গত ৩ মার্চ হঠাৎ অবসর নিয়ে নেন রোমান সানা। দেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদকজেতা প্রথম আর্চার অবসর নেওয়ার পেছনে আর্চারি ফেডারেশনেরই দায় দিয়েছেন। তাঁর দাবি, এত বছর জাতীয় দলে খেলেও আর্থিকভাবে কোনো লাভ হয়নি তাঁর।
২৮ বছর বয়সী আর্চারের এমন ঘোষণা তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। ফেডারেশন কর্মকর্তাদের সমালোচনাও হচ্ছে। এর জবাবে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দীন চপল দাবি করেছেন, রোমান সানা মানসিকভাবে অসুস্থ, কোনো আর্চার যেন তাঁকে ছাড়িয়ে যেতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে মানসিক অত্যাচার করতেন, তাঁর কারণে একজন শীর্ষ নারী আর্চার খেলাটা ছেড়ে দিয়েছেন!
অলিম্পিকে সরাসরি সুযোগ পাওয়া এই আর্চারের অবসর প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যম সকাল সন্ধ্যার কাছে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। সেখানেই ফুটিয়েছেন একের পর এক বোমা।
গতকাল রোমান সানার পাঠানো অবসরের চিঠি গ্রহণ করেছে ফেডারেশন। তাঁকে ফেরানোর ব্যাপারে ফেডারেশন কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে কিনা এ প্রসঙ্গে চপল বলেন, ‘এটা একান্তই তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। চিঠিতেও সে ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করেছে। তাকে তো জাতীয় দল থেকে বাদ দেওয়া হয়নি। সে নিজেই ক্যাম্প ছেড়েছে। এটা সত্যি, গত কয়েক মাস ধরে তার পারফরম্যান্স ভালো না। বুঝতে হবে, প্রত্যেকটা দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোচ ও নির্বাচক কমিটির ভূমিকা থাকে।’ স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া শুরু করলেও শেষ করেছেন ইঙ্গিতে, ‘একজনের জন্য পুরো ক্যাম্প নষ্ট করে লাভ নেই।’
এক নারী আর্চারের রোমানের কারণে ক্যাম্প ছাড়ার খবরটি সত্য কিনা, সে প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমিও শুনেছি। ওই মেয়েটি তখন রিকার্ভের শীর্ষ খেলোয়াড় ছিল। সে কিন্তু দিয়ার (দিয়া সিদ্দিকী) চেয়েও ব্রাইট ছিল। করোনার আগের ঘটনা ছিল সেটা।’ এ ব্যাপারে ফেডারেশন পদক্ষেপ নেয়নি কেন, এ বিষয়ে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘ওর এত মাথা গরম, কি বলব? বলে, “স্যার আমি অনেক সময় না বুঝে অনেক কথা বলে ফেলি। আমি আপনার সন্তানের মতো। আমাকে মাফ করে দিয়েন।”’
এরপরও এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন রোমান। ২০২২ সালের নভেম্বরে এক নারী আর্চারকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার দায়ে রোমান সানাকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে ফেডারেশন। তবে ২০২৩ সালের মার্চে শর্তসাপেক্ষে নিষেধাজ্ঞা তুলেও নেয় সংস্থা। কিন্তু এমন গুরুতর অপরাধে আন্তর্জাতিক আর্চারি ফেডারেশন স্বপ্রণোদিত হয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয় তখন। পরে ২০২৩ সালের শেষ দিকে নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরেন।
এ ব্যাপারে রোমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে চপলের, ‘যে শর্তে সে ফিরে এসেছিল (নিষিদ্ধ হওয়ার পর) সে প্রতিটি শর্ত ভঙ্গ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা তো আমরা ওকে দিইনি। বিশ্ব আর্চারি দিয়েছিল।’
গত বছরের জুলাইয়ে সতীর্থ দিয়া সিদ্দিকীকে বিয়ে করেছেন রোমান। এই আর্চারের সঙ্গেই ২০২১ আর্চারি বিশ্বকাপে মিশ্র দ্বৈতে রুপা জিতেছিলেন তিনি। বিশ্ব মঞ্চে ওই একবারই কোনো ইভেন্টের ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। দুজনের এমন ভালো সম্পর্ক অবশ্য ফেডারেশনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে দাবি সাধারণ সম্পাদকের, ‘এমনও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, দিয়ার সঙ্গে মিক্সড টিমে অন্য কেউ খেলতে চাইলে সে বাধা দিয়েছে। কিন্তু কোচ অনুমতি দিয়েছে। আমরা কিছু বলিনি। রোমানকেই বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোচ চেয়েছে, কী করব? কিন্তু তার কথায় তো একটা ফেডারেশন চলতে পারে না।’
অবসররের ঘোষণার পর রোমান বলেছিলেন ফেডারেশন থেকে মাত্র ৩ হাজার টাকা বেতন পান। এ প্রসঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের যুক্তি, এই খেলাটা প্রফেশনাল খেলা না, ফলে নির্দিষ্ট বেতন দেওয়া সম্ভব না। তবে আর্থিকভাবে রোমানকে নিজ থেকে অনেক সাহায্য করেছেন বলে দাবি করেছেন, ‘আমার থেকেই সে লাখ টাকার বেশি পেয়েছে। সোনা জিতলে ১ হাজার ইউরো দিতাম। সে এগুলো বলবে না। আমার কাছে সব তথ্যপ্রমাণ আছে।’
এত বছর খেলেও কোনো কিছু পাননি বলে অভিমানে অবসর নেওয়ার কথা জানিয়েছেন রোমান, কিন্তু চপল এ কথাও উড়িয়ে দিয়েছেন, ‘আজ আর্চার তৈরি করেছি বলেই আনসারে গেছে। আনসারে তো সে টাকা পাচ্ছেই। সে ক্রীড়াঙ্গন থেকে কিছু না পেলে ৫০-৫৫ লাখ টাকা খরচ করে কীভাবে খুলনায় ৫ তলা বাড়ি করল?’
রোমানকে একজন মানসিক রোগী বলে এটাও বলেছেন, অন্য কোনো আর্চার ভালো করুক এটা চাইতেন না এই আর্চার, ‘এসব সাইকোলোজিকাল সমস্যা। বছরে দুয়েকবার হয়। অনেক পরিবারে সাইকো পেশেন্ট থাকে। ওদের পাওয়ার ইচ্ছা বেশি থাকে। ওরা ভাবতে থাকে সবই আমি পাব। আর কেউ পাবে না।’
এরপর রোমানের বিরুদ্ধে অনেক বড় অভিযোগ তুলেছেন চপল। বলেছেন, জাতীয় দলে যেন তাঁর বিকল্প তৈরি না হয়, সেজন্য চেষ্টা করতেন রোমান, তবে নেতিবাচক উপায়ে, ‘রোমানের বিকল্প তৈরির কথা অনেক বার উঠে এসেছে। সে তো কাউকে উঠতে দিত না। প্রতিটি আর্চারকে মানসিক অত্যাচার করত। আমি ট্যুরে গিয়ে আলাদা আলাদাভাবে ওর কথা প্রতিটি খেলোয়াড়কে জিজ্ঞাসা করেছি। অনেকে ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।’