নারী-পুরুষের বৈষম্য হ্রাসে জেন্ডার বাজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে আমাদের অনেক অর্জন থাকলেও বর্তমানে এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়ছি। এমতাবস্থায় নারী আন্দোলনের অন্যতম দাবি বাজেটে জেন্ডার বাজেট আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে হবে, জেন্ডার বাজেটের ফলে নারী-পুরুষের বৈষম্য কতটা হ্রাস হয়েছে এবং জেন্ডার বাজেটের ফলাফল মূল্যায়নে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং অ্যাক্টিভিস্টদের নিয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। এছাড়া শ্রম বাজারে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, বাল্যবিবাহ বন্ধে মেয়েদের উপবৃত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি, নারীদের বরাদ্দকৃত সম্পদের সঠিক ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ‘জাতীয় বাজেটে জেন্ডার বাজেট অন্তর্ভুক্তকরণ’ বিষয়ক প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ১২ মার্চ বাংলাদেশ আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে এই প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। সুপারিশ উপস্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী।
আলোচনা সভায় সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেম এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী, সিপিডি–এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘নারী আন্দোলনের বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণে বিশেষজ্ঞদের মতামত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতিবিদদের নারী আন্দোলনের প্রতি আকাঙ্ক্ষা আছে, নারীর অর্থনীতিতে অর্ন্তভূক্তিকরণের ক্ষেত্রে অর্থনীতিবিদদের গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের আলোকে করণীয় নির্ধারণে মতামত দেওয়ার মাধ্যমে ভূমিকা পালন করতে হবে, নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ, মানবিক ও শিক্ষিত দেশ গড়তে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।
আলোচনা সভায় সুপারিশ উপস্থাপনায় ৯টি জেলা শাখা (টঙ্গি, দিনাজপুর,রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ,বরিশাল, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, যশোর) থেকে প্রাপ্ত সুপারিশে আলোকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, জলবায়ু মোকাবেলা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মুদ্রাস্ফীতি কমানো, মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি, নারীর জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান ইত্যাদি বিষয়গুলোর উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেম এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘জেন্ডার বাজেটের মেথডোলজি নিয়ে যে সমস্যা আছে তা পরিবর্তনে অর্থ মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নিতে হবে। বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থ কোন কোন খাতে ব্যয় হচ্ছে সে বিষয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিতের উপর জোর দিতে হবে। নারীদের গার্মেন্টসে কাজের হার বিগত সময়ে বেশি থাকলেও বর্তমানে কমে ৬০ শতাংশ এসেছে, এমতাবস্থায় নারীর অলটারনেটিভ আনুষ্ঠানিক কাজের সুযোগ কী তা খুঁজে দেখতে হবে। গার্মেন্টসের নারী কর্মীদের জন্য এমপ্লয়মেন্ট ইনস্যুরেন্স স্কীম চালুকরণ, নিরাপত্তা নিশ্চিত এর উপর জোর দিতে হবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, ‘মাদ্রাসার নারী শিক্ষার বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে অ্যাডভোকেসি কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে, উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে দিবাযত্ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, স্যানিটারি ন্যাপকিনের দাম কমাতে ন্যাপকিন তৈরির কাঁচামালের উপর কর প্রত্যাহার করতে হবে।’