ইরান-ইসরায়েল সংঘাত গত শুক্রবার থেকে চলছেই। ইসরায়েল চাইছে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করে দিতে। কিন্তু ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ‘ফোর্দো’ মাটির এত গভীরে নির্মিত যে, সেটি ধ্বংস করার ক্ষমতা ইসরায়েলের নেই। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই স্থাপনা ধ্বংস করা সম্ভব কেবলমাত্র আমেরিকার বিশেষ ধরনের বোমা এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে। আর সেটিই এবার পেন্টাগনের কাছে চাইল তেল আবিব।
সংবাদমাধ্যম মানি কন্ট্রোল বলছে, এই পরিকাঠামো ধ্বংস করতে পারে আমেরিকার তৈরি সবচেয়ে বড় ‘বাঙ্কার বিস্ফোরক’ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি) বা জিবিইউ-৫৭/বি। সেটি বহন করতে হবে আমেরিকান বি-২ বোমারু বিমান দিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৩ হাজার ৬০০ কেজি ওজনের এই বিস্ফোরক ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০০ ফুট গভীরে আঘাত হানতে পারে। ইসরায়েলের কাছে এই বোমা নেই, তবে তারা সেটি পাওয়ার জন্য আমেরিকাকে চাপ দিচ্ছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, ফোর্দো কেন্দ্রটি উত্তর ইরানের কোমের কাছে পাহাড়ের গভীরে রয়েছে। এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০–৯০ মিটার গভীরে। এই পরিকাঠামো ধ্বংস করতে পারে আমেরিকার তৈরি সবচেয়ে বড় ‘বাঙ্কার বিস্ফোরক’ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর বা এমওপি।
ওয়াশিংটন ডিসির স্টিমসন সেন্টার থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ফেলো বারবারা স্লাভিন কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেন, মার্কিন সহায়তা ছাড়া ইসরায়েল ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে পারবে না। তিনি বলেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস করা। এ কাজে মার্কিন সমর্থন ছাড়া সফল হওয়া অসম্ভব।
আমেরিকায় নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ইয়েচিয়েল লেইটার ‘জিবিইউ-৫৭/বি’ নামক একটি সুপার বোমার কথা উল্লেখ করেন, যা ‘বাঙ্কার বাস্টার’ নামে পরিচিত। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদন বলছে, বোমাটি অত্যন্ত শক্তিশালী ইস্পাত দিয়ে তৈরি, যা মাটির গভীরে প্রবেশ করে শক্তিশালী বাঙ্কার ও টানেল ভেঙে দিতে সক্ষম। রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের মতে, জিবিইউ-৫৭/বি বোমাটি মাটির নিচে সর্বোচ্চ ৬০ মিটার (প্রায় ২০ তলা ভবনের সমান) গভীরে আঘাত করতে পারে।
কিন্তু ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা প্রায় ৮০ থেকে ৯০ মিটার গভীরে হওয়ায়, এটি এই বোমার নাগালের বাইরে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফোর্দো ধ্বংস করতে হলে একই স্থানে একাধিক বোমা ফেলতে হবে এবং বারবার হামলা চালাতে হবে। সিএনএনের সামরিক বিশ্লেষক ও সাবেক মার্কিন বিমান বাহিনীর কর্নেল সেড্রিক লেইটন এমনটাই বলছেন।
২০২৩ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ফোর্দোতে ইউরেনিয়ামের বিশুদ্ধতা ৮৩.৭ শতাংশ, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের খুব কাছাকাছি।