লা লিগার আর্থিক সঙ্গতি নীতি সামলাতে হিমশিম খাওয়া বার্সেলোনা গত মৌসুমে ধকল কম পোহায়নি। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় দানি অলমো ও পাউ ভিক্তরকে নিবন্ধন করাতে পারছিল না কাতালানরা। লা লিগা কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের জেরে এক পর্যায়ে আদালতেও গড়িয়েছিল বিষয়টি।
নানান ঝড়-ঝাপ্টা সামলে শেষমেষ লিগ কর্তৃপক্ষের বেধে দেওয়া বেতনসীমায় দুজনকে নিবন্ধন করিয়ে মৌসুম শেষ করেছে বার্সা।
নতুন মৌসুম শুরু হতে এখনো মাস দুয়েক বাকি থাকলেও বার্সাকে চোখ রাঙানি দিচ্ছে ক্লাবটির অর্থনৈতিক ভঙ্গুর দশা। লা লিগা প্রধান হ্যাভিয়ের তেবাস এ নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন কাতালানদের। এক সাক্ষাৎকারে তেবাস জানিয়েছেন, বার্সা এখনো ১:১ আর্থিক নীতিতে ফিরতে পারেনি। এস্পানিওল থেকে গোলকিপার হোয়ান গার্সিয়াকে কিনলেও এখনো রেজিস্ট্রেশন করাতে পারেনি বার্সা। এমনকি কোনো খেলোয়াড়কে বিক্রি না করলে নিকো উইলিয়ামসনকে কেনার সুযোগও দেখছেন না লিগ প্রধান।
১:১ নিয়মে কোনো ক্লাব যদি ১ ইউরো আয় দেখাতে পারে, তবে তারা ঠিক ১ ইউরো পর্যন্ত ব্যয় করতে পারবে। কিন্তু বার্সার আর্থিক অবস্থা এতটাই নাজুক যে, তারা এর মধ্যে ঢুকতে পারেনি। ফলে যেকোনো ব্যয় করার আগে তার চেয়ে বেশি আয় করতে হয় তাদের।
এজন্য গত জানুয়ারিতে অলমো-ভিক্তরদের মতো নিবন্ধন বাতিল হতে বসেছিল। এক পর্যায়ে স্টেডিয়ামের ভিআইপি আসনও বিক্রি দেখাতে হয়েছে বার্সাকে।
মাঠের বাইরে পরিস্থিতি জটিল হলেও মাঠের পারফরম্যান্সে হানসি ফ্লিকের অধীনে মনে রাখার মতো একটা মৌসুম কাটিয়েছে। চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্তের মিলানের কাছে শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে বাদ পড়লেও লা লিগা, কোপা দেল রে, স্প্যানিশ সুপারকাপ ঠিকই জিতে নেয় ফ্লিকের দল।
স্কোয়াডের শক্তি বাড়াতে মৌসুম শেষ হতেই এস্পানিওল থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ ইউরো রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করে গার্সিয়াকে কিনেছে বার্সা। এছাড়া ৬ কোটি ২০ লাখ ইউরো রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করে আথলেটিক বিলবাও থেকে নিকো উইলিয়ামসকেও দলে টানতে চাচ্ছে লা লিগা চ্যাম্পিয়নরা। যদিও উইলিয়াসমের রিলিজ ক্লজের অর্থ কিস্তিতে পরিশোধ করতে চাইছে ক্লাবটি।
কাতালান ক্লাবটির নতুন এ দুই সাইনিং নিয়ে মন্তব্য করেছেন লিগ সভাপতি তেবাস। গতকাল মঙ্গলবার মাদ্রিদের এসাদে ক্যাম্পাসে প্রথমে গার্সিয়ার নিবন্ধন নিয়ে তেবাস বলেছেন, ‘হোয়ান গার্সিয়াকে কিনে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া ও ওকে নিবন্ধন করানো এক জিনিস নয়। ওদের (বার্সাকে) ভেবে বের করতে হবে- কাকে রেখে কাকে বিক্রি করবে।’
বার্সার যে এখনো ১:১ আর্থিক নিয়মের অধীনে যেতে পারেনি, সেটাও মনে করিয়ে গিয়েছেন তেবাস, ‘আমি অনেক কিছুই শুনি.. যা লেখা হচ্ছে, জানি না এর কোনটা সত্য। বার্সেলোনা এখনো ১:১ নিয়মে ফিরতে পারেনি। আরেকদিন ওরা ঘোষণা দিল, গার্সিয়ার রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করেছে। কিন্তু আমি জানি না, তারা আসলেই সেটা করেছে কি না। আমি খুব বেশি কিছু জানি না…’
বার্সা যে এখনো গার্সিয়াকে নিজেদের খেলোয়াড় হিসেবে নিবন্ধন করাতে পারেনি, সেটা জোর দিয়েই বলেছেন তেবাস, ‘ওকে (গার্সিয়া) নিবন্ধন করাতে বার্সাকে কিছু কাজ করতে হবে। খুব বেশি না, তবে কিছু করতে হবে। কী করতে হবে, তারা (বার্সা) সেটা আগে থেকেই জানে। আমি সেগুলো বলতে চাচ্ছি না। তবে আমরা সময় সীমাও বেঁধে দিচ্ছি না।
নিকো উইলিয়ামসের বার্সায় যোগদান প্রসঙ্গে তেবাসের ভাষ্য, ‘(চুক্তি হয়েছে কিনা) আমি জানি না। শেষ পর্যন্ত আপনি অনেকের নামই শুনবেন। নিকো উইলিয়ামস তাদেরই একজন… প্রথমত, এখনো নিবন্ধন করানো হয়নি। কিন্তু ওরা এখনো কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়া চুক্তি করার অবস্থায় পৌঁছাতে পারেনি। ওদের আর্থিক কাঠামো এখনো ১:১ নিয়মের অধীনে পড়ে না। নিকোকে পেতে হলে ওদের কাউকে বিক্রি করতে হবে এবং হিসেবের ব্যাপক সমন্বয় করতে হবে।’
ক্রীড়া বিষয়ক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর, নতুন খেলোয়াড় টানতে বেশ কয়েকজনকে বিক্রি করার পথে হাঁটছে বার্সা। গুঞ্জন অনুসারে, ফেরমিন লোপেসের ওপর নজর রাখছে বায়ার্ন মিউনিখ। এছাড়া রোনান্ড আরাউহোকেও বিক্রির কথা ভাবছে বার্সা।