এখন থেকে চীনের ওপর ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার আমেরিকার পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, মার্কিন শুল্কারোপের পাল্টা সিদ্ধান্তের কারণে চীন থেকে আসা পণ্যে এখন থেকে ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ থাকবে।
হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, কয়েক মাস আগেও চীন আমেরিকায় গ্যালিয়াম, জার্মেনিয়াম, অ্যান্টিমনি ও সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহারযোগ্য অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছিল। এ সপ্তাহেই চীন ছয়টি ভারী বিরল মৃত্তিকা ধাতু এবং বিরল মৃত্তিকা চুম্বকের রপ্তানি স্থগিত করেছে। এর মাধ্যমে তারা গাড়ি প্রস্তুতকারক, মহাকাশযান নির্মাণকারী, সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি এবং সামরিক ঠিকাদারদের কাছে সরবরাহ বন্ধ করতে চাইছে।
এ কারণে এবার আরও কঠোর হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বাড়িয়েছিলেন এবং অন্যান্য দেশ থেকে আসা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছিলেন। এবার চীনের ওপর তিনি শুল্ক বাড়িয়ে ২৪৫ শতাংশ করেছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে বলছে, চীনা সব পণ্যেই ২৪৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে–এমন নয়। কিছু পণ্যে শুল্ক বেড়ে ২৪৫ শতাংশ হয়েছে। যেমন–চীনা সুই ও সিরিঞ্জে এই শুল্ক থাকবে। এসব পণ্যে আগেই ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা ছিল। এর সঙ্গে নতুন ১৪৫ মিলে হয়েছে ২৪৫ শতাংশ।
এরই মধ্যে এর জবাবও দিয়েছে বেইজিং। চীনা সংবাদমাধ্যম চায়না ডেইলি বলছে, এ ব্যাপারে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেছে। তাতে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ানের কাছে এক সাংবাদিক জানতে চান, আমেরিকার এত বড় পদক্ষেপের জবাব চীন কীভাবে দেবে। তিনি বলেন, ‘এই সংখ্যা আপনি বরং আমেরিকার জন্য রেখে দেন। এই বাণিজ্য যুদ্ধ তো তারাই শুরু করেছে। চীন শুধু পাল্টা ও দরকারি পদক্ষেপ নিয়ে আসছে।’
চীন কখনো এমন দ্বন্দ্ব চায় না উল্লেখ করে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ‘চীন এমন কোনো যুদ্ধ চায় না। তবে চীন যুদ্ধকেও কিন্তু ভয় পায় না। যদি আমেরিকা সত্যিই সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চায়, তাহলে তাদের চরম চাপ প্রয়োগের পদ্ধতি ত্যাগ করা উচিত। হুমকি ও ব্ল্যাকমেইল বন্ধ করা উচিত এবং সমতা, শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে চীনা পক্ষের সঙ্গে সংলাপে অংশগ্রহণ করা উচিত।’
বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে সম্প্রতি আমেরিকায় চুম্বক ও বিরল খনিজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে চীন। এরই মধ্যে বিভিন্ন চীনা বন্দরে চুম্বকের চালান পাঠানো বন্ধ করেছে শি জিনপিং প্রশাসন। চীনের নতুন পদক্ষেপে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে আমেরিকা। কারণ, এসব খনিজ ও চুম্বক বৈদ্যুতিক গাড়ি, সেমিকন্ডাক্টর ও সামরিক সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিরল খনিজ ও চুম্বক আমদানি করে আমেরিকা, যার অধিকাংশই আসে চীন থেকে।
আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ মোকাবিলায় কয়েক দিন ধরে আলোচনা করে এসেছে চীন সরকার। চীন থেকে কোন জিনিসগুলো রপ্তানি করা হবে, তা নিয়ে নতুন বিধিমালার খসড়া তৈরি করেছে জিনপিং প্রশাসন।
পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপের মধ্যে গত ৪ এপ্রিল ছয়টি বিরল ভারী ক্ষার মৃত্তিকাসহ বিরল চুম্বক রপ্তানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে চীন। ওই বিরল ক্ষার মৃত্তিকাগুলো কেবল বেইজিংয়েই পরিশোধন করা হয়। আর বিরল চুম্বকগুলোর ৯০ শতাংশই চীনে উৎপাদন হয়।