প্রথমার্ধের নির্ধারিত সময়ের তখন আর এক মিনিটও বাকি নেই। সিঙ্গাপুর বল নিয়ে চলে গেল বাংলাদেশ বক্সের সামনে। একটা শট হলো, সেটা বাংলাদেশ ডিফেন্ডার তারিক কাজীর গায়ে লেগে ওপরের দিকে উঠলেও বক্সের মধ্যেই ছিল। পোস্টের ডান দিকে এমাভিউয়ে দাঁড়ানো, তাঁর কাছে বল যাওয়া আটকাতে লাইন ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন বাংলাদেশ গোলকিপার মিতুল মারমা। না গিয়ে ডিফেন্ডারদের সামলাতে দেওয়াই কি উচিত ছিল তাঁর? হয়তো!
মিতুল লাফিয়ে এমাভিউয়ের মাথার ওপর থেকে বলটা সরালেন বটে, কিন্তু সেটা আবার বক্সেই আরেকটু ডান পাশে গেল। সেখান থেকে ক্রস গেল বক্সের বাঁ পাশে। বাংলাদেশ তখন প্রমাদ গুনছে, মিতুল যে তখন পোস্টে নেই! সেখানেই সব তালগোল পাকিয়ে গেল। প্রথমার্ধজুড়ে সিঙ্গাপুরের হাতে গোনা যা আক্রমণ হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোতেই বাংলাদেশকে ভোগানো উইঙ্গার সন উইয়ং ভারসাম্যহীন অবস্থায়ই শট করলেন, বল গেল পোস্টের দিকে। হামজা চৌধুরী দৌড়ে এসে শেষ চেষ্টা করলেন, কিন্তু বল তাঁর পায়ে লেগেও জালেই ঢুকল!
যোগ করা সময়ে কর্নার থেকে সামিত সোমের ক্রসে তপু বর্মনের হেড গ্যালারির দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করলেও তা শেষ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে কর্নারই হয়েছে। ফিরতি কর্নারে আর কিছু করতে পারেনি বাংলাদেশ। এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে বিরতিতে সিঙ্গাপুর ১-০ গোলে এগিয়ে আছে।
অথচ ঢাকা স্টেডিয়ামে আজ এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচটাতে প্রথমার্ধের ৪৫ মিনিটে দাপট বেশি ছিল বাংলাদেশেরই! হামজা একেবারে আহামরি না খেললেও নিজের কাজটা করেছেন, ফাহামেদুল দারুণ প্রেসিংয়ের পাশাপাশি বার দুয়েক সুযোগ পেলেও তাতে কিছু করতে পারলেন না। তবে আজ এই ম্যাচ দিয়ে অভিষিক্ত সামিত সোম মুগ্ধ করেছেন! বাংলাদেশ যা-ই আক্রমণ করেছে, তার প্রায় সবই প্রাণ পেয়েছে সামিতের ছোঁয়ায়। বার তিনেক দারুণ থ্রু বের করে দিয়েছিলেন তিনি, তবে সেগুলো শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের আফসোস হয়েই থেকেছে।
সিঙ্গাপুর মূলত হাই লাইন ডিফেন্স রেখে মিড ব্লকে কাউন্টার অ্যাটাকেই খেলেছে, বল পেলেই মাঝমাঠ থেকে লম্বা পাস পাঠিয়েছে দুই উইংয়ে কিংবা স্ট্রাইকার ইখসান ফান্ডির কাছে। এই কৌশলেই অবশ্য বার তিনেক গোলের খুব কাছে চলে গিয়েছিল তারা। নবম মিনিটে বাঁ দিক থেকে লং থ্রো থেকেই গোল প্রায় পেয়ে গিয়েছিল তারা, হয়নি সন উইয়ং বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি বলে। ১৬ মিনিটে বাংলাদেশ অর্ধে কিছুটা এগিয়েই ‘আর্লি ক্রস’, উদ্দেশ্য ফান্ডি। তাঁর হেড অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়।
২২ মিনিটে ধীরেসুস্থে উইয়াংয়ের শট তারিক কাজীর মুখে লেগে বক্সেই ডান দিকে যায়, সেখানে ফান্ডির শটের কোণ দূরূহ করে দিতে এগিয়ে যান বাংলাদেশ গোলকিপার মিতুল। ফান্ডির শট লাগে সাইড নেটে। আর ৩১ মিনিটে তো মিতুলই বাঁচিয়েছেন বাংলাদেশকে! সিঙ্গাপুর অর্ধে বাংলাদেশের মিস পাসের পর সেখান থেকেই লম্বা ক্রস যায় বাংলাদেশ পোস্টের দিকে দৌড়াতে থাকা ফান্ডির দিকে। তিনি বক্সে ঢুকে শট নিলেন বটে, তবে আগেই গোললাইন ছেড়ে বেরিয়ে তাঁর শটের কৌণিক সুবিধা কমিয়ে দেওয়া মিতুল বাকি কাজটা সারলেন ঝাঁপিয়ে ফান্ডির শট ঠেকিয়ে দিয়ে।
এই তিন-চারটি আক্রমণের বাইরে বাকি সময়ে বাংলাদেশেরই দাপট ছিল। প্রেসিংয়ে বাংলাদেশ বেশ বেকায়দায় ফেলেছে সিঙ্গাপুরকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটার সুবিধা নেওয়া যায়নি। ১৫ মিনিটে শাকিল আহাদ তপুর মাইনাস বক্সে যথাযথ স্পর্শ না পাওয়ায় গোল হয়নি। ১৮ মিনিটে সামিত দারুণ দৌড়ে সিঙ্গাপুরের তিন ডিফেন্ডারের বাধা এড়িয়ে বক্সে ঢুকে মাইনাস করেছিলেন, কিন্তু বক্সের মাঝে ওঠা রাকিবের কাছে যাওয়ার আগেই সেটি ক্লিয়ার করে সিঙ্গাপুরের রক্ষণ। ২১ মিনিটে ফাহামেদুল বল কেড়ে নিয়েছিলেন সিঙ্গাপুরের বক্সের সামনে, কিন্তু বলে তাঁর দ্বিতীয় স্পর্শের আগেই এগিয়ে আসা সিঙ্গাপুর গোলকিপার বিপদমুক্ত করেন তাঁর দলকে।
৩২ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে উঠেও প্রথম সুযোগ হারানো বাংলাদেশ আবার যখন বল পায় মাঝমাঠে, বক্সের সামনে দুই-তিন ডিফেন্ডারের ফাঁক গলে অসাধারণ থ্রু দিয়েছিলেন সামিত। কিন্তু রাকিব দৌড়ে গিয়ে তা ধরার আগেই সিঙ্গাপুর গোলকিপার বল ধরে ফেলেন। সাত মিনিট পর আবার বাংলাদেশের গোলের সুযোগ, উৎস মাঝমাঠের একটু সামনে থেকে বাঁ পায়ের প্রথম স্পর্শেই সামিতের বাড়ানো লব থ্রু। বাঁ দিকে ফাহামেদুল বলটা ধরেছিলেন, কিন্তু ওয়ান-ভি-ওয়ানে ভালো করতে পারেননি।
বাংলাদেশের এই ‘ইশ-আহা’র আফসোসের ভার আরও বাড়িয়ে প্রথমার্ধের শেষ দিকে গোল করে ফেলল সিঙ্গাপুর।