গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। তারা এই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানিয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, বৃহস্পতিবার মিশরের কায়রোতে আলোচনার পর হামাস নতুন করে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের এই প্রতিশ্রুতি দিল। গোষ্ঠীটি বলেছে, মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতি চুক্তির বাধাগুলো দূর করবে বলে নিশ্চয়তা দিয়েছে।
হামাসের এই বক্তব্যে ইসরায়েল তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে মিশর ও কাতারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যস্থতাকারীরা উভয়পক্ষের মধ্যকার দূরত্ব পূরণ করেছে এবং উভয়ই যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে দেশটির পরবর্তী ধাপের জিম্মিদের মুক্তি দিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেরি করার ঘোষণা দিয়েছিল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। সামাজিক মাধ্যম টেলিগ্রামে গত সোমবার দেওয়া এক পোস্টে এই ঘোষণা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা।
এ বিষয়ে হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা টেলিগ্রামে একটি বিবৃতি দেন। এতে বলা হয়েছিল, গোষ্ঠীটি আগামী শনিবারের জন্য পরিকল্পনায় থাকা আরও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে ‘পরবর্তী নোটিশ না হওয়া পর্যন্ত’ দেরি করবে।
ফিলিস্তিনের গাজায় ১৫ মাসের ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। যুদ্ধবিরতির পরও ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে শতাধিক ফিলিস্তিনি। তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের পর থেকে গাজায় অন্তত ১১৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর সরাসরি হামলায় প্রাণ গেছে অন্তত ৯২ জনের। আহত হয়েছে অন্তত ৮২২ জন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুর্শ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রাণহানির এই সংখ্যার মধ্যে সরাসরি হামলায় নিহত ব্যক্তিদের পাশাপাশি আহত কয়েকজনের মৃত্যু এবং ধ্বংসস্তুপে থাকা অবিস্ফোরিত বোমার বিস্ফোরণে নিহতদের সংখ্যাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
ফিলিস্তিনের গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তিন ধাপের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে বন্দী বিনিময়, শান্তি স্থাপন, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের শর্ত রয়েছে।
গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ভূখণ্ডটিতে সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখে। দীর্ঘ ১৫ মাসের ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এখনো নিখোঁজ কয়েক হাজার মানুষ। নিহতের তালিকায় নিখোঁজদের অন্তর্ভুক্ত করলে প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়ায় ৬১ হাজারের বেশি। আর আহতের সংখ্যা এক লাখের বেশি। এ ছাড়া ২০ লাখের বেশি মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে।