ইরানকে সমর্থন করার বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ‘আমরা আমাদের ইরানি অংশীদারদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ করছি। আজও যোগাযোগ করেছি। আমি মনে করি আগামীকাল-পরশুও করব। আমরা আমাদের সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছি। এবং দ্বিতীয়ত, যেমনটি আমি আগেই বলেছি, আমাদের বিশেষজ্ঞরা বুশেহরে কাজ করছেন। ২৫০ জন ব্যক্তি এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক ভ্রমণকারী সেখানে আছেন। মোট সংখ্যা ৬০০ জন হতে পারে। এবং তারা কিন্তু সেখান থেকে চলে আসছেন না। এটা কি সমর্থন নয়? ইরান আমাদের কাছে অন্য কোনো সহায়তা চায়নি।’
রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে গতকাল বুধবার রাশিয়া ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার সিনিয়র এডিটরদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এ কথা বলেন পুতিন।
ইরানকে অস্ত্র সরবরাহে সহায়তা করার বিষয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা একবার আমাদের ইরানি বন্ধুদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের অংশীদাররা তখন খুব বেশি আগ্রহ দেখায়নি। কৌশলগত অংশীদারত্ব সম্পর্কে যে চুক্তির কথা উল্লেখ করা হচ্ছে, সেখানে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র সম্পর্কিত কোনো নিবন্ধ নেই...। এবং তৃতীয়ত, আমাদের ইরানি বন্ধুরা আমাদের এটি করতেও বলেন না। তাই আলোচনা করার মতো কার্যত কিছুই নেই।’
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘আলাদা সরবরাহ আমাদের প্রস্তাব নয়, বরং একটি ব্যবস্থা তৈরি করতে চেয়েছি আমরা। অবশেষে একবার এই বিষয়ে আলোচনা করেছি, কিন্তু ইরানি পক্ষ এতে খুব বেশি আগ্রহ দেখায়নি। এবং সবকিছুই বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যক্তিগত সরবরাহের ক্ষেত্রে বলব, অবশ্যই আমরা এক সময় এই সরবরাহগুলো সম্পন্ন করেছি। আজকের সংকটের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এটি ছিল সামরিক-প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে নিয়মিত সহযোগিতা। এবং আন্তর্জাতিক নিয়মের কাঠামোর মধ্যে এটা করেছি।’
ইসরায়েল ও আমেরিকা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যা করলে তাঁর প্রতিক্রিয়া কী হবে, জানতে চাইলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘যদি পারি, আমি আশা করি এটিই আপনার প্রশ্নের সবচেয়ে সঠিক উত্তর হবে। আমি এই সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতেও চাই না। আমি চাই না। আমি এই সব শুনছি, কিন্তু আমি এটি নিয়ে আলোচনাও করতে চাই না।’
ইরানে সম্ভাব্য শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন সম্পর্কে পুতিন বলেন, ‘কোনো কিছু শুরু করার সময় সর্বদা দেখতে হবে, লক্ষ্য অর্জন করা হচ্ছে কি-না। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, আজ ইরানে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াগুলোর সমস্ত জটিলতা সত্ত্বেও, আমরা এ ব্যাপারে জ্ঞাত। আমি মনে করি, আরও গভীরে যাওয়ার কোনো অর্থ নেই। দেখা যাচ্ছে যে, দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্বের চারপাশে একটা একতা রয়েছে। এটি প্রায় সর্বদা ও সর্বত্র ঘটে, এবং ইরানও এর ব্যতিক্রম নয়। এটি প্রথম জিনিস।’
পুতিন এ ব্যাপারে আরও বলেন, ‘দ্বিতীয় জিনিসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর তা হলো, সবাই এটি সম্পর্কে কথা বলছে। আমি কেবল সেই কথাই পুনরাবৃত্তি করব, যা আমরা চারপাশ থেকে জানি ও শুনি। এই ভূগর্ভস্থ কারখানাগুলো এখনো টিকে আছে, তাদের কিছুই হয়নি। এবং এই ক্ষেত্রে, আমার মনে হয় যে সকলের জন্য শত্রুতা বন্ধ করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে।’
এই সংঘাতের সকল পক্ষের একে অপরের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আসার উপায় খুঁজে বের করা সঠিক কাজ হবে উল্লেখ করে পুতিন বলেন, ‘এতে একদিকে নিজেদের পারমাণবিক কর্মকাণ্ডের জন্য ইরানের স্বার্থ এবং শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মকাণ্ড নিশ্চিত করা যায়। পাশাপাশি ইহুদি রাষ্ট্রের নিঃশর্ত নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে ইসরায়েলের স্বার্থও নিশ্চিত করা যায়। এটি একটি সূক্ষ্ম বিষয়। অবশ্যই আপনাকে এখানে খুব সতর্ক থাকতে হবে। তবে আমার মতে, সাধারণভাবেই এই ধরনের সমাধান খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।’