ না দেন)। আর পরিস্থিতিটা পেনাল্টি শুটআউটের ক্ষেত্রে হলে শটটাকে ‘মিস’ বলে ধরে নেওয়া হবে।
আলভারেসের এখন আফসোস হতেই পারে। এই নিয়মটা তখন চালু থাকলে তিনি অন্তত আরেকবার শট নেওয়ার অনুমতি পেতেন।