গাজা পুনর্গঠনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের শামিল বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিযোগ, ওয়াশিংটন একটি যুদ্ধাপরাধের সমাধান আরেকটি যুদ্ধাপরাধ দিয়ে করতে চাচ্ছে।
এছাড়া, এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে গাজাসহ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলেও মত বিশ্লেষকদের। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে এসব কথা উঠেছে।
দীর্ঘ ১৫ মাসের ইসরায়েলি তাণ্ডবের পর গত মাসে যুদ্ধবিরতির স্বাদ পায় গাজাবাসী। তবে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা নিয়ে একপাক্ষিক পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এটি বাস্তবায়ন হলে গাজাসহ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলতে পারে।
ওয়াশিংটনে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৈঠক শেষে, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। পরিকল্পনার অধীনে ফিলিস্তিনিদের উপত্যকায় ফেরার কোনো অধিকার দেওয়া হবে না বলেও জানান ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে গাজাবাসী। মিশর-জর্ডানসহ আরব বিশ্বের পক্ষ থেকেও এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের শামিল বলছেন। ওয়াশিংটন একটি যুদ্ধাপরাধের সমাধান আরেকটি যুদ্ধাপরাধ দিয়ে করতে চাচ্ছে বলেও অভিযোগ তাদের।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাবেক নির্বাহী পরিচালক কেনিথ রথ বলেন, ‘ট্রাম্প যে প্রস্তাব করেছেন তা স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ। ১৯৪৯ সালের ৪র্থ জেনেভা কনভেনশনের ৪৯ অনুচ্ছেদ ইসরায়েল ও আমেরিকাসহ মূলত সব দেশ অনুমোদন করেছে। তাই এটি আন্তর্জাতিক আইন। এই আইনে, অধিকৃত ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের জোরপূর্বক দেশত্যাগ নিষেধ করা হয়েছে। ট্রাম্প যা করছেন তা এক অর্থে, সমস্যা সমাধানের জন্য অতি-ডানপন্থী ইসরায়েলি দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করা। অর্থাৎ, ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দাও।’
কেনিথ রথ আরও বলেন, ‘একে জাতিগত নিধনও বলা চলে। ট্রাম্প তাঁর পরিকল্পনাকে একটি কল্যাণকর মানবিক উদ্দেশ্য হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন। গাজা ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু এটি ঘটেছে ইসরায়েলের নির্বিচারে বোমাবর্ষণের কারণে, যার অধিকাংশই যুদ্ধাপরাধ ছিল। একটি যুদ্ধাপরাধের সমাধান আরেকটি যুদ্ধাপরাধ দিয়ে হতে পারে না।’
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধে ৪৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ। এছাড়া আহত হয়েছে ১ লাখেরও বেশি মানুষ।
জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলি হামলায় গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, আর অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটির ৬০ শতাংশ অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চলছে। তবে এরই মধ্যে যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যুদ্ধবিরতির শর্ত মানা হচ্ছে না বলে পরস্পরকে দোষারোপ করছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েল। এরই মধ্যে হামাস জিম্মিমুক্তি স্থগিত করেছে।
অন্যদিকে আজ বুধবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুমকি দিয়ে বলেছেন, শনিবারের মধ্যে সব জিম্মি মুক্তি না দিলে গাজায় আবার হামলা শুরু করা হবে। হুমকি দিয়ে রেখেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে গত সোমবার দেশটির পরবর্তী ধাপের জিম্মিদের মুক্তি দিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেরি করার ঘোষণা দেয় হামাস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
হামাসের এ সিদ্ধান্তকে ভয়ানক হিসাবে আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প জানান, যুদ্ধবিরতি নিয়ে কী হবে তার সিদ্ধান্ত তিনি ইসরায়েলের হাতে ছেড়ে দিতে চান।
ট্রাম্প বলেন, ‘যদি শনিবার ১২টার মধ্যে সব জিম্মিকে ফেরত না দেওয়া হয় তা হলে আমি বলব এটি (যুদ্ধবিরতি) বাতিল করুন।’
এ নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলার সম্ভাবনা রয়েছেও বলে জানান ট্রাম্প।
এদিকে গাজা দখল নিয়ে মিশর ও জর্ডান বিরোধিতা করলে তাদের সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘তারা সম্মত না হলে আমি সহায়তা আটকে রাখব।’