মাদক সংক্রান্ত অপরাধের জন্য চার কানাডিয়ানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে চীন। বিষয়টি দু দেশের উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ককে আরও খারাপের দিকে নিয়ে গেছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
চীনের আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের নিন্দা জানিয়ে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা কেবল তীব্র নিন্দাই করব না বরং একই রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি অন্যান্য কানাডিয়ানদের জন্যও নমনীয়তা কামনা করব।
অটোয়ার চীনা দূতাবাস মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেয়নি। তবে মাদক সংক্রান্ত অপরাধের জন্য বেইজিংয়ের কঠোর শাস্তির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে।
প্রতিবেদন বলছে, মৃত্যুদণ্ডের ঘটনাগুলো প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইলে। সংবাদপত্রটি জানিয়েছে, এ রায় এই বছরের শুরুতে ঘোষণা করা হয়।
মেলানি জোলি সাংবাদিকদের জানান, তিনি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা রোধ করার জন্য বেইজিংয়ের কাছে নমনীয়তার আবেদন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, অপরাধে জড়িতরা কানাডা এবং চীনের দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী ছিলেন। তবে চীন দ্বৈত নাগরিকত্বকে স্বীকৃতি দেয় না।
সান ফ্রান্সিসকোর একটি মানবাধিকার গোষ্ঠী ডুই হুয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জন কাম বলেছেন, তিনি চার ব্যক্তির পক্ষে চীনে তদবির করতে সাহায্য করছেন, কিন্তু গোপনীয়তার কারণে তাদের বিস্তারিত জানাতে পারবেন না।
তিনি বলেন, দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত চারজনই পুরুষ। তাদের মামলার বিচার হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংডং প্রদেশে। জন কাম উল্লেখ করেছেন, চীনের পক্ষে অল্প সময়ের মধ্যে চারজন বিদেশির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা অত্যন্ত অস্বাভাবিক। চার কানাডিয়ানের মামলা দুই বছর ধরে চীনে বিচারিক পর্যালোচনার অধীনে ছিল বলে জানান তিনি।
প্রতিবেদন বলছে, ২০১৮ সালের শেষের দিকে যখন চীন সরকার চীনে দুই কানাডিয়ান মাইকেল স্প্যাভোর এবং মাইকেল কোভরিগকে কারাদণ্ড দেয়, তখন থেকে চীনের সাথে কানাডার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে কানাডা ভ্যাঙ্কুভারে চীনা টেলিযোগাযোগ জায়ান্ট হুয়াওয়ের একজন নির্বাহী মেং ওয়ানঝোকে গ্রেপ্তার করার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যরা মানবাধিকার ইস্যুতে প্রকাশ্যে চীনের সমালোচনা করেছেন। কানাডা বিষয়ক আলোচনায় চীনের হস্তক্ষেপ নিয়েও উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোলি ‘চীনকে ক্রমবর্ধমান বিঘ্নকারী বৈশ্বিক শক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন এবং কানাডিয়ান কোম্পানিগুলোকে সেখানে ব্যবসা করার সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তিনি জানান, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার কানাডিয়ানের পরিবারের অনুরোধে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে না।
চীনা দূতাবাস বলেছে, মামলাগুলো আইন অনুসারে পরিচালিত হয়েছে। মামলাগুলোতে জড়িত কানাডিয়ান নাগরিকদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধের তথ্য স্পষ্ট এবং প্রমাণগুলি দৃঢ় ও যথেষ্ট। দূতাবাস কানাডাকে চীনের বিচারিক সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানাতে এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করা বন্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছে।