সেকশন

মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
Independent Television
 

নারীবিদ্বেষী মনোভাবের কারণেই কি নারী নির্যাতন বাড়ছে?

আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৫ এএম

দেশে ঘটনার কোনো শেষ নেই। প্রতিদিন ঘটছে অসংখ্য ঘটনা। সেসব ঘটনার কিছু কিছু অংশ নাটক, সিনেমাকেও হার মানাচ্ছে। তেমনি একটি ঘটনার শিরোনাম হলো–“তালতলীতে কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ, মামলা ‘নেয়নি’ পুলিশ”।

সংবাদ সূত্রে জানা যায়, গত ২২ এপ্রিল রাতে বরগুনার তালতলীতে পাশের বাড়ির এক নারীর সহযোগিতায় এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ইব্রাহিম নামের এক ব্যক্তিসহ তার চার বন্ধুর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ৫ দিন ধরে থানায় গেলেও মামলা নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার।

বরগুনার ঘটনা কোনো সিনেমার কাল্পনিক অংশ না। বাস্তবে তালতলীতে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। মূলত নাটক, সিনেমায় দুষ্কৃতকারী ভিলেনের ক্ষমতার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মামলা নিতে চায় না। কিন্তু বাস্তবে বরগুনার এই ঘটনায় পুলিশ কেন মামলা নিল না?

জানি এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। শুধু বরগুনার ঘটনা নয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন ঘটনা ঘটছে অগণিত। আবার এমন অনেক ঘটনা ঘটছে, যেসব লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে যাচ্ছে।

আছিয়ার মৃত্যুর কথা আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে। এ দেশের গ্রামে গ্রামে শত শত আছিয়ার ঘটনা ঘটছে। সমাজের প্রভাবশালীদের ক্ষমতার কারণে এ ধরনের অনেক ঘটনা আবার মাটির নিচেও চাপা পড়ে যাচ্ছে। আছিয়ার সঙ্গে যে অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটেছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আছিয়া ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল তার বোনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বোনের যে পরিবারে আছিয়া নিরাপদে বসবাস করার কথা ছিল, সেই পরিবার তার মৃত্যুর কারণ হয়েছিল।

ফাইল ছবি২০২৫ সালের চারটি মাস অতিক্রম হওয়ার পথে। এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই যে, গত তিন মাসে নারী নির্যাতন কমেনি। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জানুয়ারি মাসে ২৭১টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা আগের মাসের (ডিসেম্বর, ২০২৪) তুলনায় ৩০টি বেশি। এ ছাড়া জানুয়ারি মাসে ধর্ষণের ঘটনা ৪২টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৫টি। আবার ফেব্রুয়ারি মাসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফেব্রুয়ারিতে ২৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা আগের মাসের (জানুয়ারি) তুলনায় ২৪টি বেশি। ওই মাসে ধর্ষণ ৫৭টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ হয়েছে ১৭টি।

অবাক হওয়ার মতো বিষয় ছিল এমএসএফ‑এর মার্চ মাসের প্রতিবেদন দেখে। এই মানবাধিকার সংগঠনের মার্চ মাসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মার্চ মাসে ৪২৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা ফেব্রুয়ারির তুলনায় ১৩৩টি বেশি। এ ছাড়া মার্চ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ১৩২টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ২৫টি ঘটনা ঘটেছে। এসব পরিসংখ্যান শুধু সংখ্যায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং সমাজের নৈতিক ও আইনি দুর্বলতার প্রতিফলন। তাই সমাজের সার্বিক অবস্থার দিক খেয়াল করলে বুঝতে পারা যায়, সমাজে অনেকাংশেই নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় আছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘বর্তমানে দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। দেশে সুশাসনের অভাবের কারণে নারী নির্যাতন বাড়ছে। আগে নারী নির্যাতনের পেছনে কারণ ছিল প্রভাবশালীদের ক্ষমতা আর বিচারহীনতার সংস্কৃতি। বর্তমানে এসবের পাশাপাশি নারীবিদ্বেষ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, নারীর প্রতি অসম্মানের কারণে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে।’

প্রতীকী ছবিডা. ফওজিয়া মোসলেমের মতে, ‘এখন নারীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। এখনকার নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। নারীদের এই সাহস কিন্তু আগে ছিল না। আগের দিনে নারীরা নিজের অধিকারের কথা বলতে পারতেন না। সে তুলনায় আমরা এখন অনেকটাই এগিয়ে গেছি। বর্তমানে নারী নির্যাতন বন্ধে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি নারীবিদ্বেষী প্রচার বন্ধ করতে হবে। আর নারীবিদ্বেষী সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সমতার সংস্কৃতি চালু করতে হবে।’

সমাজে ধর্ষণের পাশাপাশি আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটছে। আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব একটা সহজ বিষয় না। মানুষ খুব সহজেই আত্মহত্যার দিকে পা বাড়ায় না। বিষণ্নতার চরম পর্যায়ে গিয়ে মানুষ এ পথ বেছে নেয়। অনেক ক্ষেত্রে সমাজের সামগ্রিক পরিস্থিতিও মানুষকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়।

বরগুনার মতো এপ্রিল মাসে আলোচিত আরেকটি ঘটনার শিরোনাম ছিল ‘ধর্ষণের শিকার হওয়া জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ জসিমের মেয়ের আত্মহত্যা’।

