দিন পেরিয়ে এখন ঘণ্টার হিসাব। ব্রাজিল ভক্তদের অনেক অপেক্ষার মুহূর্তটা এই এল বলে! বাংলাদেশ সময় আগামীকাল ভোর ৫টায় বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ইকুয়েডরের মাঠে ম্যাচ দিয়েই যে ব্রাজিলে শুরু হচ্ছে কার্লো আনচেলত্তি-যুগ!
ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ইউওএল এস্পোর্তে জানিয়েছে, এরই মধ্যে ব্রাজিলে সবার মন কেড়ে নিতে শুরু করেছেন আনচেলত্তি। পর্তুগিজ ভাষা শিখছেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ব্রাজিলিয়ানদের ভাষাটা মোটামুটি কাজ চালানোর মতো আয়ত্তে নিয়ে নিতে পারবেন বলেও নাকি আশাবাদী ইতালিয়ান কোচ। ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাস নিয়েও নাকি পড়াশোনা করছেন। আপন করে নিচ্ছেন ব্রাজিলিয়ানদের জীবনযাপনের ধরনও।
তা মাঠের বাইরে না হয় মন এরই মধ্যে জিতে নিলেন, আনচেলত্তির আসল পরীক্ষা তো আগামীকাল। যেখানে মন আর ম্যাচ – দুটিই জেতা ছাড়া ব্রাজিলিয়ানদের কাছে ঠিক পাশমার্ক পাওয়ার কথা নয় ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে সর্বজয়ী ৬৫ বছর বয়সী কোচের।
ম্যাচে ব্রাজিল জিতবে কি না, সে উত্তর তো আর কেউ আগে থেকে দিতে পারবে না। তবে আনচেলত্তি যে একাদশ সাজাতে যাচ্ছেন, তা থেকে তাঁর অধীনে কাল ব্রাজিলের খেলার ধরন নিয়ে কিছুটা অনুমান করে নেওয়া যায়। নেইমার ফিট নন বলে দলে নেই, রেয়াল মাদ্রিদে আনচেলত্তির অধীনেই খেলা ভিনিসিয়ুস জুনিয়র তো থাকছেনই। পাশাপাশি আনচেলত্তির প্রথম একাদশে ১৮ বছর বয়সী ওয়ান্ডারকিড এস্তেভাও উইলিয়ানও। ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম গ্লোবোএস্পোর্তে এমন একাদশের কথাই জানাচ্ছে।
আগামী মৌসুমে চেলসিতে যোগ দিতে যাচ্ছেন, তবে পালমেইরাসের জার্সিতে বছর দুয়েক আগে অভিষেকের সময় থেকেই বাঁ পায়ে বল নিয়ে আঁকাবাঁকা দৌড় আর ড্রিবলিং, শটের স্টাইল মিলিয়ে এস্তেভাওয়ের তুলনা হতো লিওনেল মেসির সঙ্গে। কাতারে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়কের নামের সঙ্গে মিলিয়ে এস্তেভাওকে ডাকাই হতো ‘মেসিনিও।’ যদিও এই ডাকনামটা তাঁর ভালো লাগে না বলে সরাসরিই জানিয়ে দিয়েছিলেন এস্তেভাও, কোনো ধরনের তুলনাই তিনি চান না বলে গত ডিসেম্বরে ইএসপিএন ব্রাজিলের সঙ্গে আলাপে জানিয়েছিলেন। বরং ছোটবেলা থেকে তিনি নেইমারের কত বড় ভক্ত – সেটাও জানিয়ে বলেছেন, নেইমারের সঙ্গে সরাসরি আলাপ হলে তিনি কেঁদেও ফেলতে পারেন!
সেই এস্তেভাওকে এতদিন কেন ব্রাজিলের কোনো কোচ আক্রমণের ডানদিকে সুযোগ দেননি, এ নিয়ে সমালোচনা হয়েছে অনেক। দরিফাউ জুনিয়র, চিচি বা ফের্নান্দো জিনিসরা যা করতে পারেননি, আনচেলত্তি গিয়েই সেটি করে ফেলছেন। আগামীকাল ব্রাজিলের একাদশে রাইট উইংয়ে থাকছেন এস্তেভাও-ই!
বাঁ দিকে ভিনিসিয়ুসের জায়গা নিয়ে তো সংশয় নেই, আক্রমণে বাকি থাকে আর একটি প্রশ্ন – ব্রাজিলের স্ট্রাইকার কে হবেন! যুগ যুগ ধরে স্ট্রাইকার আর উইংব্যাক নিয়ে কখনো চিন্তা করতে না হওয়া ব্রাজিলের পতনের দুটি বড় কারণ হিসেবে তো এ দুই জায়গায় বিকল্পের অভাবকেই মানা হয়! আনচেলত্তির প্রথম একাদশে আপাতত স্ট্রাইকারের দায়িত্বটা পড়ছে হিশার্লিসনের কাঁধে।
গত কয়েক বছরে ব্রাজিলের অবশ্য গোলপোস্ট আর উইং ছাড়া কোনো পজিশনেই স্বস্তির কিছু ছিল না। আনচেলত্তি এসে হঠাৎ করে কাউকে আবিস্কার করেননি, তবে তাঁর অধীনে দলটা সাজতে যাচ্ছে নতুন ঢংয়ে। মাঝমাঠে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে কাসেমিরোর অভিজ্ঞতা দরকার বলে মনে করছেন আনচেলত্তি। ধারণা করা হচ্ছে, বয়সের কারণে গতি হারিয়ে ফেলা কাসেমিরোকে দুই সেন্টারব্যাকের ওপরে ‘শিল্ড’ হিসেবে বসিয়ে রাখবেন আনচেলত্তি। ৪-৩-৩ ছকে কাসেমিরোর দুই পাশে দুই মিডফিল্ডার কে থাকছেন? গ্লোবোএস্পোর্তের তালিকা অনুযায়ী, সেখানে ফ্লামেঙ্গোর গেরসন আর নিউক্যাসলের ব্রুনো গিমারায়েস জায়গা পাচ্ছেন।
রক্ষণে দুই পাশে থাকবেন মোনাকোর ভান্দেরসন ও ফ্লামেঙ্গোর আলেক্স সান্দ্রো। আর সেন্ট্রাল ডিফেন্সে মারকিনিওসের পাশে ‘প্রায় সমোচ্চারিত কিন্তু ভিন্ন বানানে’র আলেক্সান্দ্রোই থাকছেন, যিনি ক্লাব ফুটবলে খেলেন লিলের হয়ে। গোলপোস্টে আলিসনের জায়গা আর কে নিতে পারেন!