গত তিন দিনে ফুটবলবিশ্ব শোকে বিহ্বল হয়ে আছে লিভারপুলের পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড দিওগো জোতা ও তাঁর ভাই আন্দ্রে সিলভার হঠাৎ মৃত্যুতে। স্পেনে গাড়ি দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যুর খবরে লিভারপুল আর পর্তুগাল তো বটেই, পুরো ফুটবল দুনিয়াই যেন বলার ভাষা পাচ্ছে না। তারওপর যেখানে গত জুনে পর্তুগালের হয়ে নেশনস লিগ জেতা জোতা সপ্তাহ দেড়েক আগেই বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তাঁর তিন সন্তানের মা রুতের সঙ্গে!
এমন মৃত্যুতে শোক জানানোর ভাষা আর কী হতে পারে! জোতার তিন সন্তানের জন্য, তাঁর সদ্যবিবাহিতা স্ত্রীর জন্য তো বটেই, জোতা আর সিলভা – দুই সন্তানকেই হারানো মা-বাবার জন্যও শোকে কাঁদছে সবার মন। আজ পর্তুগালের গন্দোমারে জোতা ও সিলভার শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লিভারপুল, পর্তুগাল জাতীয় দলের প্রায় সব সদস্য। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যাননি তাঁর উপস্থিতিতে অযথা ভিড় হবে ভেবে। ওদিকে গতকাল রাতেই আল হিলালের হয়ে ক্লাব বিশ্বকাপে খেলার ঘণ্টা দশেক পর জোতার সবচেয়ে কাছের বন্ধু রুবেন নেভেস পর্তুগালে উড়ে গেছেন শুধু বন্ধুর শেষকৃত্যে থাকার ইচ্ছায়।
এসবের মধ্যে অন্য কারণে শিরোনামে আসছেন লিভারপুলেরই কলম্বিয়ান উইঙ্গার লুইস দিয়াস। স্প্যানিশ দৈনিক মার্কা লিখেছে, লিভারপুলের প্রায় সবাই, এমনকি সাবেক অনেক তারকাও যখন পর্তুগালে জোতার শেষকৃত্যে গেছেন, দিয়াসকে তখন দেখা গেছে কলম্বিয়ায় বিজ্ঞাপনের কাজে নাচানাচি করতে! যদিও যে ভিডিওর ভিত্তিতে মার্কা প্রতিবেদনটা করেছে, সেটির সময় নিয়ে প্রশ্ন আছে। অনেকে বলছেন, এই ভিডিও জোতার মৃত্যুর আগের সময়ের।
লিভারপুলে জোতার কাছের একজনই ছিলেন দিয়াস। কলম্বিয়ান উইঙ্গার যখন লিভারপুলে যোগ দেন, জোতাই তাঁকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিলেন নতুন ক্লাবে মানিয়ে নেওয়ার কাজে। এমনকি দিয়াসের বাবা যখন দুষ্কৃতিকারীদের হাতে আটকা পড়েছিলেন, এ নিয়ে ব্যস্ততায় দিয়াস যখন কলম্বিয়ায় ছিলেন, এক ম্যাচে গোল করে দিয়াসের নাম ও জার্সি নম্বর লেখা জার্সি উঁচিয়ে ধরে পাশে থাকার ভরসা দিয়েছিলেন জোতা।
সেই জোতার মৃত্যুশোকের দিনে দিয়াস কলম্বিয়া থেকে বেরোতে পারেননি। মার্কা লিখেছে, আগে থেকে ঠিক করে রাখা কিছু স্পনসরশিপের চুক্তির কারণে বিজ্ঞাপনের কাজে আটকে গিয়েছিলেন দিয়াস। একটা বিজ্ঞাপনে তো তাঁকে নাচতেও দেখা গেছে, যে সময়ে পর্তুগালে দিয়াসের জন্য বাকিরা সবাই কাঁদছিলেন!
কিন্তু স্পনসরশিপের চুক্তির ব্যস্ততার ব্যাখ্যাও ঠিক মানতে পারছেন না অনেকে। প্রিয় সতীর্থের মৃত্যুশোকের সামনে বিজ্ঞাপনের কিছু ব্যস্ততা আর কী! এমনকি কলম্বিয়ায়ও অনেকে দিয়াসের সমালোচনা করেছেন বলে জানাচ্ছে মার্কা।
দিয়াস অবশ্য ইনস্টাগ্রামে জোতার জন্য শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘বলার ভাষা নেই…কী যে কষ্ট লাগছে! শুধু ও মাঠে কী ছিল সেটার জন্য নয়, মাঠের বাইরে মানুষ হিসেবে ও যেমন ছিল তার জন্য কষ্টটা বেশি লাগছে।’ পরের প্যারায় যা লিখেছেন দিয়াস, তাতে তাঁর বাবার আটকা পড়ার সময়ে জোতার পাশে থাকার ব্যাপারটার কথাই বলছেন বলে মনে হবে, ‘মানুষের কিছু কিছু কাজ থাকে যা কখনো ভোলা যায় না। দিয়োগো আমার জন্য এমন একটা কাজ করেছে। এটা সারা জীবন আমার মনে থাকবে।’
তবে ইনস্টাগ্রামে এমন শোক জানালেও বাস্তবে বিজ্ঞাপনে নাচানাচি করার পর সমালোচনায় বাঁধ দেওয়া দিয়াসের জন্য সম্ভব হওয়ার কথা তো নয়!