আক্রমণ-প্রতিআক্রমণে জমে ওঠা ম্যাচে কিছুতেই গোল পাচ্ছিল না কোনো দল। ৭৮ মিনিটে গিয়ে ডেডলক ভাঙেন দেজিরে দুয়ে। ফরাসি ২০ বছর বয়সী তরুণ তারকা স্ট্রাইকারের গোলে এগিয়ে (১-০) যায় পারি সাঁ জার্মেই (পিএসজি)। এর ঠিক ৪ মিনিট পর উইলিয়ান পাচো লালকার্ড দেখলে ১০ জনে পরিণত হয় ফরাসি ক্লাবটি।
প্রতিপক্ষ দলে একজন কম থাকার সুযোগ নিয়ে ম্যাচে ফিরতে মরিয়া বায়ার্ন মিউনিখ আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয়। নির্ধারিত সময় শেষে যোগ করা সময়ের শুরুতে আরও একজন লাল কার্ড দেখেন পিএসজির। এবার লুকাস এরনান্দেস লাল কার্ড দেখলে ৯ জনে পরিণত হয় লুইস এনরিকের দল।
প্রতিপক্ষ দলে দুজন কম, খেলা চলল আরও কয়েকমিনিট। কিন্তু ম্যাচে ফেরার সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেনি ভিনসেন্ট কোম্পানির শিষ্যরা। উল্টো যোগ করা সময়ের শেষ মুহূর্তে আরও একটা গোল হজম করেছে জার্মান জায়ান্টরা। এবার আশরাফ হাকিমির দারুণ এক অ্যাসিস্টে গোলের খাতায় নাম লিখিয়েছেন উসমান দেম্বেলে। তাতে ৯ জন নিয়েই বায়ার্নকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে উঠেছে পিএসজি।
ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আগামী বুধবার রাতে রেয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে ফরাসি ক্লাবটি। টুর্নামেন্টের শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে গতকাল রাতে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে শেষ চার নিশ্চিত করেছে শাবি আলোনসোর দল।
তবে পিএসজির জয় নয়, গতকাল আলোচনা ছিল জামাল মুসিয়ালার চোট নিয়ে। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে পিএসজি বক্সের ভেতরে গোলকিপার দোন্নারুম্মার ট্যাকলে বাজেভাবে পড়ে যান জার্মান তরুণ মিডফিল্ডার। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে, মুসিয়ালা মাটিতে পড়ার আগেই তাঁর বাম পা উল্টো দিকে বাঁকিয়ে আছে! এমনই ভয়ংকর অবস্থা যে, দোন্নারুম্মা ও আশরাফ হাকিমিকে অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে।
বায়ার্নের স্পোটিং ডিরেক্টর ম্যাক্স এবার্ল জানিয়েছেন, মুসিয়ালাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মুসিয়ালার এমন চোটের জন্য প্রতিপক্ষ গোলকিপারকে দায় দিয়েছেন বায়ার্ন গোলকিপার ম্যানুয়েল নয়্যার।
কর্নার লাইনের দিকে যাওয়া বলটার পেছনে ছুটছিলেন মুসিয়ালা। সামনে বাধা দিচ্ছিলেন পাচো। বল লাইন পার হওয়ার আগেই দোন্নারুম্মা এগিয়ে এসে লাফিয়ে বলটা ধরেন। ওই সময় বিপজ্জনকভাবে পায়ে চোট পান মুসিয়ালা। কিন্তু যে পরিস্থিতিতে দোন্নারুম্মা লাফিয়েছেন, সেটা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন নয়্যার।
স্কাই জার্মানির সঙ্গে আলাপকালে বায়ার্ন গোলকিপার বলেছেন, ‘ওই পরিস্থিতিতে এভাবে যাওয়ার কোনো দরকার ছিল না। এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। মনে হয়েছে, প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে চোটে ফেলার ঝুঁকি নিতেও প্রস্তুত ছিল ও (দোন্নারুম্মা)!’
নয়্যার যোগ করেন, ‘আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম, “তুমি গিয়ে আমাদের খেলোয়াড়ের খোঁজ-খবর নেবে না?” ওর (মুসিয়ালা) কাছে গিয়ে মঙ্গল কামনা করাটা নৈতিক দায়িত্ব। শেষ পর্যন্ত ও (দোন্নারুম্মা) সেটা করেছে। খেলোয়াড়ি জীবনে সৌজন্যতাবোধটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি হলে প্রতিক্রিয়াটা ভিন্নভাবে জানাতাম।’
দোনানরুম্মা অবশ্য পরে অবশ্য ইনস্টাগ্রামে একটি ফটো পোস্ট করেছেন। সেখানে তাঁকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল এবং মুসিয়ালার জন্য বার্তা ছিল। সে বার্তায় দোন্নারুম্মা লিখেছেন, ‘দোয়া ও শুভ কামনা তোমার জন্য।’
জার্মার তারকার চোট প্রসঙ্গে বায়ার্ন কোচ কোম্পানি বলেছেন, ‘এটা খুবই বাজে ছিল। আমি শুধু ছবিগুলো দেখেছি। অ্যাঙ্কেলে চোটের মতো মনে হয়েছে। কিন্তু আমি এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
পিএসজির প্রথম গোলদাতা দুয়ে বলেছেন, ‘আমরা ওকে বলেছি, আমরা ওর পাশে আছি। এমন কিছু যখন ঘটে, তখন খেলায় মনোযোগ দেওয়া কঠিন। এটা খেলারই অংশ। জামালের পুনবার্সন ভালোভাবে হোক, সেটাই এখন আমাদের চাওয়া।’
মুসিয়ালার প্রতি সমর্থন জানিয়ে পিএসজি ডিফেন্ডার আশরাফ হাকিমি বলেছেন, ‘ওর ঘটনাটা মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর। আমরা জানি, এটা খেলারই অংশ। কিন্তু ওকে জানাতে চাই, ওর পাশে আছি। আমরা ওকে দ্রুত আবার মাঠে দেখতে চাই।’