সাইনবোর্ডে উর্দু ভাষার ব্যবহারের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি আবেদন খারিজ করে দিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, ‘ভাষা একটি সম্প্রদায়ের, একটি অঞ্চলের এবং মানুষের; কোনো ধর্মের নয়।’ গতকাল মঙ্গলবার আদালত এমন মন্তব্য করেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, মহারাষ্ট্রের আকোলা জেলার একটি পৌর পরিষদের সাইনবোর্ডে মারাঠির পাশাপাশি উর্দু ভাষার ব্যবহারের বিরোধিতা করেছিলেন পাতুরের সাবেক কাউন্সিলর বর্ষাতাই সঞ্জয় বাগাডে। গতকাল বাগাডের আবেদনটি খারিজ করে দেন বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং কে. বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চ। এরপর এই দুই বিচারক বলেন, ‘ভাষা ধর্ম নয় এবং এটি ধর্মের প্রতিনিধিত্বও করে না।’
বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং কে বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চ বলেছেন, ‘ভাষা হলো সংস্কৃতি। ভাষা হলো একটি সম্প্রদায় ও তার মানুষের সভ্যতার অগ্রগতির পরিমাপের মাপকাঠি। উর্দু ভাষার ক্ষেত্রেও তাই। এটি গঙ্গা-যমুনা তহজিব বা হিন্দুস্তানি তহজিবের উৎকৃষ্ট নমুনা, যা উত্তর ও মধ্য ভারতের সমতল ভূমির সমন্বিত সাংস্কৃতিক নীতি। কিন্তু ভাষা শিক্ষার হাতিয়ার হওয়ার আগে এর প্রাথমিক ও প্রধান উদ্দেশ্য সবসময়ই থাকবে যোগাযোগ।’
পৌর পরিষদের সাইনবোর্ডে উর্দু ভাষার ব্যবহার বহাল থাকবে উল্লেখ করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেছেন, ‘উর্দুর ব্যাপারে এক ধরনের ভুল ধারণা প্রচলিত আছে বলে আমাদের আশঙ্কা। সেটি হচ্ছে, উর্দু বিদেশি ভাষা। আসলে তা নয়। উর্দু, মারাঠি এবং হিন্দির মতোই একটি ইন্দো-আর্য ভাষা। এটি এই ভূখণ্ডে জন্ম নেওয়া একটি ভাষা। উর্দু ভারতে বিকশিত হয়েছে এবং উন্নতি লাভ করেছে কারণ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশের মানুষের মধ্যে ধারণা বিনিময় এবং যোগাযোগের প্রয়োজন ছিল। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, এটি আরও পরিশীলিত হয়েছে এবং অনেক প্রশংসিত কবির পছন্দের ভাষা হয়ে উঠেছে।’
আদালত আরও বলেছেন, ঔপনিবেশিক শক্তি দুটি ভাষাকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত করতে কাজে লাগিয়েছিল। হিন্দি এখন হিন্দুদের ভাষা এবং উর্দু মুসলিমদের ভাষা হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করে, যা বাস্তবতা, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য এবং সর্বজনীন ভ্রাতৃত্বের ধারণা থেকে একটি শোচনীয় বিচ্যুতি।
সবশেষে সুপ্রিম কোর্ট বলেন, ‘আমরা মুম্বাই হাইকোর্টের যুক্তির সঙ্গে পুরোপুরি একমত যে ২০২২ সালের আইন বা অন্য কোনো আইনের বিধানে উর্দু ব্যবহারের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।’