মালদ্বীপে অবস্থান করা ভারতীয় সেনাদের আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে সরিয়ে নিতে বলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু। এই ইস্যুতে এখনো আলাপ করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছে দিল্লি। এ নিয়ে বুধবার দ্বিতীয় দফায় বৈঠক করেছেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, মালেতে এই বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা কোনো পক্ষই জানায়নি। তবে ভারতীয় প্রতিনিধিরা সেনাদের মালদ্বীপে রাখার পক্ষে এখনো কথা বলে যাচ্ছেন। এবারের বৈঠকে নিজেদের মতো করে যুক্তি দিয়েছেন তারা। ভারতের প্রতিনিধিরা চাইছেন, মালদ্বীপ যেন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি বছরের প্রথম দফা বৈঠক হয় এই দুই দেশের মধ্যে। এর আগে অবশ্য বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। প্রতিবার আলোচনা শেষেই মালদ্বীপ বলেছে, তারা সিদ্ধান্তে অনড়।
গত বছর আলোচনার প্রথম দিকে মনে হচ্ছিল, মুইজ্জু তাঁর অবস্থান থেকে সরে আসবেন। কিন্তু মোদিকে নিয়ে কটাক্ষ করা ইস্যুতে আবারও সেনা সরানোর ইস্যুটি সামনে আসে।
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, মালদ্বীপে ভারতীয় সেনার সংখ্যা ৭৭ জন। তবে আরেক সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, এই সংখ্যাটি ৮৮।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে কটাক্ষ করে পোস্ট দেওয়ায় বরখাস্ত হতে হয় মালদ্বীপের তিন মন্ত্রীকে। বরখাস্ত হওয়া মালদ্বীপের তিন মন্ত্রী হলেন মারিয়াম শিউনা, মালশা ও হাসান জিহান।
বছরের শুরুতে মোদি ৩৬টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত দেশের সবচেয়ে ছোট স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপ সফর করেন। ৩২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ওই অঞ্চলের পর্যটনশিল্প নিয়ে প্রচার চালানোই ছিল তাঁর সফরের উদ্দেশ্য। এই মন্ত্রীরা মোদির লাক্ষাদ্বীপ সফরের কিছু ছবি-ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে শেয়ার করে তাঁকে কটাক্ষ করেন।
হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, এই ঘটনার পরই ভারতীয় অনেকে মালদ্বীপকে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেন। এদের বেশির ভাগই পর্যটক। এমন এক সময়ে এই ঘটনা ঘটে, যখন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু চীন সফরে ছিলেন। এর মধ্যেই তিনি চীনকে আহ্বান জানিয়েছেন আরও বেশি পর্যটক পাঠাতে।
তিন মন্ত্রীতে বরখাস্ত করা ইস্যুতে চীনা সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস বলছে, এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করার মানসিকতা রয়েছে ভারতের। মালদ্বীপেও এটি করতে চাইছে তারা। এতে চীনকে যাতে যুক্ত বা দায়ী না করা হয়, সে জন্য বেইজিং দিল্লীকে সতর্ক করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এমনকি প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে নিজেদের নীতি বদলানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সাউথ–এশিয়ান স্টাডিসের ডেপুটি ডিরেক্টর লিন মিনওয়াং বলছেন, পররাষ্ট্রনীতিতে এরই মধ্যে বদল এনেছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু। ভারতের চেয়ে চীনকেই বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন তিনি। তবে অনেকেই বলছেন, তিনি ইচ্ছে করে এমন করছেন না। তিনি আগে দেশের ভালো চান, পরে পররাষ্ট্রনীতি।