নারীর প্রতি অসম্মানজনক আচরণ, বিশেষ করে জনসমক্ষে কটাক্ষ বা অবমাননাকর মন্তব্য করা, একটি গর্হিত সামাজিক অপরাধ এবং এটি বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের আচরণ নারীর সম্মান, মর্যাদা এবং নিরাপত্তাকে চরমভাবে লঙ্ঘন করে। শুধু সামাজিকভাবে নয়, আইনগতভাবেও এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশ দণ্ডবিধি (Penal Code), ১৮৬০-এর কয়েকটি ধারা নারীকে কটাক্ষ বা উত্ত্যক্ত করার বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ধারা হলো ধারা ৫০৯: “কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো নারীর শালীনতাকে অপমান করার উদ্দেশ্যে শব্দ, অঙ্গভঙ্গি বা কর্ম করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এই অপরাধের শাস্তি এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।”
উদাহরণস্বরূপ, রাস্তায় হেঁটে যাওয়া নারীদের উদ্দেশ্যে অশ্লীল মন্তব্য, বাজে অঙ্গভঙ্গি, বা হুইসেল দেওয়া ইত্যাদি এই ধারার আওতাভুক্ত। এ ধরনের আচরণকে সাধারণত “ইভ টিজিং” বা “উত্ত্যক্ত করা” বলা হয়, কিন্তু আইনি পরিভাষায় এটি যৌন হয়রানির শামিল।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত) এর অধীনে নারীকে জনসমক্ষে মানসিক নির্যাতন, হুমকি, বা অবমাননাকর আচরণ করার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। বিশেষ করে, ধারা ১০ অনুযায়ী, যদি কেউ নারীকে যৌন হয়রানি করে, তাহলে সেই ব্যক্তির ৩ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানার বিধান রয়েছে।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নারীদের উদ্দেশ্যে কটূক্তি ও অবমাননাকর মন্তব্য করা সাধারণ বিষয হয়ে উঠেছে। এই বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এ সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিধান রয়েছে। যদি কেউ ফেসবুক, ইউটিউব বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে নারীর বিরুদ্ধে অশালীন বা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা যেতে পারে এবং ৩ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড হতে পারে।
যদিও আইনগত সুরক্ষা রয়েছে, অনেক সময় নারীরা সামাজিক লজ্জা, ভয় বা প্রমাণের অভাবে অভিযোগ করেন না। ফলে অপরাধীরা পার পেয়ে যায় এবং নারী নির্যাতন আরও বাড়ে। তাই কেবল আইন নয়, সামাজিক সচেতনতা, পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও নারীর প্রতি সম্মান শেখানো জরুরি।
নারীকে জনসমক্ষে কটাক্ষ করা শুধু একটি সামাজিক ব্যাধি নয়, এটি একটি গুরুতর অপরাধ। বাংলাদেশে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে যথাযথ আইন আছে এবং এসব আইনের প্রয়োগ হলে নারীরা আরও নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশে বসবাস করতে পারবেন। প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হলো নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।
লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।