গত এপ্রিলে কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার বৈরী সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। ক্রিকেটে দুদলের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব ছিল আগে থেকেই। দেড় দেশকের বেশি সময় ধরে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে মুখোমুখি হয় না ভারত-পাকিস্তান। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ মুখোমুখি হতো শুধু বহুজাতিক বা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায়। কিন্তু পেহেলগামের সাম্প্রতিক ঘটনার পর ক্রিকেট তো বটেই, অন্য খেলায়ও সব প্রতিযোগিতায় দুদলের ম্যাচ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছিল।
আজ জানা গেল, অন্তত হকিতে সে অনিশ্চয়তা কাটতে যাচ্ছে। আগামী ২৭ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর এশিয়া কাপ হকি আয়োজিত হবে ভারতের বিহারে। ২৮ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত হতে যাওয়া জুনিয়র হকি বিশ্বকাপের আয়োজকও ভারত। এ দুটি টুর্নামেন্টের জন্য পাকিস্তানের হকি দলকে ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভারত সরকার। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাতে এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সে প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এতে আগামী সেপ্টেম্বরে হতে যাওয়া এশিয়া কাপ ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ/অংশগ্রহণ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, সেটা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।
তা ভারত হঠাৎ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের ক্রীড়াবিদদের ভিসা দিতে শুরু করল কেন? সে প্রশ্নের উত্তর উঠে এসেছ এনডিটিভির প্রতিবেদনে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, বহুজাতিক টুর্নামেন্টে কোনো একটি দলকে সুযোগ না দিলে সেটি অলিম্পিক সনদের লঙ্ঘন হবে এবং ভবিষ্যতে কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এ প্রসঙ্গে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সূত্রের ভাষ্য, ‘আমরা ভারতের মাটিতে কোনো বহুজাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী কোনো দলের বিরুদ্ধে নই। যদি আমরা পাকিস্তানকে ঠেকাতে চেষ্টা করি, তাহলে সেটা অলিম্পিক সনদের লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে।’
এনডিটিভির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অলিম্পিক সনদ অনেকটা সংবিধানের মতো। এটি খেলাধুলাকে আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতা প্রচারের একটি মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে কোনো বহুজাতিক টুর্নামেন্ট থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো দেশকে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে, আয়োজক দেশ ভবিষ্যতে কোনো টুর্নামেন্টের আয়োজক হওয়ার অধিকার হারাতে পারে।
পাকিস্তানের ক্রীড়াবিদদের ভিসা দেওয়ার যৌক্তিকতায় ভারতীয় ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সূত্র টেনে এনেছেন ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতকে। তিনি বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক খেলাধুলার দাবি হলো, আমরা কোনোভাবেই বহুজাতিক প্রতিযোগিতা থেকে সরে যেতে পারি না। উদাহরণস্বরূপ, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধরত অবস্থাতেও বহুজাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নেয় এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।’
বহুজাতিক টুর্নামেন্টে ভারত-পাকিস্তানকে একসঙ্গে দেখা গেলেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলার ব্যাপারে আগের সিদ্ধান্তেই অনড় আছে ভারত, সেটাও উঠে এসেছে ওই সূত্রের কথাতেই, ‘দ্বিপাক্ষিক সিরিজের ব্যাপারটি ভিন্ন। সেক্ষেত্রে কোনো ধরনের শিথিলতা বা ছাড় নেই।’
ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে হকি ইন্ডিয়া (এইচআই)। এশিয়া কাপ হকি ও জুনিয়র হকি বিশ্বকাপে পাকিস্তানি ক্রীড়াবিদদের ভিসা দেওয়ার বিষয়টি প্রসঙ্গে এইচআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ভোলা নাথ সিং বলেছেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। শুরু থেকেই আমাদের অবস্থান ছিল, সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবেন, আমরা তা মেনে চলব। এ বিষয়ে আর কোনো বিতর্ক নেই।’
এদিকে হকি নিয়ে সিদ্ধান্ত হলেও এশিয়া কাপ ক্রিকেটে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্ত কি, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছেন, ‘বিসিসিআই এ বিষয়ে এখনো মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তারা যোগাযোগ করলে আমরা এ প্রশ্নের উত্তর দেব।’