মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং তাদের বিরুদ্ধে ওঠা জালিয়াতির ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত অভিযোগে আদালতে দোষ স্বীকার করতে রাজি হয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দুটো উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ৩৪৬ আরোহীর মৃত্যুর ঘটনা সংক্রান্ত একটি ক্ষতিপূরণ চুক্তি লঙ্ঘনের সত্যতা পেয়েছে আমেরিকা।
মার্কিন বিচার বিভাগকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, ২৪৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতেও সম্মতি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
অবশ্য পাঁচ বছর আগে উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের দুটি ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তাদের দাবি, এ ধরনের কাজের মাধ্যমে এতগুলো মৃত্যুর ঘটনায় নিজেদের দায়িত্ব এড়াতে চায় বোয়িং।
অবশ্য বোয়িংয়ের এ সিদ্ধান্ত বাধ্যতামূলকভাবে একজন মার্কিন বিচারকের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়ে আসতে হবে।
দোষ স্বীকার করলে বোয়িং ফৌজদারি মামলা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে। মূলত এ বিষয়টিই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।
২০১৮ ও ২০১৯ সালে ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের দুটি উড়োজাহাজ পরপর দুর্ঘটনায় পড়লে বোয়িংয়ের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। ঘটনা দুটির পর প্রায় ১ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারলাইনসের কাছে এই মডেলের উড়োজাহাজগুলো গ্রাউন্ডেড করে রাখা হয়।
২০২১ সালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বোয়িংকে প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, দুর্ঘটনায় আক্রান্ত উড়োজাহাজ দুটিতে ব্যবহার হওয়া এমসিএএস ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম সম্পর্কে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল।
সে সময় বোয়িংকে আইনি ঝামেলা থেকে মুক্তি দিতে প্রস্তাব করা হয়, কোম্পানিটি জরিমানা দেবে এবং পরবর্তী তিন বছরে তাদের তদারকি বৃদ্ধি করবে। কিন্তু এই সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই গত জানুয়ারিতে আলাস্কা এয়ারলাইনসের একটি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজ টেক–অফের পরপরই এর দরজার প্যানেলে বিস্ফোরণ হয়। পরে উড়োজাহাজটি দ্রুত অবতরণ করতে বাধ্য হয়। এ ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও বোয়িং যে তাদের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি সে বিষয়টিই সামনে চলে আসে।
গত মে মাসে আইনজীবীরা জানান, বোয়িং চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছেন বলেই তারা প্রমাণ হাতে পেয়েছেন। ফলে কোম্পানিটিকে আবারও কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পথ খোলে।
বোয়িং যদি তাদের অপরাধ স্বীকার করে তাহলে প্রতিষ্ঠানটির যথেষ্ট কালিমা লেপন হবে। কারণ এর মানে হলো, মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি বড় ঠিকাদার এখন থেকে অপরাধীদের তালিকাভুক্ত হলো। একই সঙ্গে বোয়িং বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ নির্মাতার একটি।
অবশ্য এ ধরনের অপরাধের ইতিহাস বোয়িংয়ের ব্যবসাকে ভবিষ্যতে কীভাবে বাধাগ্রস্ত করবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত সরকারি নিলামে অংশগ্রহণ করতে পারে না। অবশ্য এর ব্যতিক্রমও আছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের আইনজীবী পল কাসেল বলেন, ‘সুইটহার্ট ডিলকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি ব্যর্থ হয়েছে। কারণ বোয়িংয়ের ষড়যন্ত্রের কারণেই ৩৪৬ জন মানুষ মারা যান। বোয়িং এবং বিচার বিভাগের মধ্যে সমঝোতায় বোয়িংয়ের অপরাধ আড়ালেই থাকছে।’
গত জুনে সরকারকে লেখা এক চিঠিতে কাসেল বোয়িংকে ২৪ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করার দাবি তুলেছিলেন।
বোয়িংয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক এবং এভিয়েশন সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ইড পিয়ারসন এই চুক্তিতে চূড়ান্ত হতাশা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তদের দায়ী হিসেবে না দেখে বরং তাদের আরেকটি জেল ফ্রি কার্ড দেওয়া হচ্ছে।’
২০১৮ সালের অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারের একটি ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজ উড়াল দেওয়ার পরপরই বিধ্বস্ত হয়। এতে থাকা ১৮৯ আরোহীর সবাই মারা যান। এর কয়েক মাস পরে ইথিওপিয়ার এয়ারলাইনসের একই মডেলের আরেকটি উড়োজাহাজও একই কায়দায় বিধ্বস্ত হয়। এবার মারা যান ১৫৭ জন।