সংবাদসূত্রে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনে শহীদ জসিমের কলেজপড়ুয়া মেয়ে গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। গত ২৬ এপ্রিল শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে গলায় ফাঁস দেন তিনি। পরে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

স্বজনেরা জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে তাঁর বাবা গুলিবিদ্ধ হন। ১০ দিন পর ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁকে দুমকিতে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যায় বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়িতে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন তিনি।

ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর পরিচিত একজন একটা পোস্ট করেন। সেই পোস্টের কিছু অংশ হলো, ‘জুলাই আন্দোলনে শহীদ জসিম ভাইয়ের মেয়ে কিছুক্ষণ আগে আত্মহত্যা করেছে। বাচ্চাটি কিছুদিন আগে বাবার কবর জিয়ারত করার পথে ধর্ষণের শিকার হয়। এই ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেনি সে। বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘‘আল্লাহ যা করে, সেটা নাকি ভালোর জন্যেই করে। আমার কি ভালো করসে বলতে পারেন? আমার সাথে খালি খারাপ ই হইসে!’’ আমাকে সে কথা দিল ঠিক করে পড়াশোনা করবে, কোনো দরকারে আমাকে কল দিবে! কিন্তু কি হয়ে গেল!’

তিনি আরও লেখেন, ‘এই ঘটনা কেন হলো জানেন? এ বাড়ি থেকে দু’কথা, ও বাড়ি থেকে দু’কথা, ফিসফিসানি, সুযোগ বুঝেই নোংরা তকমা–এগুলো বাচ্চাটি নিতে পারেনি! কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল তাকে এসব। তার মা এবং তার পরিবার এসব থেকে ক্রমাগত পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। তার মা আমাকে বলেছিলেন, ওর ইন্টার পরীক্ষা শেষ হলে তারা সবাই মিলে অনেক দূরে চলে যাবে, যেখানে কেউ তাদের চিনবে না, আঙুল তুলে কথা বলতে পারবে না। লামিয়ার মৃত্যুর জন্য শুধু ওর ধর্ষণকারীরা নয়, আপনারা যারা তার চরিত্রের দিকে আঙুল তুলেছেন, তারাও সমানভাবে দায়ী। আপনারাও অপরাধী।’

প্রতীকী ছবিনারীর মনে যখন মানসিক অশান্তি সৃষ্টি হয়, তখন আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন। তিনি বলেন, আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনা প্রদানকারীকে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারার অধীনে ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর জন্য দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। তবে অধিকাংশ সময় মানবিক বিবেচনায় আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না।

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিনের মতে, ‘সমাজে ধর্ষণ কমছে না। এর পেছনে প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, আইনের দুর্বল প্রয়োগ এবং দোষীদের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রভাব। অনেক ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা বিচারপ্রাপ্তির আগেই হয়রানির শিকার হন, যা অপরাধীদের উৎসাহিত করে। পাশাপাশি, নারীর প্রতি বিদ্যমান মানসিকতা, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি ধর্ষণের হার কমাতে বড় বাধা হিসেবে কাজ করে। ধর্ষণ রোধে প্রয়োজন দ্রুত ও কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া, শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি, নারীর মর্যাদা ও অধিকার সম্পর্কে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জবাবদিহি নিশ্চিত করা।’

নারীর প্রতি অসম্মানজনক আচরণ, বিশেষ করে জনসমক্ষে কটাক্ষ বা অবমাননাকর মন্তব্য করা, একটি গর্হিত সামাজিক অপরাধ এবং এটি বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের আচরণ নারীর সম্মান, মর্যাদা...
এপ্রিল মাসে মোট ১৬৯ জন কন্যা এবং ১৬৩ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮৩ জন কন্যাসহ ১১১ জন। তারমধ্যে ১৬ জন কন্যাসহ ২৪ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, ১ জন কন্যাসহ ৫...
নারী কমিশন এবং তাদের প্রস্তাবনা বাতিলের দাবিতে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে নারীর প্রতি অসম্মানজনক আচরণ, নারীবিদ্বেষী প্রচারণা এবং বক্তব্যের প্রতিবাদ...
এপ্রিল মাসে ৩৬২টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা গত মাসের তুলনায় ৬৬টি কম। এপ্রিল মাসে ধর্ষণের ঘটনা ৯৩টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ২৫টি, ধর্ষণ ও হত্যার ৪টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার...
দাউদাউ করে জ্বলছে একটি শিল্পাঞ্চল। সেখানে রক্তমাখা ছুরি হাতে আদর আজাদ। পেছনে তাঁকে জড়িয়ে ধরে আছেন পূজা চেরী, যার চোখে-মুখে ভয়, ভালোবাসা আর বেদনার মিশ্র অনুভূতি। চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে মৃতদেহ, যা...
রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ করার সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে মোজাম্মেল হোসেন (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিমতলি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে তাঁকে...
৩১ মে'র মধ্যে সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ ও সচিবালয় স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত করার দাবি জানিয়েছে জুলাই ঐক্য। আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানায়। 
আলোচিত ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২৩ সালের ২১ মে। ভালেন্সিয়ার মাঠে খেলতে গিয়ে ওই ম্যাচে ১-০ গোলে হেরেছিল মাদ্রিদ। তবে লস ব্লাঙ্কোসের হার ছাপিয়ে ম্যাচটি আলোচনায় আসে ভিনিসিয়ুসের উদ্দেশে  বর্ণবাদী আচরণের জন্য।...
লোডিং...

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.