ভারতের মধ্যপ্রদেশের পান্না জেলার বাসিন্দাদের কাজ যেন শুধু হীরা খোঁজা। সরকারের কাছ থেকে খনি লিজ নিয়ে হীরা খোঁজার কাজ করেন তারা। কেউ মূল্যবান হীরা খুঁজে পান, কেউ ছোটখাটো আকারের হীরা পেয়ে থাকেন আবার কারও ভাগ্যে কিছুই জোটে না। পান্না জেলার বাসিন্দাদের নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
গত পাঁচ দশক ধরে হীরা খোঁজার কাজ করছেন পান্নার বাসিন্দা প্রকাশ শর্মা। ৬৭ বছর বয়সী প্রকাশ বলেন, ‘আমি হীরা খোঁজার কাজ না করলে আমি অসুস্থ হয়ে যাই। এটি অনেকটা মাদকের মতো।’
পান্না সিটি নামে খ্যাত ওই অঞ্চলটি ভারতের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোর একটি। এর বাসিন্দারা দারিদ্র্য, সুপেয় পানির অভাব এবং বেকারত্বে জেরবার। অথচ এখানে রয়েছে ভারতের বেশির ভাগ হীরার মজুত।
ভারতের বেশির ভাগ খনি সরকার পরিচালিত। রাজ্যের কর্মকর্তারা প্রতি বছর নামমাত্র মূল্যে খনি শ্রমিকদের কাছে জমির ছোট অংশ ইজারা দেয়। ভাগ্য বদলাতে সেখানে হীরার সন্ধান করেন শ্রমিকেরা।
পান্নায় যান্ত্রিক হীরার খনি রয়েছে একটি। তবে এক সময় বিরল পান্না আবিষ্কারের জন্য পরিচিতি পায় এ অঞ্চল। বছরের পর বছর ধরে অতিরিক্ত খনির মাধ্যমে হীরা উত্তোলনের কারণে এর মজুত হ্রাস পেয়েছে। তবুও আশাবাদী মানুষ তাদের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন।
শর্মার মতো হাজার হাজার যুবক এবং বৃদ্ধ খনিতে হীরা খুঁজে দিন কাটায়। তাদের আশা, একদিন দারিদ্র্যের চক্র থেকে মুক্তি দেবে এই হীরা।
শ্যামলাল জাটভ নামের পান্না জেলার এক বাসিন্দা জানান, পারিবারিকভাবে হীরা খোঁজার শ্রমে যুক্ত তিনি। ৫৮ বছর বয়সী এই ব্যক্তি জানান, তার দাদা কাজটি শুরু করেন এবং এখন তার ছেলেও এটিতে যুক্ত হয়েছে। ছেলে অবশ্য খনিতে খণ্ডকালীন কাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছে।
খনি শ্রমিকেরা ভোরে উঠে নুড়ি খনন শুরু করে। এরপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত হীরার সন্ধানে এসব নুড়ি ধুয়ে, শুকিয়ে এবং চালনিতে ছেঁকে নেয়। তাদের পরিবার তাদের কাজে সাহায্য করে।
হীরা খুঁজে পাওয়ার পর তা সরকারি অফিসে হস্তান্তর করতে হয়। এরপর নিলামে বিক্রি হয় হীরা। কম দামে সেই হীরা কিনে নেয় সরকার। স্বত্ব এবং কর বাদ দেওয়ার পর শ্রমিকদের হাতে বলতে গেলে কিছুই থাকে না।