সেকশন

শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২
Independent Television
 

ধর্ষণের বিচার আদালতে, চড়-থাপ্পড়ে নয়

আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ০১:৩১ পিএম

ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধের বিচার চড়-থাপ্পড় দিয়ে “সালিশে” মীমাংসা করার ঘটনা শুধু আইনবিরোধী নয়, এটি এক ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে লালন করে, যা সমাজে ধর্ষকের সাহস বাড়ায় এবং ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারকে পদদলিত করে। কুষ্টিয়ায় ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সালিশের মাধ্যমে অভিযুক্তকে চড়-থাপ্পড় মেরে “মীমাংসা” করার যে খবর প্রকাশ পেয়েছে, তা আইন, ন্যায়বিচার এবং শিশু অধিকার—এই তিনটি ক্ষেত্রেই ভয়ানক লঙ্ঘন।

ইনডিপেনডেন্ট ডিজিটালে গত ১৭ জুন প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘ধর্ষণের বিচার শুধু চড়-থাপ্পড়!’ সংবাদ সুত্রে জানা যায়, গত ১১ জুন কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে ৬০ বছরের এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে। ধর্ষণের এই অভিযোগ মীমাংসা করতে গ্রামে সালিশ বৈঠকের আয়োজন করে গ্রামের মাতবররা। ভুক্তভোগী শিশুর পরিবার জানায়, সালিশ বৈঠকে অভিযুক্ত বৃদ্ধকে চড়-থাপ্পড় মেরে মীমাংসা করা হয়।

ঘটনার দুদিন পর শিশুটি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম বলেন, ‘ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। শিশুটিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী শিশুর মা বলেন, ‘মেয়ের ভবিষ‌্যতের কথা চিন্তা করে থানায় যায়নি। মেম্বার ও সমাজপ্রধান বলেছেন, আগে চিকিৎসা নিয়ে আসো তারপর মামলা করতে সহযোগিতা করব।’

ধর্ষণের ক্ষেত্রে আইনের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০ অনুযায়ী, ধর্ষণ একটি ফৌজদারি অপরাধ, যার শাস্তি ৭ বছর থেকে শুরু করে আজীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে (ধারা ৩৭৫ ও ৩৭৬)। শিশু ধর্ষণ হলে, দণ্ডবিধি ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অনুযায়ী, অবশ্যই কঠিন শাস্তি প্রযোজ্য হবে—সেক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন। ছবি: সংগৃহীত‘সালিশি বিচার’ কেন বেআইনি?

গ্রামীণ সালিশ পদ্ধতি মূলত সামাজিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য। তবে ধর্ষণের মতো State Offense বা রাষ্ট্রীয় অপরাধ সালিশে নিষ্পত্তির কোনো বৈধতা নেই। আইন অনুযায়ী, ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়ার পরপরই এটি পুলিশকে জানানো বাধ্যতামূলক। সালিশি বৈঠকে অভিযুক্তকে চড়-থাপ্পড় মারা কোনো বিচার নয় বরং এটি আসামিকে পলাতক হওয়ার সুযোগ দেওয়া। সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণ মীমাংসা করা অপরাধ দমন না করে বরং উৎসাহ দেয়, এবং এটি অবিচারের সংস্কৃতি গড়ে তোলে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভূমিকা

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও সমাজ প্রধানের ভূমিকা গুরুতর প্রশ্নবিদ্ধ। তারা যদি আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তবে কেন অভিযুক্তের পরিবারের হাতে বিচার হস্তান্তর করা হলো? পুলিশ ও প্রশাসনের উচিত ছিল প্রথম অভিযোগ পাওয়া মাত্রই মামলা রুজু করে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা।

ভুক্তভোগীর পরিবারের দ্বিধা

“মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মামলা করিনি”—এই ভয় সামাজিকভাবে গড়ে ওঠা এক ভয়ংকর বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। ধর্ষণের শিকার পরিবারগুলো প্রভাবশালী মহল বা সামাজিক চাপের কারণে আইনগত পথে যেতে ভয় পায়।

এক্ষেত্রে, রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক সহযোগিতা না থাকলে অনেক সময় বিচার হয় না। ফলে অপরাধীরা পার পেয়ে যায় এবং সমাজে ধর্ষণের প্রবণতা বেড়ে যায়।

এই ঘটনার পেছনে শুধু একজন ধর্ষকের বিকৃত মানসিকতা নয়, বরং একটি ব্যর্থ ও দুর্বল বিচার কাঠামোর চিত্র উঠে আসে।

সমাজের এই চিত্র গভীর উদ্বেগজনক—যেখানে এক শিশুর সম্ভ্রম নষ্ট হয়, চিকিৎসার পর হাসপাতালে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়, অথচ অপরাধী গ্রামে সালিশে চড় খেয়ে গা ঢাকা দেয়। এটি আইনের শাসনের অবমাননা এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন।

এখন করণীয় হলো অবিলম্বে মামলা রুজু ও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা,সালিশে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের আইন অনুযায়ী সহায়তা অপরাধে অভিযুক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া, ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনি সহায়তা ও মনোসামাজিক সাপোর্ট প্রদান করা, ধর্ষণের ঘটনায় সালিশি বিচার বন্ধে প্রশাসনিক দিক থেকে নির্দেশনা ও সচেতনতা বাড়ানো দরকার।

লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট

যৌতুক একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ, যা নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার অন্যতম রূপ। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে যৌতুক দাবি ও যৌতুকজনিত নির্যাতন অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত এবং এর জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তির বিধান। গত ১ জুলাই...
যৌতুক দাবি, যৌতুকের কারণে সাধারণ জখমের শিকার নারীদের বাধ্যতামূলক মামলাপূর্ব মধ্যস্থতার বিধান যুক্ত করার মাধ্যমে নারীর ন্যায়বিচারের অভিগম্যতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এতে বিচারপ্রার্থী ভুক্তভোগী নারীকে...
এ দেশের মায়েদের প্রতিদিনের চেনা আয়নায় থাকে একই প্রতিচ্ছবি। কোনো পরিবর্তন নেই। খুব ভোরে উঠে খাবার তৈরি করা, সন্তানকে স্কুলে পাঠানো, ঘর গোছানো…এভাবে দিন গড়িয়ে বছর পার হয়ে যায়, কিন্তু পরিবর্তন আসে না...
নারী নির্যাতনের ধরণ যতটা বহুমাত্রিক, ততটাই নিষ্ঠুর। শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, পারিবারিক সহিংসতা, প্রতারণামূলক সম্পর্ক, ব্ল্যাকমেইলিং এবং সর্বশেষ ডিজিটাল নির্যাতন সব মিলিয়ে নারীর...
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদের বিচার চাই, আবার সংস্কারও চাই। বিচার-সংস্কার ছাড়া নির্বাচন বাংলার মানুষ মেনে নেবে না। বিচার-সংস্কার ছাড়া যারা নির্বাচন...
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ইপিজেডের দুটি কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। প্রাথমিকভাবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। 
২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাতকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত । আজ শুক্রবার বিকেলে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানার আদালত এই আদেশ...
লোডিং...
পঠিতনির্বাচিত

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.