ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধে বিরতি দেওয়া নিয়ে ইসরায়েলের প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। আজ শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে গাজার স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস জানিয়েছে, তারা অবিলম্বে এমন একটি চুক্তির জন্য আলোচনা করতে প্রস্তুত, যেখানে যুদ্ধের অবসান এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে বাকি সকল জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে।
ভিডিও বিবৃতিতে হামাসের প্রধান আলোচক খলিল আল-হাইয়া বলেছেন, আমরা (ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু) নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক এজেন্ডা পূরণকারী আংশিক চুক্তি গ্রহণ করব না।।
হামাসের হাতে এখনও ৫৯ জন জিম্মি রয়েছেন এবং এদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ইসরায়েলের সর্বশেষ প্রস্তাবে ১০ জন জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
অতি-ডানপন্থী ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেছেন, হামাসের জন্য ‘নরকের দরজা খুলে দেওয়ার’ সময় এসেছে।
হামাস কর্মকর্তারা এ সপ্তাহের শুরুতে বিবিসিকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তারা এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করবেন।
ভিডিও বার্তায় খলিল আল-হাইয়া বলেন, নেতানিয়াহু এবং তাঁর সরকার তাঁদের রাজনৈতিক এজেন্ডার অংশ হিসেবে আংশিক চুক্তি ব্যবহার করে। এ চুক্তি যুদ্ধ অব্যাহত রাখার নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। হামাস অবিলম্বে একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত এবং যুদ্ধের অবসান ঘটাতে প্রস্তুত।
হামাস এরআগে বলেছে, তারা যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য একটি সামগ্রিক চুক্তি বিবেচনা করবে। কিন্তু উভয় পক্ষই এমন কোনো চুক্তির কাছাকাছি নেই, যা বিষয়টি ঘটাতে পারে।
প্রতিবেদন বলছে, ইসরায়েলের ঘোষিত লক্ষ্য হলো হামাসের সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ এবং ধ্বংস। বিমান হামলায় প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে গাজাবাসী। কোনো মানবিক সাহায্যও গাজায় প্রবেশ করছে না।
গাজার হামাস-পরিচালিত বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মতে, ইসরায়েলি হামলার ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ কমপক্ষে ৩৭ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই একটি তাঁবু শিবিরে বসবাসকারী বেসামরিক নাগরিক ছিলেন।
আল-মাওয়াসির প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শক্তিশালী বিস্ফোরণের পর তাঁবুতে আগুন লেগে শিশুসহ কয়েক ডজন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন।
একজন বিবিসির গাজা লাইফলাইন প্রোগ্রামকে বলেন, আমি ছুটে বাইরে গিয়ে দেখি আমার পাশের তাঁবুটি আগুনে পুড়ে গেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত দুই দিনে হামলায় ১০০ টিরও বেশি সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাসী সেল, সামরিক কাঠামো এবং অবকাঠামোগত স্থান।
ইসরায়েল জানিয়েছে, সাহায্যের কোনো ঘাটতি নেই এবং হামাসকে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য চাপ দিতে তারা ১ মার্চ থেকে অবরোধ অব্যাহত রেখেছে। তবে ১২টি প্রধান সাহায্য সংস্থার প্রধান বলেছেন, গাজার মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার মুখোমুখি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। ইসরায়েলি পরিসংখ্যান অনুসারে, ওই হামলায় প্রায় ১২০০ জন নিহত হন। ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয় তখন। ওইদিন থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫১ হাজার ৬৫ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা লক্ষাধিক। বহু মানুষ হয়েছেন বাস্তুচ্যুত।